1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রেশন দুর্নীতি নিয়ে আর কতদিন শুধুই তল্লাশি, উঠছে প্রশ্ন

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ আগস্ট ২০২৪

রেশন দুর্নীতি নিয়ে জেলবন্দি সাবেক মন্ত্রীর তার দুই ঘনিষ্ঠকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা।

https://p.dw.com/p/4izsM
কলকাতায় ইডি অফিস।
রেশন কেলেঙ্কারি নিয়ে তল্লাশি করেছে ইডি। পেয়েছে প্রচুর নথিপত্র। ছবি: Satyajit Shaw/DW

গণবন্টন ব্যবস্থায় দুর্নীতির তদন্তে আবার সক্রিয় ইডি। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তার ঘনিষ্ঠ চালকল মালিক বাকিবুর রহমানকে আগেই কেন্দ্রীয় সংস্থা পাকড়াও পড়েছিল। এদের একাধিক ঘনিষ্ঠজনের উপর নজর রয়েছে ইডির।

সিজিও কমপ্লেক্সে জিজ্ঞাসাবাদ

মঙ্গলবার থেকে দুদিন বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। উদ্ধার হওয়া নথি ও অর্থের উৎস জানতে তলব করা হয়েছে একাধিক সন্দেহভাজনকে।

রেশন কেলেঙ্কারির তদন্তে বৃহস্পতিবার ইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে  পড়েন বাকিবুরের তুতো ভাই আনিসুর রহমান ও আনিসুরের দাদা আলিফ নুর। আনিসুর উত্তর চব্বিশ পরগনার দেগঙ্গার ব্লক তৃণমূল সভাপতি।

মঙ্গলবার ভোরে দেগঙ্গায় আনিসুরের বাড়ি ও চালকলে হানা দেয় ইডি। তল্লাশি চালানো হয় তার গ্যারেজে। ছয় ছয়টি গাড়িতে কী আছে খুঁজে দেখা হয়। আলিফের চালকলে হানা দেন তদন্তকারীরা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত তল্লাশিতে নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর। উদ্ধার হয়েছে কয়েকটি মোবাইল। একইসঙ্গে মিলেছে প্রচুর নথির হদিশ।

এদিন সকাল ১১টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দপ্তরে হাজিরা দিতে আসেন আনিসুর। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রায় কিছুই বলতে চাননি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বারিক বিশ্বাসের সঙ্গে তার সম্পর্কের ব্যাপারেও নীরব থেকেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, আনিসুরের বিপুল সম্পত্তির হদিস মিলেছে। তার মালিকানায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের কলেজ থেকে হোটেল, অনেক কিছুই আছে। তল্লাশিতে প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তারা জানতে চাইছেন, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিপুল সম্পত্তির পিছনে রেশন দুর্নীতির টাকা আছে কিনা। এছাড়া জ্যোতিপ্রিয় ও বাকিপুরের সঙ্গে আনিসুরের যোগ কতটা ঘনিষ্ঠ, সে ব্যাপারেও খোঁজখবর নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।

বারিকের সম্পত্তি

রেশন দুর্নীতি মামলায় অন্যতম সন্দেহভাজন বসিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল বারিক বিশ্বাস। জ্যোতিপ্রিয়র ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বারিকের জেলা ও কলকাতার আস্তানায় মঙ্গলবার অভিযান চালায় ইডি। তার বাড়ি, চালকলের সঙ্গে রাজারহাট এর দুটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। বারিককে শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করা হয়েছে।

ইডি সূত্রের দাবি, ২০১৬ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরে চাল ও আটা পেষাইয়ের কল তৈরি করেন কয়েকজন। এর মধ্যে অন্যতম বারিক। পরে বারিক চালকল বেচে দেন আনিসুর ও আলিফকে। এরা দুজনেই আবার বাকিবুর রহমানের আত্মীয়।

শুধু রেশন কেলেঙ্কারি নয়, গরু ও সোনা পাচারসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বারিকের বিরুদ্ধে। অতীতে সোনা পাচারের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে চলতি তদন্তে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর নথি মিলেছে বারিকের রাজারহাটের ফ্ল্যাট থেকে।

ইডি সূত্রের দাবি, বারিকের কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে অনেকগুলি সম্পত্তির নথি পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে একাধিক সম্পত্তি বিদেশে। নথি অনুযায়ী দুবাইয়ে বারিকের সম্পত্তি রয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, রেশন কেলেঙ্কারি কালো টাকা সরিয়ে দিতে দুবাইয়ে সম্পত্তি কিনেছেন বারিক। উদ্ধার হওয়া নথির ভিত্তিতে শুক্রবার বারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

রাজ্য সরকার তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে: বিমলশঙ্কর নন্দ

নজরে শাহজাহান

বাকিবুর থেকে বারিক, এদের সকলের উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছে। গত এক দশকে বাড়ি, ব্যাংক ডিপোজিট, গাড়ি সহ বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন এরা। প্রত্যেকেই ছোট মাপের ব্যবসায়ী ছিলেন। তদন্তকারীদের অনুমান, প্রভাবশালীর যোগ ছাড়া এত সম্পত্তির মালিক খুব অল্প সময়ে হয়ে ওঠা সম্ভব নয়।

রেশন কেলেঙ্কারির সঙ্গে সন্দেশখালির সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের যোগের কথা আগেই উঠে এসেছে। ওই এলাকায় শাহজাহানের বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে। এমনকি তার নামে বাজারও রয়েছে। শাহজাহানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থার আধিকারিকরা।

মঙ্গলবারে তল্লাশিতে খাদ্য দপ্তরের সিল করা কাগজপত্র পাওয়া গিয়েছে। এর জেরে প্রশ্ন তীব্র হয়েছে, সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কিসের যোগ ছিল এই ব্যবসায়ীদের? এদের সঙ্গে কত টাকা লেনদেন করেছিলেন তিনি?

উঠছে প্রশ্ন

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "স্টেশনের চা বিক্রেতা যদি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, তাহলে ছোট ব্যবসায়ী তার ব্যবসা বড় করতে পারেন। তদন্তকারী সংস্থা দেখবে সেটা বৈধ উপায় হয়েছে কিনা।"

বঙ্গ বিজেপির নেতারা কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতায় খুশি। তবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, "শুধু তল্লাশি করলে চলবে না। এদের খাঁচায় পুরতে হবে।"

পর্যবেক্ষক ও বিজেপি নেতা বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, "রাজ্য সরকার তদন্তে বাধা সৃষ্টি করছে। 

বড় মাথারা যুক্ত আছে বলে রাজ্য রাজনৈতিক কারণেই তদন্ত চাইছে না। তার উপর ইডি, সিবিআই তদন্ত করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে।"

কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা নিয়ে উৎসাহী নয় বামেরা। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "শুধু তল্লাশি চালিয়ে লাভ নেই। যারা মাথা তাদের ধরতে হবে।"