রুয়ান্ডার একাধিক সমস্যা মেটাতে পারে মাশরুম
১০ জুলাই ২০২৪তাঁবুর অন্ধকার ও আর্দ্র পরিবেশে সেমাগাম্বো এভারিস্তে এমন এক খাদ্যপণ্য চাষ করছেন, যা রুয়ান্ডার খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাতে পারে৷ সেটা হলো অয়েস্টার মাশরুম৷ মাশরুম চাষি হিসেবে সেমাগাম্বো এভারিস্তে নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘আমি পাঁচ বছর ধরে মাশরুম চাষ করছি৷ এটা ঘটনা, যে অন্যান্য শস্য থেকে এর অনেক দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে৷ চাষ শুরু করার পর নয় থেকে পনেরো দিনের মধ্যে মাশরুম বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়৷ সে তুলনায় অন্যান্য শস্য তোলার জন্য পাঁচ থেকে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়৷ মোটকথা মাশরুমের ক্ষেত্রে মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায়ই উপার্জন করা যায়৷ অতএব অন্যান্য শস্যের তুলনায় মাশরুমের বাড়তি সুবিধা রয়েছে৷''
সেমাগাম্বো রুগারামা গ্রামে মাশরুম চাষ করেন৷ কিগালি ফার্মস এমন ১৫টি গ্রামে সহায়তা দেয়৷ সেই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৭০০ ছোট চাষিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে৷ তারা তাঁবুগুলিও বিশেষভাবে তৈরি করিয়ে দিয়েছে৷ চাষিরা বিনামূল্যে সেগুলি ব্যবহার করতে পারেন৷ কিগালি ফার্মস উৎপাদন ও বাণিজ্যিক বিপণনের ক্ষেত্রেও সহায়তা করে৷
২০১০ সালে লোরঁ দেমোইনক সেই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন৷ তার আগে তিনি নিউ ইয়র্কে এক মাইক্রোব্রিউয়ারি চালাতেন৷ কিন্তু তিনি আফ্রিকায় বাস করে তৃণমূল স্তরে টেকসই কোনো কাজ করতে চেয়েছিলেন৷ তখনই তিনি এই প্রেরণা পান৷ লোরঁ বলেন, ‘‘মাইসেলিয়াম রানিং. হাউ ক্যান মাশরুম হেল্প সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড নামের একটি বই দেখে ভাবলাম বাড়াবাড়ি আশা করা হচ্ছে৷ মাশরুম আবার কীভাবে জগত বাঁচাতে পারে? কিন্তু বইটি পড়তে শুরু করে বুঝলাম, ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে মাশরুম অসাধারণ জীব হতে পারে৷ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মাশরুম উপকারী হতে পারে, খেতেও স্বাস্থ্যকর ও অত্যন্ত পুষ্টিকর৷ পরিবেশের জন্যও সেগুলি ভালো, কারণ ছত্রাক অরগ্যানিক বস্তুকে কার্যকর কোনো অবস্থায় রূপান্তরিত করে৷''
রুয়ান্ডার কৃষি-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নানা জাতের মাশরুম চাষের জন্য আদর্শ৷ তাছাড়া সেই শস্য প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির অনেক সমস্যার মধ্যে একটির সমাধানের আদর্শ উপায় হতে পারে৷
রুয়ান্ডায় চাষযোগ্য জমি খুবই সীমিত৷ গোটা দেশে প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ হেক্টর জমিতে চাষবাস করা হয়৷ সে দেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ড. কামানা অলিভিয়ার বলেন, ‘‘আমাদের বর্তমান ভূমিসম্পদ যে ভবিষ্যতে নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তা সত্ত্বেও আমাদের বাস্তব সমাধানসূত্র খুঁজতে হবে৷ মাশরুম চক্রাকার জৈব-অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে শস্যের অবশিষ্ট অংশের নেতিবাচক প্রভাব কমাতেও সেটি সমাধানসূত্র হিসেবে কাজে লাগে৷''
কারণ মাশরুম ক্ষেতের নীচের স্তরে সেই বর্জ্য ব্যবহার করা হয়৷ কিগালি ফার্মস ফসল তোলার সময়ে স্থানীয় গম চাষিদের সহায়তা করে৷ তারা গম ক্ষেতের খড়ও কিনে নেয়৷ সেই খড় গাজন করে মাশরুম ক্ষেতে ছড়ানো হয়৷ অতীতে চাষিরা খড় পুড়িয়ে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন৷ লোরঁ দেমোইনক মনে করেন, ‘‘গ্রামাঞ্চলে আরো কৃষি বর্জ্য রয়েছে, যা মাশরুমে পরিণত করা যেতে পারে৷ আমরা সেই কাজ শুরু করার পাঁচ থেকে ছয় বছর পর বাটন মাশরুম চাষ করছি৷ গোটা বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে মাশরুমের চাষের প্রায় ৯০ শতাংশই এই জাতের হয়৷ কিন্তু রুয়ান্ডায় সেই মাশরুমের চাষ একেবারেই হতো না৷ গোটা আফ্রিকায়ও সেই মাশরুমের হার খুব কম৷''
বিনিয়োগ, জমি ও শ্রমের নিরিখে সামান্য উদ্যোগের কারণে মাশরুম চাষ রুয়ান্ডার সমাজে অনেক উপকার বয়ে আনছে৷ সেইসঙ্গে কার্বন নির্গমন কমাতে ও জমির মান বাড়াতেও সাহায্য করছে৷ চাষি হিসেবে নিরানসাবাবেরা আদেলা মনে করেন, ‘‘মাশরুম চাষের প্রতি আমার ঝোঁকের পেছনে অনেক উপকারের ঘটনা রয়েছে৷ ফলনের জন্য প্রায় তিন মাস সময় লাগে৷ ফসল তোলার পরেও জমিতে সাবস্ট্রেটের ক্ষমতা থেকে যায়৷ আমরা সেই মিশ্রণকে উচ্চ মানের সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, যা বিশেষ করে শাকসবজি চাষের জন্য আদর্শ৷ ফলে ভালোই ফসল হয়৷ অন্যান্য সারের মতো এই স্তর মোটেই মাটির মানের অবনতি ঘটায় না৷''
শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে মাশরুম আরো বেশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার আওতায় চলে আসছে৷ মাংসের তুলনায় প্রোটিনের আরো পরিবেশবান্ধব উৎস হিসেবেও মাশরুমের কদর বাড়ছে৷ লোরঁ দেমোইনক বলেন, ‘‘হ্যামবার্গারে গরুর মাংসের বদলে মাশরুম দিয়ে তৈরি নিরামিষ প্যাটি ব্যবহার করতে পারেন৷ একই রকম সুস্বাদু, অথচ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর৷ আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক বেশি উপকারী৷''
রুয়ান্ডার সরকার কৃষিক্ষেত্রকে জলবায়ু নিরোধক করে তোলার যে পরিকল্পনা নিয়েছে, মাশরুম চাষ তার সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খেয়ে যায়৷ কৃষি মন্ত্রণালয়ের ড. কামানা অলিভিয়ার বলেন, ‘‘আমরা ক্লাইমেট-স্মার্ট কৃষিকাজ আমাদের কৃষি নীতির মধ্যে শামিল করতে চাই৷ আমরা টেকসই ও পরিবেশবান্ধব চাষের পদ্ধতিতে উৎসাহ দিতে চাই৷ আমরা এমন সব ধরনের কৃষিকাজে সহায়তা দিতে চাই, যে সব ক্ষেত্রে অরগ্যানিক সার সৃষ্টি হয়৷ এমন মনোভাব শুধু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সাহায্য করে না, নির্ভরতা কমাতে আমাদের মাশরুম ছাড়াও অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের সুযোগ দেয়৷''
পরিবেশের জন্য নানা সুবিধার কারণে মাশরুম চাষ রুয়ান্ডাকে চলতি দশকের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন প্রায় ৪০ শতাংশ কমাতে সাহায্য করছে৷
শেংগে নদিম্বিরা, ওলাফ এস ম্যুলার/এসবি