1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রায়হানকে ‘বিতাড়িত’ করবে মালয়েশিয়া

সমীর কুমার দে
২৫ জুলাই ২০২০

আটক বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ৷ পাশাপাশি তাকে দেশটি বিতাড়িত করা হবে৷ তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস বা সরকার এখনও কিছু বলতে পারছে না৷ উদ্বেগে আছে তার পরিবার৷

https://p.dw.com/p/3fuBf
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Chan

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন' শিরোনামের তথ্যচিত্রে সাক্ষাৎকার দেওয়া বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়া৷ দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক টুইট বার্তায় জানানো হয়েছে, এদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ মালয়েশিয়ার তদন্ত সংস্থা সিআইডি'র ডেপুটি পরিচালক ফরিদালাতরাশ ওয়াহিদের বরাত দিয়ে দেশটির বার্নামা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, অভিবাসন কর্তৃপক্ষ রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে৷ তবে রায়হান কবিরকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া৷ শনিবার মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এমনটি জনানো হয়েছে৷

এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার অভিবাসন মহাপরিচালক খায়রুল জাইমি দাউদ জানিয়েছেন, শুক্রবার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের গোয়েন্দা শাখা ২৫ বছরের রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করেছে৷ এর আগে তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়৷ তিনি বলেন, রায়হান কবিরকে দেশটি থেকে ‘বিতাড়িত করার’ পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় যেন আর কখনও প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কালো তালিকাভক্তু করা হবে৷

শাহ আলম

‘রায়হান যদি হেরে যায়, তাহলে বাংলাদেশ হেরে যাবে’

রায়হানের গ্রেপ্তারের খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে তার পরিবার৷ তার বাবা শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রায়হান কবির ছোটবেলা থেকেই প্রতিবাদী৷ মাদকের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময়ই সে প্রতিবাদ করেছে৷ সে আল জাজিজায় সাক্ষাৎকার দিয়ে কোন মিথ্যা কথা তো বলেনি৷ এখন রাষ্ট্রের উচিৎ তার পাশে দাঁড়ানো৷ রায়হান যদি হেরে যায়, তাহলে বাংলাদেশ হেরে যাবে৷’’

তিনি রায়হান কবিরকে দেশে দ্রুত ফেরত আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন৷ ‘‘রায়হান তো বাংলাদেশের পক্ষে বলেছে৷ এখানে বিদেশিদের সঙ্গে কি ব্যবহার করা হয়? অথচ বাংলাদেশ থেকে যারা মালয়েশিয়ায় গেছে তারা চোর, ডাকাত বা খুনি না৷ হয়তো কেউ অবৈধ হয়ে গেছে৷ তাই বলে নির্যাতন করবে৷ রায়হান তো সেই কথাগুলোই বলেছে৷ এখন দ্রুত তাকে দেশে ফেরত আনার দাবি জানাই,’’ বলেন শাহ আলম৷

‘দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি’

প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা তো এখন আর প্রবাসী কল্যানের বিষয় না, পুরোপুরি কূটনৈতিক ইস্যু৷ আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মালয়েশিয়ার যে হাইকমিশন আছে তারা নিশ্চয় এটা দেখবে৷ ইতিমধ্যে তারা এটা নিয়ে কাজও শুরু করেছে৷ আমি শুধু বলব, এটা একটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক ঘটনা, এর ফলে মালয়েশিয়ায় যেসব বাংলাদেশি আছেন তাদের কোন সমস্যা হওয়ার কথা না৷’’

রায়হান কবিরের বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন কী ভূমিকা রাখছে? ঢাকা থেকে টেলিফোনে জানতে চাইলে হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ছুটির দিন হওয়ায় সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না৷ তবে তিনি বাংলাদেশি হিসেবে যে কনস্যুল সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখেন সেটা তাকে দেওয়া হবে৷ এখানে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয় আছে৷ যে কারণে এখনই এ বিষয়ে কোন মতামত দেওয়া যাচ্ছে না৷ তবে আমরা দ্রুত তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছি৷’’

ইমরান আহমেদ

গ্রেফতার হওয়ার আগে বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারকে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় রায়রহান কবির নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন৷ তিনি বলেছেন, আমি মিথ্যা বলিনি৷ আমি শুধু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছি৷ আমি অভিবাসী ও আমাদের দেশের সম্মান নিশ্চিত করতে চাই৷ আমি বিশ্বাস করি, সব অভিবাসী ও বাংলাদেশ আমার পক্ষে থাকবে৷

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রায়হানকে নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন৷ মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ তার উপর যে নির্যাতন করছে, তাতে তার চিৎকার আমাদের উর্ধ্বতন অনেকের কানে না পৌঁছালেও আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি৷ আমি মনে করি, প্রতিবাদের নাম রায়হান কবির৷ প্রবাসী কোটি বাঙালির মনে কথা তিনি বলেছেন৷ তিনি যে সাহস দেখিয়েছেন সেটা এর আগে কাউকে দেখাতে আমরা দেখিনি৷ আমরা চাই রাষ্ট্র দ্রুত তার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে এবং দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবে৷’’

প্রতিবাদী হিসেবে পরিচিত রায়হান কবির

রায়হান কবিরের বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার নূরবাগে৷ দুই ভাই-বোনের মধ্যে রায়হান বড়৷ ছোট বোন নারায়নগঞ্জে একটি কলেজে ডিগ্রির ছাত্রী৷ তার বাবা শাহ আলম আগে মুদি দোকান করলেও এখন একটি গার্মেন্টসে ছোট পদে চাকরি করেন৷ রায়হান শিক্ষা ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে লেখাপড়া শেষ করে একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিতে কাজ করছিলেন৷ এলাকায় প্রতিবাদী যুবক হিসেবে পরিচিত রায়হান কবির৷

নূরবাগ পঞ্চায়েতের সভাপতি জাভেদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ছেলেটার সম্পর্কে একটা গল্প বলি, ওর বাবা যখন মুদি দোকান করত তখন ওই দোকানে সিগারেট বিক্রির প্রতিবাদ জানায় সে৷ বাবার প্রতি রায়হানের বক্তব্য ছিলো, তুমি যদি সিগারেট বিক্রি কর তাহলে এলাকার যুবক ছেলেরা সেটা কিনে খাবে৷ সেটা তো ঠিক না৷ বাধ্য হয়ে ওর বাবা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করে৷ মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলো সে৷ এমনকি, বহু ছেলেকে ওর নিজের বই পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে৷ যার কেনার সামর্থ ছিল না৷ অনেক ছেলেকে বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়েছে৷ সেই ছেলেটি এখন বিপদে পড়েছে৷ আমরা চাই সরকার ওকে দেশে ফিরিয়ে আনুক৷’’

১০ জুলাইর ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান