সোমবার একটি জার্মান টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জার্মান অর্থমন্ত্রী রবার্ট হ্যাবেক। সেখানে তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবিষয়ে সহমত হয়েছে। ২৭ দেশের ব্লক স্থির করেছে কয়েকদিনের মধ্যেই রাশিয়ার তেল আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।
বস্তুত, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার তেল এবং গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আলোচনা চলছিল। অ্যামেরিকা দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেও ইইউ তা নিতে পারছিল না। কারণ, অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার তেল এবং গ্যাসের উপর ভীষণভাবে নির্ভরশীল। হাঙ্গেরি, পর্তুগাল এবং জার্মানি প্রাথমিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারির বিরোধী ছিল। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধ চার মাস গড়িয়ে যাওয়ার পর জার্মানিও নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবিষয়ে বার্লিনের উপর সহযোগী দলগুলির চাপও ছিল যথেষ্ট।
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
রুশ বাহিনীর প্রতীক নিয়ে পদযাত্রা
মারিউপল দখলে নেয়ার পর তা ঘোষণা করেই জানিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তারপর থেকে মোটামুটি রাশিয়ার একটি শহরের মতো করেই চলছে বন্দর নগরটির জনজীবন৷ সোমবার রাশিয়ায় যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবস পালিত হয়েছে, ইউক্রেনের শহরটিতেও পালন করা হয়েছে ঐতিহাসিক সদিন৷ ছবিতে রুশ সেনাবাহিনীর প্রতীক সেন্ট জর্জেস রিবন নিয়ে নিয়ে পদযাত্রার মুহূর্ত৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
সংগীত পরিবেশন
এক সময় রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুই ভূখণ্ডই ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের জয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটা ঐতিহাসিক৷ তবে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর বাস্তবতা বদলে গেছে৷ মারিউপলে সোভিয়েত বাহিনীর বিজয় উদযাপনের অনুষ্ঠানে রুশপন্থি এই শিল্পী যখন গান গাইছিলেন, তখন ইউক্রেনের অনেক জায়গায় রাশিয়ার সৈন্যদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয়রা লড়ছিল৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
মেলার আবহ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক বিজয়ের ৭৭তম বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে আনন্দমেলার আবহে৷ ছবিতে টিনজাত মাংস সাজানো টেবিল ঘিরে অনুষ্ঠানে আগতদের ভিড়৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
সোভিয়েত আমলের পতাকা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উদযাপনের দিনে মারিউপলের কোথাও কোথাও এভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতাকাও ওড়ানো হয়৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
শৈশবে ফিরে যাওয়া?
ছবির এই প্রবীণ নারী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় দিবসে যেন শৈশবে ফিরে গিয়েছিলেন৷ তখন যেমন মেলায় বেলুন হাতে ঘুরে বেড়াতেন সোমবার সেভাবেই ঘুরতে দেখা যায় তাকে৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
রুশ সেনাদের আনন্দ
মারিউপলের রাস্তায় এক গাড়িতে দুই রুশ সেনা৷ রয়টার্সের সাংবাদিককে ক্যামেরা হাতে দেখে সানন্দে হাত নাড়েন তারা৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
‘দোনেৎস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রধান’
ছবির এই ব্যক্তির নাম ডেনিস পুশলিন৷ ইতিমধ্যে ইউক্রেনের দোনেৎস্ককে স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে নিজেকে ঘোষণা করেছেন সেই প্রজাতন্ত্রের প্রধান শাসক হিসেবে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতায় তিনিও ছিলেন৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
পথে পথে রুশদের বিজয়ের স্মারক
মারিওপলের এক রাস্তার মোড়ে রুশ ভাষায় ‘৯ মে’ লেখা দুটি বিলবোর্ড৷ ৭৭ বছর আগে এই দিনেই জার্মানির নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী৷
-
ইউক্রেনে ‘রাশিয়ার’ বিজয় উদযাপন
কঠোর নিরাপত্তা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয় উদযাপন যাতে নির্বিঘ্নে শেষ হয় তা নিশ্চিত করায় সব সময় তৎপর ছিলেন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরা৷
তবে হাঙ্গেরি এখনো নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে নয়। জার্মান অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ''হাঙ্গেরি এবং পর্তুগাল একটু বেশিমাত্রায় রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে।'' তবে হাঙ্গেরির বিরোধিতা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে বলে জার্মান অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির জন্য সর্বোচ্চ দুই বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কারণ, তেলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্যাস ও তেলের বিষয়ে তারা সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল।
কিন্তু এরপরেও কী ক্রেমলিনকে যথেষ্ট চাপে ফেলা যাবে? রবার্টের ধারণা, যাবে না। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে অ্যামেরিকা রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তাতে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের রপ্তানি খানিকটা কমেওছিল। কিন্তু কম তেল বিক্রি করেও বেশি লাভের রাস্তা বার করে ফেলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন 'রাশিয়াফোবিয়া'য় ভুগছে। রাশিয়া তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে চিন্তিত নয়। কারণ ক্রেমলিন স্থির করেছে পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবে। বস্তুত, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে একটি অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ বিরোধী ব্লক তৈরি করতে চাইছে রাশিয়া। লাভরভ জানিয়েছেন, পশ্চিম যদি নতুন করে বন্ধুত্বের কথা ভাবে, তাহলেই একমাত্র রাশিয়া বিষয়টি বিবেচনা করবে।
-
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
সময়ের আগে জন্ম
লাভিভের প্রসূতি হাসপাতালে কিছুদিন আগে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন গ্যালিনা গোলেট৷ নির্ধারিত সময় অনুযায়ী তার সন্তান একমাস পর ভূমিষ্ঠ হওয়ার কথা ছিল৷ গোলেট বলেন, ‘‘বাচ্চাকে এখন টিউবের মাধ্যমে খাবার দিতে হচ্ছে, বোতল থেকে খাবার নেয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই৷ তবে সে নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছে৷ আশা করছি ধীরে ধীরে শক্তি পাবে সে৷’’ গোলেট জানান, গর্ভকালে শেষ সময়টাতে যুদ্ধের ভয়াবহ মানসিক চাপ বহন করতে হয়েছে তাকে৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
সর্বোচ্চ অপরিণত শিশু
শুধু লাভিভের এই হাসপাতালটিতে যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ২০০ অপরিণত শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানান সেখানকার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মারিয়া মালাচিনস্কা৷ নির্ধারিত সময়ের আগে জন্ম নেয়া এত শিশু এর আগে হাসপাতালটিতে দেখেননি তিনি৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট৷ স্থানীয় চিকিৎসকদের তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে খারকিভে জন্ম নেয়া প্রতি দুই শিশুর একটি ছিল অপরিণত৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
মারিয়া মালাচিনস্কা বলেন, ‘‘যেকোন মানসিক চাপই গর্ভাবস্থায় প্রভাব ফেলে৷ সেখানে যুদ্ধের সূচনা তাদের জন্য বিশাল এক ধাক্কার ব্যাপার এবং এখন ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে৷’’ এমন পরিস্থিতির কারণে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন তারা৷ পাশাপাশি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিভিন্ন অঞ্চলে জন্ম নেয়া শিশুদের রোগ সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও জানান এই চিকিৎসক৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
সরঞ্জাম সংকট
লাভিভের এই হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামের তেমন সংকট নেই৷ কেননা যুদ্ধের আগেই সেখানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পৌঁছে৷ এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও সহযোগিতা পেয়েছে তারা৷ কিছুদিন আগেই সেখানে নতুন তিনটি ইনকিউবেটর এসে পৌঁছেছে৷ তবে সামনের দিনে কী হবে তা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসক মালাচিনস্কা৷ লাভিভের হাসপাতালটির মতো পরিস্থিতি সবগুলোর নয়৷ অনেক জায়গায় হাসপাতালে ইনকিউবেটর সংকট রয়েছে, যা অপরিণত শিশুদের বাঁচাতে অত্যাবশ্যকীয়৷
-
ইউক্রেন যুদ্ধ: অপরিণত শিশুর জন্ম বাড়ছে
হাসপাতালে হামলা
হাসপাতালে থাকলেও খুব একটা স্বস্তিতে নেই রোগী আর চিকিৎসকেরা৷ কেননা দেশটির চিকিৎসা স্থাপনাতেও হরহামেশা হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ বার্তা সংস্থা এপির হিসাবে এই সংখ্যা ৪৯৷ এরমধ্যে গত মার্চে মারিউপলে একটি প্রসূতি হাসপাতালেও হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী৷
জেলেনস্কির বক্তব্য
সোমবার দাভোসের বৈঠক শুরু হয়েছে। সেখানে প্রথম বক্তৃতা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভালোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে তিনি রাশিয়ার উপর আরো কড়া নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছেন।
এদিন রাতে দৈনিক ভিডিওবার্তায় জেলেনস্কি জানিয়েছেন পূর্ব ইউক্রেনে গণহত্যা চালাচ্ছে রাশিয়া। তার দাবি, কিয়েভ থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে দেসনায় লাগাতার বোমাবর্ষণ করে চলেছে রাশিয়া। যার জেরে এখনো পর্যন্ত ৮৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। তার দাবি, গত চার মাসে ইউক্রেনে এক হাজার ৪৭৪টি মিসাইল হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনে টোটাল ওয়ার বা পুরোপুরি যুদ্ধে নেমে পড়েছে রাশিয়া।
যুদ্ধে প্রথম শাস্তি
এই প্রথম রাশিয়ার এক সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধপরাধের শাস্তি ঘোষণা হলো। ইউক্রেনের আদালতে মাত্র চারদিনে ওই সেনার বিচার সম্পূর্ণ হয়। রাশিয়ার ওই সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি অস্ত্রহীন এক বেসামরিক ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে ওই সেনাকে। প্রথম দিনই অভিযুক্ত সেনা অপরাধ স্বীকার করেছিলেন। যে ইউক্রেনের আইনজীবী তার হয়ে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তিনি ওই সেনার মুক্তি দাবি করেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, ওই সেনা অফিসার উপরের নির্দেশ পালন করেছিলেন মাত্র।
অন্যদিকে জেনেভায় জাতিসংঘে রাশিয়ার এক কাউন্সিলর পদত্যাগ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সাম্প্রতিক যুদ্ধের বিরোধী তিনি। সে কারণেই পদত্যাগ করছেন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)