রমজান মাসে পুরান ঢাকার যত ভালোবাসার শরবত
ইফতারে পুরান ঢাকার শরবতের কদর রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ ধরনের সুমিষ্ট পানীয় কিনতে স্থানীয়রা তো বটেই, এমনকি ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারাও ভিড় করেন। পুরান ঢাকার জনপ্রিয় কয়েকটি শরবত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন ছবিঘরে।
জাফরানি শরবত
আবুল হাসনাত রোডের সাতরওজায় আনন্দ কনফেকশনারি শুধু রমজান মাসে জাফরানি শরবত বিক্রি করে। মোগল আমলের ঐতিহ্য অনুযায়ী দুধ, চিনি, পেস্তাবাদাম ও জাফরান দিয়ে তৈরি হয় এই পানীয়। ১ লিটার ও আধা লিটার বোতলের জাফরানি শরবতের দাম যথাক্রমে ৩৮০ টাকা ও ১৯০ টাকা।
পেস্তা বাদামের শরবত
লালবাগ কেল্লার পাশে হরনাথ ঘোষ রোডে রয়েল রেস্টুরেন্টের পেস্তা বাদামের শরবত মোটামুটি সারাবছরই চলে। তবে রোজায় চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। মোগল ঐতিহ্য অনুসরণ করে দুধমালাই, পেস্তাবাদাম, জাফরান ও চিনি দিয়ে তৈরি হয় এটি। প্রতি লিটার বোতল পেস্তা বাদামের শরবত ৩০০ টাকা, আধা লিটার ১৫০ টাকা।
লাচ্ছির লেবুর শরবত
রায়সাহেব বাজার মোড়ে কাজী আলাউদ্দিন রোডে ১০২ বছরের পুরনো বিউটি লাচ্ছি দোকানে সারাবছর লেবুর শরবত ও লাচ্ছি বিক্রি হয়। রমজান মাসে এই দুটি পানীয়ের বেচাকেনা হয় প্রতিদিন রাত ৩টা পর্যন্ত। খাঁটি মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে বরফকুচি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা লাচ্ছি প্রতি গ্লাস ৫০ টাকা। বরফকুচির সঙ্গে চিনি ও টাটকা লেবু মিশিয়ে বানানো লেবুর শরবত প্রতি গ্লাস ২০ টাকা।
মহব্বতকা শরবত
নাজিরা বাজার চৌরাস্তায় আল-কারীম জুস বারের ‘মহব্বতকা শরবত’ রোজায় শরবতপ্রেমীদের অন্যতম আকর্ষণ। ড্রাগন ফল, দুধ, তরমুজ কুচি ও কাঠবাদাম কুচি দিয়ে এটি বানানো হয়। প্রতি গ্লাস ১০০ টাকা।এছাড়া আম, ড্রাগন ফল, তরমুজ, দুধ ও দুই ধরনের বাদাম দিয়ে তৈরি করা অ্যারাবিয়ান শরবত প্রতি গ্লাস ১৪০ টাকা। আল-কারীম জুসবার লাচ্ছি ও লেবুর শরবতসহ নানান ফলের মিল্কশেক বিক্রি করে।
খেজুর, জলপাই ও জামের শরবত
লালবাগ শাহী মসজিদের বিপরীতে শাহী জুস কর্নারের কারিগর তরুণ ডয়চে ভেলেকে জানান, রোজায় বেশি বিক্রি হয় জামের শরবত। প্রতি গ্লাস ৫০ টাকা। এছাড়া জলপাই শরবত গ্লাসপ্রতি ৩০ টাকা এবং খেজুর মিল্কশেক প্রতি গ্লাস ৫০ টাকা। এছাড়া আছে ৩০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে নানান ফলের শরবত।
বিটলবণ দিয়ে লেবুর শরবত
চকবাজারে নুরানী কোল্ড ড্রিংকসে ৭০ বছর ধরে লেবুর শরবত ও লাচ্ছি বিক্রি হচ্ছে। দোকানটিতে এখন দুই ভাগ। এক ভাগের কারিগর মো. মাহফুজ ডয়চে ভেলেকে জানান, এখানে লেবুর শরবত বিক্রি হয় গ্লাসপ্রতি ২০ টাকা ও লাচ্ছি প্রতি গ্লাস ৩০ টাকায়। আর স্পেশাল লাচ্ছির দাম ৫০ টাকা।
জনসন রোডে মাঠা
সারা বছরের মতো রমজান মাসেও পুরান ঢাকায় মাঠা বিক্রি হয়। এর মধ্যে জনসন রোডে তিন দশকের পুরোনো হোটেল আল রাজ্জাক অনেকেরই পছন্দের। এখানে মাঠা প্রতি লিটারের দাম ১৮০ টাকা। চকবাজারে বোম্বে সুইটস সংলগ্ন ফুটপাতেও মাঠা বিক্রি হয়ে থাকে।
কাশ্মীরি শরবত
নবাবপুরে ডিসেন্ট পেস্ট্রি শপ রমজান মাসে কাশ্মীরি শরবত বিক্রি করে। সৌদি আরব থেকে আনা জাফরানের সঙ্গে পেস্তাবাদাম, দুধ ও চিনি মিশিয়ে তৈরি হয় এটি। বোতলে কাশ্মীরি শরবত প্রতি লিটার ৩৮০ টাকা, আধা লিটার ১৯০ টাকা।
নানান স্বাদের মাঠা
পুরান ঢাকার বংশালে আগা সাদেক লেনের ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ মাঠের বিপরীতে মাঠা ও ঘোল বিক্রি হয়। এখানে টক মাঠা, মিষ্টি মাঠা, ছানা মাঠা, মালাই মাঠা ও ঘোল পাওয়া যায় কেজি ও গ্লাস হিসেবে।
দইয়ের মতো লাবাং
পুরান ঢাকায় রোজায় বেশি বিক্রি হওয়া আরেকটি পানীয় হলো খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি লাবাং। এটি দেখতে অনেকটা দইয়ের মতো। লাবাং তৈরিতে দুধের সঙ্গে টক-দই, বিট লবণ ও সামান্য পরিমাণে চিনির শিরা দেওয়া হয়। রয়েল রেস্টুরেন্ট, ডিসেন্ট, আনন্দসহ প্রায় সব দোকানেই বোতলে পাওয়া যায় লাবাং।