রংপুরের কিছু দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পৌর কর্পোরেশন রংপুর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে৷ ছবিঘরে রংপুরের উল্লেখযোগ্য কিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের কথা থাকছে৷
তাজহাট জমিদার বাড়ি
রংপুরের তাজহাটে অবস্থিত জমিদার বাড়িটি ২০০৫ সাল থেকে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় বাড়িটি নির্মাণ করেন৷ এতে রয়েছে দশম শতাব্দীর টেরাকোটা, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলের কুরআন, মহাভারত, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর প্রতিকৃতি ইত্যাদি৷
অর্জন
রংপুর শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত মডার্ন মোড়ে অবস্থিত স্বাধীনতার স্মারক ভাস্কর্য ‘অর্জন’ ৷ ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ রংপুরের বীর জনতা কর্তৃক বাউংকা-লাঠি, বল্লম-কোঁচা আর তীর ধনুক নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের ঐতিহাসিক ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে এই ভাস্কর্যের মাধ্যমে৷ ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়৷
বেগম রোকেয়ার বাড়ি
নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার বাড়িটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা৷ বেগম রোকেয়া অষ্টাদশ শতাব্দিতে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামের জমিদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন৷
দমদমা বধ্যভূমি
দমদমা সেতুর নিচে এই অবস্থিত৷ ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রিল মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছয় জন অধ্যাপককে পাক হানাদার বাহিনী এই স্থানে নির্মমভাবে হত্যা করে৷
ইটাকুমারি জমিদার বাড়ি
অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ হিসেবে আখ্যা পাওয়া এ জমিদার বাড়িটি পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত৷ এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায়৷ ১৭৮৩ সালে রংপুরের ঐতিহাসিক ব্রিটিশবিরোধী প্রজা বিদ্রোহের স্মৃতিচিহ্ন এই ইটাকুমারি জমিদার বাড়ি৷
রংপুর ক্যাডেট কলেজ
১৯৭৯ সালে রংপুর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে রংপুর ক্যাডেট কলেজ নামে আত্মপ্রকাশ করে৷
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরুর একবছর পরই বেগম রোকেয়ার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়৷ এর ২২ বিভাগে প্রায় ৮,০০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেছেন৷
পালিচড়া খাঁন চৌধুরী মসজিদ
রংপুর শহরের দর্শনা মোড় থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে সদ্যপুস্করিনী নামক স্থানে মুসলিম শাসনামলের অন্যতম নিদর্শন পালিচড়া খাঁন চৌধুরী জামে মসজিদ৷ হিজরি ১২২৭ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন তৎকালীন জমিদার বংশা সর্দার৷ সাদা রঙের ৫২ ফিট দৈর্ঘ্য ও ২১ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট এই মসজিদে তিনটি গম্বুজ রয়েছে৷
কারমাইকেল কলেজ
রংপুরের লালবাগে অবস্থিত কারমাইকেল কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ ১৯১৬ সালে রংপুরের ম্যাজিস্ট্রেট কালেক্টর জে.এন. গুপ্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্ণর লর্ড ব্যারন কারমাইকেলের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়৷ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৪ হাজার৷
চিকলি বিল
চিকলি বিল রংপুরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি স্পট৷ শহরের হনুমানতলা এলাকার শত বছরের প্রাচীন চিকলি বিলের চারপাশ সংরক্ষণ করে পুরো এলাকাটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলে সিটি কর্পোরেশন৷ দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য বিলে স্পিড বোট, পার্কে কৃত্রিম ঝরণা, চরকি, ট্রেনসহ বিভিন্ন ধরণের রাইড স্থাপন করা হয়েছে৷
রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি
জেলার প্রাচীনতম এ গ্রন্থাগারটি ১৮৩২ সালে কুন্ডির জমিদারগণ প্রতিষ্ঠা করেন৷ এতে বিপুল সংখ্যক বই, পান্ডুলিপি, পুঁথি, উৎকীর্ণলিপি ও প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ সংগৃহীত ও সংরক্ষিত আছে৷ যদিও এর মূল্যবান সংগ্রহসমূহ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প, ১৯০৩ সালের অগ্নিকাণ্ড এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷
রংপুর চিড়িয়াখানা
রংপুরের পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন রংপুর চিড়িয়াখানাটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানাটি ২১.৫১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে৷ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী এতে ২৬ প্রজাতির প্রায় ২১৫টি প্রাণী ছিল৷
দেওয়ানবাড়ি জমিদার বাড়ি
রংপুরের বেতপট্টি নামক স্থানে এটি অবস্থিত৷ প্রতিষ্ঠাতা জমিদার ফণীভূষণ মজুমদার৷ ১৯৫০ সালের পর থেকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে স্থাপনাটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে৷
টাউন হল
ঐতিহাসিক রঙ্গপুর নাট্য সমাজ ১৮৯৬ সালে রংপুর টাউন হল প্রতিষ্ঠা করে৷ কারো কারো মতে, এখানে মঞ্চস্থ প্রথম নাটকটি ছিল রামনারায়ণ তর্করত্ন রচিত ‘কুলিনকুলসর্বস্ব’৷ ১৯৭১ সালে এটি ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ ও টর্চার সেল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল৷
জেলা পরিষদ ভবন
রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা পরিষদ ভবনটি স্থাপিত হয় ১৯১৫-১৬ সালে৷ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের কমিশনার এইচ এফ সামান এবং উদ্বোধন করেন নবাব স্যার সৈয়দ শামস-উল-হুদা৷
দেবী চৌধুরাণীর বাড়ি
দেবী চৌধুরাণীর বাড়ি বা মন্থনা জমিদার বাড়ি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মন্থনা নামক স্থানে অবস্থিত৷ প্রায় আট একর জায়গা জুড়ে ১৭০৩-০৪ সালে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার অনন্তরাম৷ অনন্তরামের তৃতীয় বংশধর নরেন্দ্র নারায়ণের স্ত্রী ছিলেন জয় দুর্গা দেবী, যিনি পরবর্তীতে ‘দেবী চৌধুরাণী’ নামে পরিচিতি পান এবং তার নামানুসারে এই জমিদার বাড়ির নামকরণ করা হয়৷চৌধুরাণীর বাড়ি
কেরামতিয়া মসজিদ
মোঘল আমলের শেষ দিকে নির্মিত মসজিদটি শহরের কাচারি বাজারের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত৷ উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের জৈনপুর থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য রংপুরে আসেন বিখ্যাত সুফি ও দরবেশ শাহ কারামত আলী জৌনপুরী৷ তার উদ্যোগে এ মসজিদটি নির্মিত হয়৷