1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘যে প্রবাসীরা আইন মানেন না, তারা কুলাঙ্গার'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ মার্চ ২০২০

‘‘... দেশে ফিরে বলেন, বাংলাদেশের আইন মানি না, কোয়ারান্টাইনে থাকবেন না৷ আমি মনে করি, এই গুটিকয় প্রবাসী কুলাঙ্গার,'' এভাবেই কিছু প্রবাসীর সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন৷

https://p.dw.com/p/3ZnqZ
ছবি: DW/S. Hossain

ডয়চে ভেলে : ইউরোপে থাকা বাংলাদেশিরা এখন যদি ফিরতে চান সরকার কি ব্যবস্থা নেবে?

. কে আব্দুল মোমেন : অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে৷ আপাতত আমরা যেগুলো সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা, সেখান থেকে বাংলাদেশের ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছি৷

যারা ভ্রমণে গেছেন, তাদের কাছে তো বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই৷ তারা কিভাবে চলবেন?  

যারা এসেছেন, স্বদেশি বা বিদেশি, তাদের ১৪ দিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে৷ সেটার দায়-দায়িত্ব তাদের৷ যারা বিদেশে আছেন; আমাদের মিশনগুলো তাদের কিছু কিছু সাহায্য করবে

যারা আটকে পড়েছেন, তাদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা আছে?

তারা আমাদের মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুক৷ কারণ, এটা একটা বিশেষ ব্যবস্থা৷

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইবে?

দেখেন, আন্তর্জাতিকভাবে যারা সহায়তা দেয়, তারা কিন্তু দেখে কত মানুষ মারা গেছে, কত মানুষ আক্রান্ত৷ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে৷

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কি স্বয়ংসম্পূর্ণ?  

এখন পর্যন্ত আমরা নিজেরাই করছি৷ যা করা দরকার, সরকার সবই করতে বদ্ধপরিকর৷

এখনও যারা বিদেশ থেকে আসছেন, তাদের কি ঠিকভাবে কোয়ারান্টাইন হচ্ছে?

যারা আসছেন, তাদের ১৪ দিনের কোয়ারাইন্টাইন করার কথা৷ এখানে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে৷ যাদের কোনো উপসর্গ আছে, তাদের সরাসরি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷ আমাদের পয়সায় তাদের চিকিৎসা করছি৷ থাকা-খাওয়ার কাজটাও আমরা করছি৷ আর যাদের কোনো উপসর্গ নেই, তাদের নিজেদের বাসায় ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইনে থাকতে বলা হচ্ছে৷ তারা যদি সেটা না মানেন, তাহলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছি৷ একজনকে আমরা ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছি৷ আমরা ডিসি-পুলিশ কমিশনারদের নির্দেশনাও দিয়েছি তারা যেন এটা এনফোর্স করেন৷

যারা দেশে ফিরছেন, তাদের তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা?৷এখানে তো বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে!

দু-একটি ঘটনা ঘটছে৷ এই কারণেই এটাকে আরো কার্যকর করতে আমাদের দলের লোকজনকে নিয়োগ করেছি৷ 

ড. এ কে আব্দুল মোমেন

কোয়ারান্টাইনে যেখানে তাদের রাখা হচ্ছে, সেটা স্বাস্থ্যসম্মত না এমন অভিযোগও অনেকে করছেন...

এটা খুবই দুঃখজনক৷ সর্বশেষ ইটালি থেকে ১৪২ জন এসেছেন৷ যেখানে আমরা বন্ধ করে দিয়েছি৷ ইটালির রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, ইটালির নিয়মে বাসা থেকে বের হওয়া বেআইনি৷ কেউ বের হলে তাকে ২০৬ ইউরো জরিমানা দিতে হয়৷ জেলও হয়৷ তিনি বলেছেন, এদের যদি নাম-ঠিকানা দেওয়া হয়, তাহলে তারা শাস্তি দেবেন৷ দেশে ফেরার পর তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখতে একটা ক্যাম্পে নিয়ে গেছি৷ তাদের সেটা পছন্দ হয়নি৷ এখানে আগেও ৩১২ জনকে রেখেছি৷ কিন্তু তারা এসে প্রথমেই বলেছে, তারা ইটালি থেকে এসেছেন, তারা আমাদের আইন মানেন না৷ কোয়ারান্টাইনে থাকবেন না৷ এখানকার ব্যবস্থা খুবই খারাপ৷ বড় বড় হোটেলে থাকতে চান৷ আমরা আমাদের বেস্ট খাবার, পর্যটন কর্পোরেশন থেকে খাবার তাদের দিয়েছি, তারা এটা খাবেন না৷ তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা আমাদের খাবার খাবেন না, তারা নিজেদের পয়সায় যে কোনো জায়গা থেকে খাবার কিনে এনে খেতে পারবেন৷ যখন তারা এলো, তাদের মধ্যে গুটিকয়েক লোক ছিল, তাদের ব্যবহার ছিল খুবই উচ্ছৃঙ্খল৷ এমনিই করোনা ভাইরাসের কথা শুনলে লোকজন কাছে যায় না৷ এর মধ্যে ওখানে যারা সহায়ক ছিলেন, তাদের তারা গালিগালাজ করেছেন, মারধরও করেছেন৷ কিছু সংখ্যক প্রবাসী, প্রবাসীদের বদনাম করছেন৷ আমি ৩৮ বছর বিদেশে প্রবাসী হিসেবে ছিলাম৷ কিন্তু আমরা কখনোই বিদেশেও আইন অমান্য করিনি৷ এরকম কয়েকজন আমাদের প্রবাসীদের জন্য কুলাঙ্গার৷ তাদের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা বাংলাদেশে এলে এ দেশের নিয়ম-কানুন আইন মেনে চলতে হবে৷ আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু এটা ইমার্জেন্সি অবস্থা, এটাও বুঝতে হবে৷

বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে সামাল দেওয়ার সামর্থ আমাদের আছে?

আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত৷ তবে ব্যাপক হলে আমাদের সমস্যা হবে৷ আমাদের সবকিছুরই সীমাবদ্ধতা আছে৷ এটা তো হোম-গ্রোন ভাইরাস না৷ তাই যারা এটা নিয়ে আসতে পারেন, তাদের মনিটরিংয়ে রাখতে চাচ্ছি৷ আমরা সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তাদের ধৈর্য্য্ ধরার চেষ্টা করতে বলেছি৷ কিন্তু তারা অনেকেই এটা মানতে চাচ্ছেন না৷

এমনিতেই আমাদের অর্থনীতি নড়বড়ে৷ এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি কতটা স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে?

এই কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিই আঘাত পাবে৷ আমরা গ্লোবাল ওয়ার্ল্ডে থাকি৷ সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতিও আঘাত পেতে পারে৷ এর আরেকটি দিক আছে, আমরা গার্মেন্ট পণ্য্য এক্সপোর্ট করি৷ যেহেতু এটা চায়নাতে হয়েছে, তাই অনেকেই আমাদের মার্কেটের দিকে তাকাচ্ছে৷ ভালো-মন্দ দুই-ই আছে৷ তবে এটা সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাভাব নিয়ে আসতে পারে৷

প্রবাসীদের  আগে আপনি  ‘নবাবজাদা' বলেছেন৷ আজ যারা আইন মানেন না ,তাদের ‘কুলাঙ্গার' বললেন, এই ধরনের মন্তব্য কি ঠিক হয়েছে?

যারা আইন মানেন না, যারা আমাদের লোকজনকে বাজেভাবে গালিগালাজ করেছেন, পিটাপিটি করেছেন৷ আমি প্রবাসীদের বলিনি নবাবজাদা৷ এই ১৪২ জনের মধ্যে ১৫-২০ জন৷ তারা আমাদের এই ব্যবস্থা মানেন না৷ তাহলে টাকা দেন, ভালো জায়গায় নিয়ে যাবো৷ তাদের এই ধরনের ব্যবহার দুঃখজনক৷ প্রবাসীরা এদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া উচিত৷ কারণ, তারা প্রবাসীদের বদনাম করেছেন৷ আমি নিজেও একজন প্রবাসী৷ এটা আমার খারাপ লেগেছে৷ আমরা এই ধরনের ব্যবহার কখনোই করি না৷