যে কারণে ভাঙা যাচ্ছে না বিজিএমইএ ভবন
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০গত ২২ জানুয়ারি বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ উদ্বোধন করেন সেসময়ের গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম৷ পরদিন থেকেই পুরোদমে ভাঙার কাজ শুরুর কথা ছিলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার গ্রুপের৷ কিন্তু ২৬ দিনেও ভবন ভাঙ্গার কাজটি শুরু হয়নি৷ এরমধ্যেই গত সপ্তাহে গণপূর্তমন্ত্রীর দপ্তর বদল হয়েছে৷ তিনি এখন আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিএমইএ'র কাছে বিদ্যুৎ বিভাগের (ডিপিডিসি) বকেয়া বিল ছিলো৷ এ কারণে আগেই তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়৷ এই বকেয়ার মধ্যে কিছুটা তারা পরিশোধ করেছে৷ তারপরও দুই লাখ ৫৮ হাজার টাকা পাওনা রয়ে গেছে৷ যেকারণে ভবন ভাঙার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ফোর স্টার গ্রুপ বিদ্যুৎ সংযোগ চেয়েও পাচ্ছে না৷
তারা ওয়াসার কাছে পানির সংযোগও চেয়েছিল৷ কিন্তু তাও মেলেনি৷ কারণ বিজিএমই ভবনে ওয়াসার পানির লাইন নেই৷ গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলা হতো সেখানে৷ ফোর স্টার গ্রুপ নিজস্ব উদ্যোগে গভীর নলকূপটি চালু করতে চাইলেও বিদ্যুতের অভাবে তাও সম্ভব হচ্ছে না৷ নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে তারা কাঁচ খোলা এবং ময়লা অপসারণের কাজ শুরু করছে৷ কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় ভবন ভাঙার ভারী যন্ত্রপাতি চালানো সম্ভব হচ্ছে না৷
‘বিদ্যুৎ না পেলে কাজ বন্ধ’
ফোর স্টার গ্রুপের পরিচালক নাসিরুল্লাহ খান বলেন, ‘‘তারা (ডিপিডিসি) আজকের মধ্যে সংযোগ দেবে বলেছেন৷ আমরা আগামীকাল (সোমবার) পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য অপেক্ষা করব৷ না পেলে আমরা কাজ বন্ধ করে দিব৷ কারণ আমারা হ্যামার দিয়ে এই ভবন ভাঙবো৷ ওই হ্যামার বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো সম্ভব নয়৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা কাজ শুরুর সময়ই বিদ্যুৎ লাইনের জন্য আবেদন করেছি৷ কিন্তু বিজিএমইএ'র কাছে বকেয়া বিল থাকায় আমাদের সংযোগ দিচ্ছে না৷''
ভবনটি ভাঙার জন্য ফোর স্টার গ্রুপ কাজ পেয়েছে রাজউকের কাছে থেকে৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য তারা কোনো টাকা পাবে না৷ উল্টো রাজউককে এক কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে৷ বিনিময়ে ভবনের ভাঙ্গা অংশ তারা নিয়ে যাবে৷ নাসিরুল্লাহ খান বলেন, ‘‘আমরা এটা নিয়ে বিক্রি করে ব্যবসা করব আশা করেছিলাম৷ এখন যা পরিস্থিতি তাতে লোকসান গুনতে হবে৷ ১৭০ জন কর্মীকে বসিয়ে রেখেছি৷ ওখানে তাদের পানিও কিনে খাওয়াতে হয়৷''
জানা গেছে নানা জটিলতায় ফোর স্টার গ্রুপকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ঘুরতে হয়েছে৷ তখনকার গণপূর্তমন্ত্রী সব সংস্থাকে তাদের সহযোগিতার জন্য বললেও বিদ্যুৎ বিভাগ ও ওয়াসা তা আমলে নেয়নি৷
রাজউকের নামে সংযোগ
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) যোগাযোগ করে জানা গেছে, বিজেএমইএ'র বকেয়ার পাশাপাশি কিভাবে ওই ভবনে বিদ্যুতের পুনঃসংযোগ দেয়া হবে তা বের করতেই এত সময় চলে গেছে৷ এ নিয়ে তারা অনেক ফাইল চালাচালি করেছেন৷ প্রয়োজনীয় বোর্ড, মিটার ও সুইচও স্থাপন করা হয়েছে৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি সংযোগ দিতে পারেনি৷ তবে শেষ পর্যন্ত কাকরাইল স্টেশন থেকে সংযোগ দেয়ার একটি প্রক্রিয়া চলছে৷
ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান রোববার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা দুই-একদিনের মধ্যেই ওই ভবনে রাজউক-এর নামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেব, ফোর স্টার গ্রুপকে নয়৷ ফোর স্টার গ্রুপ আগেই সংযোগের আবেদন করেছিলো৷ বিজিএমইএ'র আড়াই লাখ টাকার মতো বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো৷ আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ওই বকেয়া টাকা বিজিএমইএ'র জামানত থেকে কেটে রাখতে বলেছি৷ ফোর স্টার গ্রুপ যে বিদ্যুৎ খরচ করবে তার বিল আমরা রাজউকের কাছ থেকে নেব৷''
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাতিরঝিলের উপর গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷ ওই রায়ে ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো' বলে উল্লেখ করা হয়৷ এরপর আপিল বিভাগও সেই রায় বহাল রাখে৷