যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নজর দিন: এইচআরডাব্লিউকে হানিফ
১৫ জানুয়ারি ২০২১আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এইচআরডাব্লিউকে চ্যালেঞ্জ করে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিতে বলেছেন৷ তিনি তাদের অ্যামেরিকার দিকে নজর দিতে বলেছেন৷
এইচআরডাব্লিউ তাদের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, সরকারের সমালোচনা করায় সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য ও অধিকারকর্মী যারাই হোক না কেন, তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ৷ এই দমন-পীড়নে করোনা মহামারিকে সরকার অজুহাত হিসবে ব্যবহার করেছে৷
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে৷ অপহরণ, গুম, বিনা বিচারে হত্যা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ৷
প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ভাইরাস নিয়ে ‘গুজব‘ ছড়ানোর অভিযোগে নজরদারি ও দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এমনকি ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে পোস্ট দেয়ার পর তাকে অবমাননার অভিযোগে এক শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ৷ এমনকি সরকার গত মে মাসে সরকার বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে এমন পোস্ট লাইক বা শেয়ারে সরকারি কর্মচারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷
প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডমস বলেন, ‘‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেখিয়ে দিয়েছে যে, কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তারা সবই বন্ধ করে দেবে৷ এই মহামারির সময়েও তাদের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘যেসব কার্টুনিস্ট এবং কিশোর ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া বন্ধ করা উচিত৷ বরং মহামারির মধ্যে তাদের নিজেদের কর্তৃত্ব যেভাবে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে তা নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত৷''
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৭৬১ পৃষ্ঠার এক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বুধবার৷ এতে বিশ্বের কমপক্ষে ১০০ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ অংশের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ারও সমালোচনা করা হয়েছে৷ সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাজ হারানো নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷
তবে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান মনে করেন এইচআরডাব্লিউর এখন বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তা না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে কাজ করা উচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে সত্য৷ ডিজিটাল আইন সংবাদমাধ্যমকে সেন্সরের মধ্যে ফেলে দিয়েছে৷ এটা নিয়ে আমরা মানবাধিকারকর্মীরা এখানে কাজ করছি৷ আমরা মুখ বন্ধ করে নেই৷ আমরা যেকোনোভাবে হোক কথা বলছি৷ কিন্তু এখন বেশি কথা বলা দরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যে ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ করে বেড়াচ্ছেন তাতে অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের সরকার সেখান থেকে এক ধরনের উৎসাহ পায় বলে আমি মনে করি৷ সেখানে মানবাধিকারের অবস্থা খারাপ৷ আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তা নেই৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের নিয়ে কথা বললে বরং ভালো হবে৷ আমরা এখানে আছি৷’’
আর হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন তথ্যভিত্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ৷ তিনি বলেন, ‘‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে অভিযোগ করছে তাদের কাছে কী তথ্য আছে? কোথায় বাকস্বাধীনতা রোধ করা হয়েছে? প্রেসক্লাবের সামনে এই করোনার মধ্যেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করছে৷ আপত্তিকর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছে৷''
তিনি সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারেরও প্রমাণ দিতে বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শহীদুল আলম নামে একজন আর্টিস্টকে ফেক তথ্য ছাড়ানোর অভিযোগে আটক করা হয়েছিল৷ খালেদা জিয়া আদালতে দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন৷ কেউ যদি অপরাধ করে, দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে তাকে কি গ্রেপ্তার করা যাবেনা? তারা কি আইনের ঊর্ধ্বে?’’
মাহবুব উল আলম হানিফ তাদের অ্যামেরিকার দিকে নজর দিতে বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে৷ বর্ণবাদী হামলায় নিহত হচ্ছে৷ ডেভিড ফ্রয়েডকে গুলি করে হত্যা করা হলো৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর কী হচ্ছে দেখেন না? তাদের জন্য কাজ করেন৷’’
বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘উসকানিমূলক' তথ্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ তাদের এই বিভ্রান্তি ছড়ানো দুঃখজনক, বলেন তিনি৷