1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদীর জন্মদিনে মেগা-ইভেন্ট বিজেপি-র

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৭১তম জন্মদিবস মেগা ইভেন্ট হিসাবে পালন করবে বিজেপি। গরিবদের দেয়া হবে ১৪ কোটি রেশন-ব্যাগ।

https://p.dw.com/p/40HsZ
এবার বিশেষভাবে মোদীর জন্মদিন পালন করবে বিজেপি। ছবি: Money Sharma/AFP/Getty Images

নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিন ১৭ সেপ্টেম্বর, এই বছর আবার মোদীর লাগাতার ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতায় থাকাও পূর্ণ হচ্ছে।  ফলে এবার মোদীর জন্মদিন উপলক্ষে বিজেপি মেগা-ইভেন্টের পরিকল্পনা করেছে। দেশজুড়ে বিলি করা হবে রেশনের সমগ্রী সহ ব্যাগ। ব্যাগের উপরে থাকবে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। লেখা থাকবে 'থ্যাংক ইউ মোদী'। কারণ, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্রকল্পে তিনি গরিব মানুষকে প্রতি মাসে বিনা পয়সায় দানাশস্য দেন।

প্রতি পরিবার থেকে একজনকে এই ব্যাগ দেয়া হবে। মোট দেয়া হবে ১৪ কোটি মানুষকে। প্রতি পরিবারে চারজন সদস্য ধরলে ৫৬ কোটি গরিব মানুষের কাছে মহানুভব মোদী ও বিজেপি-র বার্তা যাবে। উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোট আসন্ন। সেখানে  ভোটের আগে এই বার্তা পৌঁছনোর রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

উত্তর প্রদশেই ২৭ হাজার বুথে এই রেশন ব্যাগ বিলি হবে। বিজেপি কর্মীরা পুরোটা ভিডিওতে ধরে রাখবেন।

বিজেপি-র পরিকল্পনা

২০ দিন ধরে চলবে এই কর্মসূচি। যার নাম দেয়া হয়েছে 'সেবা ও সমর্পণ কর্মসূচি'। মোদীর ৭১তম জন্মদিবস তাই দেশের ৭১টি নদী পরিস্কার করবেন বিজেপি কর্মীরা।  বিশেষ নজর থাকবে উত্তর প্রদেশের উপর।  আগামী ২ অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিনে দেশজুড়ে চলবে বিশেষ সাফাই অভিযান।

এছাড়া যুব বিজেপি-র কর্মীরা রক্তদান করবেন। নারী বিজেপি কর্মীরা বিভিন্ন মহল্লা ও হাসপাতালে গরিবদের ফল ও খাবার দেবেন।  বিভিন্ন বুথে মানুষদের জড়ো করে পাঁচ কোটি 'থ্যাংক ইউ মোদী' পোস্টকার্ড পঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রতিটি রাজ্যের প্রচুর জায়গায় বসবে আলোচনাচক্র। সেখানে মোদীর শাসনে কীভাবে দেশ এগিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হবে।

প্রতিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোদীর ছবি দিয়ে পোস্টার, ব্যানার লাগানো হবে। পুরো কর্মসূচি পালনের দায়িত্বে থাকবেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। তিনি বিজেপি নেতাদের কাজ ভাগ করে দিয়েছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং চিঠি পাঠিয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যে দলের নেতাদের কাছে। কাকে কী করতে হবে, সেসব বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রতিটি কর্মসূচির বিস্তারিত ভিডিও রেকর্ডিং থাকবে। সামাজিক মাধ্যম ভরিয়ে দেয়া হবে এই কর্মসূচির প্রচারে ও সাফল্যের কাহিনিতে। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত বিপুল খরচ করে বিজেপি সারা দেশে মোদী-ঝড় তুলে দেবে। 

রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মাতামাতি

রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মাতামতি ভারতে নতুন নয়। একসময় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে রজনৈতিক নেতাদের 'লার্জার দ্যান লাইফ' ভাবমূর্তি নিয়ে দেশে কম বিতর্ক হয়নি। ইন্দিরা গান্ধীর সময়ও দেবকান্ত বড়ুয়ার মতো নেতা বলেছিলেন, 'ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা'। ইন্দিরা ও রাজীবের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে তাদের মূর্তি বসনো হয়। তাদের নমে সরকারি অধিকাংশ প্রকল্পের নাম দেয় সেই সময়ের সরকার। বিভিন্ন রাস্তা, স্টেডিয়াম, জায়গার নামও তাদের নামে রাখা হয়।

কিন্তু প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, মোদীকে নিয়ে যা হচ্ছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ডয়চে ভেলেকে সৌম্য বলেছেন, ''ইতিমধ্যেই গুজরাটে মোদীর নামে একটি স্টেডিয়ামের নাম রাখা হয়েছে।  করোনার টিকার সার্টিফিকেট সহ সর্বত্র মোদীর ছবি ও নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এবার রেশনের ব্যাগ থেকে শুরু করে সব জায়গায় পোস্টার, ব্যানারে তার নাম ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা কি আত্মমগ্ন নেতার পরিচয় নয়?'' সৌম্যর বক্তব্য, ''কখন এই কাজ করা হচ্ছে? যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। মানুষের চাকরি নেই। তখন এরকম একটা প্রচারে নামল বিজেপি।''

কতটা লাভ হবে?

প্রবীণ সাংবাদিক ও উত্তর প্রদেশ বিশেষজ্ঞ শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বাজপেয়ীর সময় একবার ইন্ডিয়া শাইনিং প্রচার নিয়ে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছিল বিজেপি। সেবার বিজেপি হারে। এবারও সেরকমই একটা ইন্ডিয়া শাইনিংয়ের ছবি তুলে ধার হচ্ছে।''  তর মতে, ''মুশকিল হলো মানুষের হাতে পয়সা নেই, কর্মসংস্থান নেই এটা মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি এটও সত্যি মানুষ বিনি পয়সায় জিনিস পেলে খুশি হয়।''

সংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সবসময়ই একটা ইভেন্টকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা বারবার দেখিয়ে দিয়েছে। এই ব্যাপারে তাদের ধারেকাছে কেউ নেই। বিজেপি-র কাছে টাকার অভাব নেই। করদাতাদের টাকা খরচ না করে বিজেপি যদি গরিবদের সাহায্য করে, সেটা ভালো।''

জিএইচ/ কেএম (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)