আফগানিস্তানে মেয়েদের ট্যাক্সিতে যাওয়া নিয়ে নির্দেশিকা দিলো তালেবান সরকার। বলা হয়েছে, ট্যাক্সিতে উঠতে গেলে মেয়েদের হিজাব পরতেই হবে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বোরখাও পরতে হবে। ট্যাক্সিচালকদেরও একগুচ্ছ নিয়ম মানতে হবে। তাদের কীরকম ব্যবহার করতে হবে সেই নির্দেশিকাও জারি করেছে প্রোপাগেশন অফ ভার্চু ও প্রিভেনশন অফ ভাইস মন্ত্রণালয়।
রোববার জারি করা এই নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নারীরা হিজাব না পরলে তাদের ট্যাক্সিতে নেয়া যাবে না। কোনো নারী যদি ৭২ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বে যেতে চান, তাহলে তার সঙ্গে কোনো পুরুষ আত্মীয় থাকতেই হবে।
ট্যাক্সিচালকদের বলা হয়েছে, তাদের লম্বা দাড়ি রাখতে হবে। তাদের প্রার্থনার জন্য থামতে হবে। তারা ট্যাক্সিতে কোনো গান বাজাতে পারবেন না।
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
যেন পুরুষের দেশ
তালেবান দখল নেয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরছে আফগানিস্তানে ৷দোকান, অফিস-আদালত খুলছে৷ তবে কোনো জায়গাতেই নারীদের তেমন দেখা যায় না৷ ছবির এই রেস্তোরাঁতেও খেতে আসা সবাই পুরুষ৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
লিঙ্গবৈষম্য
কাবুলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আফগানিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন ছেলে আর মেয়েদের বসতে হয় আলাদা৷ মাঝে পর্দা অথবা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দিয়ে আলাদা করা হয় তাদের৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য এভাবে তুলে ধরতে চায় তালেবান৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তালেবান নেতা আব্দুল বাগি হাক্কানি বলেন, ‘‘সহশিক্ষা ইসলামের মূল নীতিমালা এবং আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
নারীর নিয়ন্ত্রিত অধিকার
হেরাতের মসজিদে এভাবেই এখন নামাজ আদায় করতে যান নারীরা৷ নারীদের শুধু নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়নি, তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের প্রধান আব্দুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, এখন থেকে খেলাধুলাতেও সীমিত পরিসরে অংশ নিতে পারবেন মেয়েরা৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
অলি-গলিতেও সশস্ত্র তালেবান
ছবির এই রাস্তার মতো আফগানিস্তানের সব শহরের সব রাস্তায়ই থাকে তালেবান পাহারা৷ সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা কেউ পশ্চিমা পোশাক পরেছেন কিনা, তালেবানবিরোধী কিছু করছেন কিনা এসব দিকে কড়া নজর রাখেন৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
বেকারত্ব বাড়ছে
কাবুলের রাস্তার পাশে বসে কোনো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় কয়েকজন দিনমজুর৷ আফগানিস্তানে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে৷ জাতি সংঘের আশঙ্কা, বিদেশি সহায়তা না পেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্ব ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যেতে পারে, দারিদ্র্যের হারও সর্বশেষ সমীক্ষার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৯৮ ভাগ হয়ে যেতে পারে৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ রোধে লাঠি, বেত, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও চালায় তালেবান৷ এ বিষয়ে তালেবানকে সতর্কও করেছে জাতিসংঘ৷ তালেবানের হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক৷ তা সত্ত্বেও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার নারীরা৷ ওপরের ছবিতে এক নারী বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের (নারীর) ক্ষমতার ফলাফল৷’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানের নারী সমর্থক
তালেবান দখল নেয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থক নারীদেরও দেখা যাচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে তালেবান সমর্থক নারীদের বিক্ষোভের এক প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মুজাহিদিনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারে আমরা সন্তুষ্ট৷ ’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানের পক্ষপাত
তালেবানবিরোধীদের সমাবেশে হামলা হয়েছে, সেই খবর প্রকাশ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ধরে নিয়ে পিটিয়েছে তালেবান৷ অন্যদিকে তালেবান সমর্থকদের সমাবেশ কাভার করতে আহ্বান জানানো হয় সাংবাদিকদের৷
তালেবান ও নারীদের অধিকার
আফগানিস্তানে গত অগাস্টে তালেবান আবার ক্ষমতাদখলের পর তারা নারীদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ নারী তাদের আগের কাজের জায়গায় ফিরে যেতে পারেননি। মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ কমেছে। মেয়েদের অনেক সেকেন্ডারি স্কুলই বন্ধ হয়েগেছে। কিছু এলাকায় স্থানীয় তালেবান নেতা মেয়েদের স্কুল খুলিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ আগের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে।
যে সব নারী নিজেদের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাদের তালেবানি সহিংসতার মুখে পড়তে হয়েছে।
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
উচ্চাকাঙ্খী চিকিৎসকরা
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’জন নারী মেডিসিন শিক্ষার্থীকে দেখা যাচ্ছে এক অধ্যাপকের সঙ্গে মানবদেহের একটি অংশ পরীক্ষা করতে৷ ছবিটি ১৯৬২ সালে তোলা৷ সে’সময় আফগান সমাজে নারীদের একটি সক্রিয় ভূমিকা ছিল৷ তখন তাঁদের শিক্ষার সুযোগ যেমন ছিল, তেমনই বাড়ির বাইরেও ছিল অবাধ বিচরণ৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
পাশ্চাত্যের পোশাক কাবুলের রাস্তায়
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে একটি রেডিও স্টেশনের বাইরে হাঁটছেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরা দুই নারী৷ ১৯৬২ সালে তোলা ছবি এটি৷ কিন্তু উগ্র ইসলামপন্থি তালেবান গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতা গ্রহণের পর, সব কিছু বদলে যায়৷ আর সব কিছু ঢাকা যায়, এমন বোরকা পরে জনসমক্ষে যেতে বাধ্য করা হয় নারীদের৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
সবার জন্য সম অধিকার - সবসময় নয়
গত শতকের সত্তরের দশকে আফগান শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে মেয়েদের বিচরণ স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল৷ কিন্তু তার মাত্র ২০ বছর পর শিক্ষাকেন্দ্রে মেয়েদের যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়৷ ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর পরিস্থিতি আবার কিছুটা বদলেছে৷ ২০০৩ সালে আফগান সংবিধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
কাবুল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে আফগান শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন একজন সোভিয়েত প্রশিক্ষক৷ ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত – অর্থাৎ এই দশ বছর আফগানিস্তান সোভিয়েতদের দখলে ছিল৷ তাই সেই সময়টায় আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বহু অধ্যাপক অধ্যাপনা করেছেন৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা
১৯৮১ সালে তোলা এই ছবিটিতে আফগান ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে৷ ১৯৭৯ সালে সোভিয়েতরা আফগানিস্তানে হামলা চালালে যুদ্ধ শুরু হয় এবং তা দশ বছর ধরে চলে৷ পরবর্তীতে, ১৯৮৯ সালে, সোভিয়েতরা দেশটি ছেড়ে গেলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় আফগানিস্তানে৷ এই গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৬ সালে, তালেবানের ক্ষমতাগ্রহণের মধ্য দিয়ে৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
সবার জন্য স্কুল
সোভিয়েতদের অধিকৃত আফগানিস্তানের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছবি এটি৷ তবে তালেবানের শাসনামল শুরু হওয়ার পর আফগান মেয়েদের স্কুলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়৷ এমনকি বাড়ির বাইরে কাজ করাও নিষিদ্ধ ছিল তাঁদের৷
-
আফগান নারীদের সোনালি অতীত
তেমন কিছু বদলায়নি
এই ছবিটি ১৯৮১ সালে তোলা৷ হিজাব, বোরকা ছাড়া এক মা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন৷ এমন দৃশ্য এখন আর আফগানিস্তানে দেখা যায় না৷ এমনকি তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ১৫ বছর পরেও না!
লেখক: এসথার ফেল্ডেন / এসআরআই / এআই
গত সপ্তাহে তালেবান বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ছবি ঢেকে দিয়েছে।
নতুন নিয়মের সমালোচনা
আফগানিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের অধ্যাপক হারুন রহিমি তালেবানের এই নতুন নির্দেশের সমালোচনা করে বলেছেন, এর ফলে মেয়েদের সমস্যায় পড়তে হবে এবং প্রকাশ্য স্থানে তাদের নিরাপত্তা কমবে।
জিএইচ/এসজি (এএফপি, ডিপিএ)