1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মোদী নয়, জাতির জনক অবশ্যই মহাত্মা গান্ধী’

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২ অক্টোবর ২০১৯

নরেন্দ্র মোদীকে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন ‘ভারতের পিতা’৷ তারপর ভারতের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বললেন, যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর এই তকমায় বিশ্বাসী নন, তাঁরা ভারতীয় নন৷ জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষে এ নিয়ে চলছে বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/3QdTv
ছবি: Payel Samanta

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রণী নেতা৷ ব্রিটিশ শাসন থেকে দেশকে মু্ক্ত করার লক্ষ্যে বিপ্লবীদের সহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি কংগ্রেসের নরমপন্থি ধারাটিও সক্রিয় ছিল৷ অহিংস পথে স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা ছিলেন গান্ধীজি৷ মহাত্মাকে প্রথমে জাতির জনক বলে সম্বোধন করেন স্বাধীনতা আন্দোলনের আরেক প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু৷ ১৯৪৪ সালের ৬ জুলাই একটি ভাষণে নেতাজি এই সম্মান জানান গান্ধীজিকে৷ তারপর থেকে মহাত্মা ‘জাতির জনক' হিসেবেই পরিচিত৷ কিন্তু, ২ অক্টোবর গান্ধীর জন্মের ১৫০ বছর উদযাপনের ঠিক আগে এ নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তিনি নরেন্দ্র মোদীকে ‘ফাদার অফ ইন্ডিয়া' বলে বসেছেন৷ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী৷ সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট মোদীর প্রশংসা করে বলেন, ‘‘মোদীর ব্যক্তিত্বে আমি মুগ্ধ৷ রাষ্ট্রনেতার এমনই হওয়া উচিত৷ উনি ভদ্রলোক ও মহান নেতা৷ ভারতের অবস্থা খুব রুগ্ন ছিল৷ অসন্তোষ ও দ্বন্দ্ব ছিল সেখানে৷ মোদী সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলেছেন৷ কারো প্রতি বৈষম্য করেননি৷ বাবা যেমন সবাইকে আগলে রেখে চলেন, মোদী সেভাবেই চলেছেন৷ উনিই ফাদার অফ ইন্ডিয়া৷'' 

‘‘গান্ধীজিকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়’’

বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধীদের প্রধান অভিযোগ, তারা ভেদাভেদের রাজনীতি করে৷ ধর্মকে হাতিয়ার করে নির্বাচনে সুবিধা নিতে চায়৷ সেই দলের শীর্ষ নেতাকে জাতির পিতা বলা যায় কিনা, অজান্তেই সেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ট্রাম্প৷ তাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মহাত্মাকে অপমান করার অভিযোগও উঠেছে৷ কিন্তু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংয়ের মন্তব্যে বিতর্ক আরো বেড়েছে৷ তিনি বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘যাঁরা বিদেশে থাকেন, তাঁরা ভারতীয় হওয়ার জন্য গর্বি৷। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বের জন্য এটা সম্ভব হয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে যদি কেউ গর্বিত না হয়, তা হলে তাঁর নিজেকে ভারতীয় ভাবা উচিত নয়৷''

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যে ফ্যাসিবাদী ঝোঁক দেখছে বামেরা৷ সিপিএম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘যেভাবে একটি সরকার সংবিধানের আদর্শ ধ্বংস করছে, সব জোর করে চাপিয়ে দিতে চাইছে, তা ফ্যাসিবাদের লক্ষণ৷ সবাইকে নিয়ে চলার যে কথা ট্রাম্প বলেছেন, তার উল্টোটাই হচ্ছে৷ এ দেশে গোয়েবলসের উত্তরসূরীরা জন্ম নিয়েছে এই শপথ নিয়ে যে, বারবার মিথ্যা বলে মানুষকে কোনো কথা বিশ্বাস করাতে হবে৷ মিথ্যাচারিতা ফ্যাসিস্টদের হাতে পড়লে কোন জায়গায় পৌঁছায়, সেটা বিজেপিকে দেখলে বোঝা যায়৷''

গান্ধী জাতির জনক কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক এর আগেও হয়েছে৷ ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লিখে এই প্রশ্নটি করে একটি মেয়ে৷ ১০ বছরের ঐশ্বর্য পরাশর জানতে চায়, মহাত্মাকে উপাধি কে দিলো৷ তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় ছিল৷ তারা নথি খতিয়ে দেখে বলে, সরকারিভাবে কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যদিও ইতিহাস বলছে, সুভাষচন্দ্র গান্ধীকে এই সম্মান দিয়েছিলেন৷  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক শিবাজীপ্রতিম বসুও মনে করেন, ‘‘জাতির জনক উপাধি গান্ধীর ক্ষেত্রেই যথার্থ৷ সেই জায়গায় মোদীকে বসানো হস্তীমুর্খের কাজ৷ কংগ্রেসের অভিজাত নেতৃত্বের কাছ থেকে গান্ধীজি স্বাধীনতা আন্দোলন পৌঁছে দিয়েছিলেন জনগণের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষকের মধ্যে৷ তিনি গণজাতীয়তাবাদ তৈরি করেছিলেন৷ এর ফলে সংগ্রাম গণআন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল৷ সে কারণে মহাত্মা জাতির জনক৷'' 

‘‘এ দেশে গোয়েবলসের উত্তরসূরীরা জন্ম নিয়েছে’’

বিজেপি সরকার এ বছর গুরুত্বের সঙ্গে মহাত্মার জন্মজয়ন্তী পালন করছে৷ মহা্ত্মাকে প্রণাম জানানো মোদীর বার্তা ২ অক্টোবর সকালে দেশবাসীর মোবাইলে পৌঁছেছে৷ এ দিন থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে স্বচ্ছতা অভিযানের নতুন পর্যায়৷

বিজেপি সরকারও গান্ধীজয়ন্তী সাড়ম্বরে উদযাপন করছে৷ তাহলে ফ্যাসিস্ট ঝোঁক বলা কি সঙ্গত? অধ্যাপক বসু বলেন, ‘‘গান্ধীজিকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়৷ কেউ কেউ বিক্ষিপ্তভাবে তাঁর বিরুদ্ধে বলেন না, এমন নয়৷ ছোটখাটো কোনো নেতা বিতর্কিত মন্তব্য করলে সেটাকে ব্যক্তিগত মত বলে চালানো হয়৷ এটা এক ধরনের হিসেবি ফ্যাসিবাদ, উদ্দাম নয়৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলেও ঘুরিয়ে ফ্যাসিবাদী প্রচার করা যায়৷ সেই বিপদ নেই তা বলা যায় না৷''