মুসলিমরা ইউরোপীয় সমাজে কতটা অন্তর্ভুক্ত?
ইউরোপ জুড়ে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট আন্দোলনদের সাফল্য থেকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ইসলাম পশ্চিমি গণতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খায় কিনা৷ এ বিষয়ে কিছু ভুল ধারণার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন৷
ভাষাগত অন্তর্ভুক্তি
জার্মানিতে জন্ম এমন মুসলিমদের তিন-চতুর্থাংশের প্রথম ভাষা হলো জার্মান৷ প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যে ভাষাগত দক্ষতা বাড়তে থাকে, তা ইউরোপের অন্যত্রও পরিলক্ষিত হয়েছে৷ জার্মানিতে মুসলিমদের ৪৬ শতাংশ বলেন যে, জার্মান তাঁদের প্রথম ভাষা৷ সে অনুপাতে অস্ট্রিয়ায় ৩৭ শতাংশ ও সুইজারল্যান্ডে ৩৪ শতাংশ মুসলিম স্থানীয় ভাষাকে তাঁদের নিজের ভাষা বলেন৷
আন্তঃ-ধর্ম সম্পর্কের প্রতি মুসলিমদের মনোভাব
‘রিলিজিয়াস মনিটর’ সংস্থার ২০১৭ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, সুইস মুসলিমদের ৮৭ শতাংশ তাঁদের অবসর সময়ে অমুসলিমদের সঙ্গে নিয়মিত দেখাশোনা করে থাকেন৷ জার্মানি ও ফ্রান্সের ক্ষেত্রে তা ৭৮ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৬৮ শতাংশ ও অস্ট্রিয়াতে ৬২ শতাংশ৷ সব সামাজিক বাধা সত্ত্বেও প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে এই যোগাযোগ চলে আসছে৷
মুসলিমরা কি ইউরোপের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন?
ফরাসি মুসলিমদের ৯৬ শতাংশ তাঁদের দেশ, অর্থাৎ ফ্রান্সের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করেন৷ জার্মানি ও সুইজারল্যান্ডে এই অনুপাত আরো বেশি, সেখানে মুসলিমদের ৯৮ শতাংশ যে দেশে তাঁরা বাস করেন, সেই দেশের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত বলে মনে করেন৷ ব্রিটেনে কিন্তু মুসলিমদের একটি অপেক্ষাকৃত কম অংশ (৮৯ শতাংশ) যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সংযোগ অনুভব করেন৷
ইউরোপীয় মুসলিমদের জীবনে ধর্ম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
অভিবাসী মুসলিম পরিবারগুলোর স্বধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক প্রজন্ম প্রজন্ম ধরে অটুট থাকে৷ যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী মুসলিমদের ৬৪ শতাংশ নিজেদের খুব বেশিভাবে ধর্মপরায়ণ বলে বর্ণনা করেছেন৷ অস্ট্রিয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলিমের অনুপাত ৪২ শতাংশ, জার্মানিতে ৩৯ শতাংশ, ফ্রান্সে ৩৩ শতাংশ ও সুইজারল্যান্ডে ২৬ শতাংশ৷
কি পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ডিগ্রির জন্য পড়েন?
জরিপ অনুযায়ী, জার্মানিতে জন্ম নেয়া মুসলিমদের ৩৬ শতাংশ ১৮ বছরে পা দেবার আগেই পড়াশুনা সমাপ্ত করেন৷ অস্ট্রিয়ার ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৩৯ শতাংশ৷ ফ্রান্সে শিক্ষাব্যবস্থা অধিকতর সমতামূলক হওয়ার কারণে সেখানে মুসলিমরা শিক্ষাক্ষেত্রে লক্ষণীয় প্রগতি অর্জন করেন৷ ফ্রান্সে প্রতি ১০ জন মুসলিম ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র একজন ১৭ বছর হবার আগে স্কুল ছাড়ে৷
চাকরির বাজারে মুসলিমদের অনুপাত
২০১০ সলের আগে যেসব মুসলিম জার্মানিতে এসেছেন, তাঁদের প্রায় ৬০ শতাংশের আজ ফুলটাইম চাকরি আছে; আরো ২০ শতাংশ পার্টটাইম কাজ করছেন৷ অমুসলিমদের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান অনুরূপ৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশে পার্থক্য অনেক বেশি, যেমন ফ্রান্সে মুসলিমদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৪ শতাংশ, কিন্তু অমুসলিমদের ক্ষেত্রে মাত্র ৮ শতাংশ৷
ইসলামকে প্রত্যাখ্যান কতটা বিস্তৃত?
অস্ট্রিয়ায় চারজন অমুসলিমের মধ্যে একজন বা তার বেশি কোনো মুসলিম প্রতিবেশি চান না৷ যুক্তরাজ্যে এই হার ২১ শতাংশ৷ জার্মানিতে অমুসলিম উত্তরদাতাদের ১৯ শতাংশ বলেছেন যে, তাঁরা কোনো মুসলিম প্রতিবেশি কামনা করেন না৷ সুইজারল্যান্ডে এই অনুপাত হলো ১৭ শতাংশ ও ফ্রান্সে ১৪ শতাংশ৷ সব মিলিয়ে মুসলিমরা সর্বাধিক প্রত্যাখ্যাত সামাজিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে গণ্য৷
‘সমাজে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু স্বীকৃত নয়’
ব্যার্টেল্সমান নিধির যে জরিপটি থেকে এই ছবিঘরের তথ্যগুলি নেওয়া হয়েছে, সেটির নাম ‘ইউরোপীয় মুসলিম: সমাজে অন্তর্ভুক্ত কিন্তু স্বীকৃত নয়?’ জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ১০,০০০ মানুষকে নিয়ে জরিপ করে এই সব ফলাফল পাওয়া গেছে৷ যেসব মুসলিম উদ্বাস্তু ২০১০ সালের পরে ইউরোপে এসেছেন, তাদের এই জরিপে বিবেচনা করা হয়নি৷