মুখ্যমন্ত্রীকে চিকিৎসকরা, ‘অপরাধী, ধর্ষকদের পক্ষে থাকবো?’
২১ অক্টোবর ২০২৪দুই ঘণ্টা ধরে বৈঠক হলো। তারপরেও সরকার জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি মানেনি। স্বাস্থ্যসচিবকে সরাবার দাবি নিয়ে সরকার অনড় মনোভাব নিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আরজি করে ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করাটাও থ্রেট কালচারের উদাহরণ। তিনি বলেছেন, যদি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের দিয়ে পড়ুয়াদের খাতা পরীক্ষা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, অনেকে ১০ নম্বরও পাবেন না।
জুনিয়র ডাক্তাররা পাল্টা বলেন, আরজি করে যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তারা কুখ্যাত অপরাধী। তারা আরজি করে নারী নিগ্রহ, টাকা তোলা, যাবতীয় বেনিয়মের পিছনে ছিল। তাদেরকে সাসপেন্ড করে উচিত কাজ করেছেন প্রিন্সিপাল।
থ্রেট কালচার নিয়ে
সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত আলোচনা হয় থ্রেট কালচার নিয়ে। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় একসময় আরজি করের প্রিন্সিপালকে বলেন, ''আপনিও তো ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করেছেন। এ নিয়ে সরকারকে কিছুই জানাননি। এটা থ্রেট কালচার নয়?''
মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে বলেন, ''আমাকে তো কিছু জানান নি? আপনার তো প্রথমে প্রস্তাব পাঠানো উচিত ছিল স্বাস্থ্য দপ্তরকে। স্বাস্থ্য দপ্তর আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতো। তা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা কি আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?”
রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে মমতা বলেন, "আমি আপনাকে প্রিন্সিপ্যাল করেছি কেন, যাতে সবার দেখভাল করতে পারেন। আপনার কারোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ, রাগ, অভিযোগ থাকতে পারে। কিন্তু আপনি হঠাৎ করে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন? এটা থ্রেট কালচার নয়?”
সাসপেন্ড করাদের কুখ্যাত অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিরা বলেন, ''প্রশ্ন হলো, আমরা কার পক্ষে থাকবো, অপরাধীদের, ধর্ষকদের?''
তারা বলেন, ''আগের অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করতে গেলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো।'' মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''আমাকে জানাওনি কেন?'' জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ''বহুবার বলেছি। কিছুই হয়নি।''
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত বলেন, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাস সুস্থ জায়গা হতে হলে, সেখানে আমাদেরও থাকতে হবে। এক জন ছাত্র কলেজে প্রবেশের পর কী এমন ঘটছে যে সে পচা হয়ে উঠছে? ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুস্থ, স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।''
তারা বলেন, ''কিছু মানুষ মেয়েদের সঙ্গে যা করেছে, তা বলতে থাকলে আপনি মেয়ে হিসাবে মুখ দেখাতে পারবেন না। যদি আপনি প্রিন্সিপালের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন, তাহলে ধর্ষকদের সমর্থন করা হবে।''
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ
মমতা বলেন, ''আমি সব জানি। আমার কাছে লিস্ট আছে। স্ট্রাইকের জন্য দুই মাসে ৪৫০ কোটি টাকা চলে গেছে। বেসরকারি হাসপাতালে চলে গেছে।''
মুখ্যমন্ত্রা জানিয়েছেন, ''স্টেট টাস্ক ফোর্স এটাও দেখবে, যাকে গ্রামে পাঠানো হলো, তাকে কেন সপ্তাহে পাঁচদিন কলকাতায় দেখা যাচ্ছে?'' তার প্রশ্ন, ''উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে প্রিন্সিপালকে ঘেরাও করা হলো। একজনের জোর করে পদত্যাগপত্র নেয়া হলো, এটা থ্রেট কালচার নয়?''
জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ''ডায়মন্ডহারবারে হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হলো, এটা থ্রেট কালচার।'' তারা এর প্রতিবাদ করছেন।
তারা বলেছেন, ''সকলের খাতা পরীক্ষা করে দেখা হোক। আমরা তো এটাই চাই। যাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তারা কত নম্বর পায়, সেটা তখন দেখা যাবে।''
আবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''আমাদেরও কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে।''
বৈঠকে মতৈক্য
বৈঠকে যে বিষয় নিয়ে মতৈক্য হয়েছে, তা হলো, রাজ্য পর্যায়ে টাস্ক ফোর্স ও কলেজ পর্যায়ে কমিটিতে জুনিয়র ও সিনিয়র ডাক্তারদের দুই জন করে এবং পড়ুয়া ছাত্রীদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। সরকারের তরফে পাঁচজন থাকবেন।
জুনিয়র ডাক্তাররা এবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা এরপর কী করবেন, আন্দোলন চলবে না তা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
জিএইচ/এসিবি(বৈঠকের লাইভ স্ট্রিমিং)