বাংলাদেশে ইয়াবা ট্যাবলেট প্রধানত আসে মিয়ানমার থেকে৷ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) গত চার বছরে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৪৫ পিস উদ্ধার করেছে কক্সবাজারের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে৷ এর মধ্যে ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি৷ উত্তেজক এই ট্যাবলেট রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ এ জন্য জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক৷ এমনকি এটি খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত ডিলার রয়েছে৷
বাংলাদেশে মাদকের থাবা
বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত আট বছরে মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে শতকরা ৬০০ ভাগ বা ছয়গুণ৷
-
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
আফগানিস্তান
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আফিম চাষ হয় আফগানিস্তানে৷ জাতিসংঘের হিসেবে, প্রতি বছর প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন কাঁচা আফিম উৎপাদন হয় সেখানে৷ ন্যাটো বাহিনীর সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর আরো বেশি পরিমাণ জমিতে আফিমের চাষ হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়া হচ্ছে, আফগানিস্তানের আফিমের মূল ক্রেতা৷
-
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
কলম্বিয়া
কোকেন উৎপাদনে বিশ্বে সেরা কলম্বিয়া৷ জাতিসংঘের হিসেবে কলম্বিয়ায় প্রতি বছর তিন থেকে চার’শ টন কোকেন উৎপাদিত হয়৷ এছাড়া পেরু ও বলিভিয়াতেও কোকেনের চাষ হয়৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকা, উত্তর অ্যামেরিকা আর ইউরোপ কোকেনের সবচেয়ে বড় বাজার৷
-
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
মরক্কো
উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় দেড় হাজার টন মারিজুয়ানা ও হাশিশ উৎপাদিত হয়৷ যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে সীমিত আকারে মারিজুয়ানা বা গাঁজার ব্যবহার বৈধ করায় এর চাষ আরও বেড়েছে৷
-
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল
মাদক উৎপাদনে এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, লাওস আর থাইল্যান্ড ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত৷ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই তিন দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় এক হাজার টন আফিম উৎপাদিত হয়৷
-
মাদক উৎপাদনে শীর্ষ কয়েকটি দেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো
মেথাম্ফেটামিন বা ক্রিস্টাল মেথ হলো এক ধরণের মাদক, যেটা এক ধরণের সুখানুভূতি এনে দেয় বলে মনে করেন এর সেবনকারীরা৷ ইদানীং এই মাদক সেবনের হার বাড়ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ তবে কোন দেশে এটা সবচেয়ে বেশি তৈরি হয় তা জানা যায়নি৷ তবে ক্রিস্টাল মেথ ল্যাবেও তৈরি করা যায়৷ তাই সারা বিশ্বে পুলিশ এ ধরনের ল্যাবে অভিযান চালাচ্ছে৷ এ পর্যন্ত যত অভিযান হয়েছে, তার ৮০ ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর মেক্সিকোর ল্যাবে৷
লেখক: এএস/জেডএইচ (বিভিন্ন সূত্র থেকে)
অধিদপ্তরটির হিসাবে ২০০৮ সালে ৩৬ হাজার ৫৪৩টি, ২০০৯ সালে এক লাখ ২৯ হাজার ৬৪৪টি, ২০১০ সালে আট লাখ ১২ হাজার ৭১৬টি, ২০১১ সালে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ১৮৬টি, ২০১২ সালে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৯২টি, ২০১৩ সালে ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫২৮টি, ২০১৪ সালে ৬৭ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৮টি এবং ২০১৫ সালে ১ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৭৫টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়েছে৷
বাংলাদেশে ইয়াবার পরই মাদক হিসেবে বেশি ব্যবহার হয় কাফ সিরাপ ‘ফেনসিডিল'৷ ২০১৫ সালে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ৮৬ হাজার ৪২৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে৷ ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৪ বোতল৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় যে, মাদক হিসেবে ফেনসিডিলের ব্যবহার কমছে৷ অন্যদিকে বাড়ছে ইয়াবার ব্যবহার এবং সেটা খুবই দ্রুত গতিততে৷ যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিলেন, তারা ইয়াবার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন এবং তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন নতুন ইয়াবাসেবীরাও৷
বাংলাদেশে অন্যান্য মাদক যেমন গাঁজা, হেরোইন, আফিম এবং কিছু উত্তেজক ইনজেকশনের ব্যবহার আছে৷ গত বছর বাংলাদেশে কোকেন ধরা পড়লেও মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা বলছেন যে, দেশে এখনও কোকেনের ব্যবহার নেই৷ তবে পাঁচারের রুট হিসবে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশ৷ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে ৫ দশমিক ৭৪ কেজি কোকেন উদ্ধার করে৷ এছাড়া গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১০৭টি নীল রঙের সূর্যমুখী তেলের ব্যারেল জব্দ করেন৷ ঐ তেলের মধ্যে নাকি ৬০ থেকে ১০০ কেজি কোকেন মেশানো ছিল৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
মৃগীরোগ কমায়
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ২০১৩ সালেই জানিয়েছেন, মারিজুয়ানা বা গাঁজা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিলে মৃগী বা এ ধরণের কিছু স্নায়ুরোগ থেকে দূরে থাকা যায়৷ বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী জার্নাল অফ ফার্মাকোলজি অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল থেরাপিউটিক্স-এ ছাপাও হয়েছে তাঁদের এই গবেষণালব্ধ তত্ত্ব৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
গ্লুকোমা দূরে রাখতে সহায়তা করে
এই বিষয়টি তো প্রায় দশ বছর আগে জানা গেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আই ইন্সটিটিউট জানিয়েছিল মারিজুয়ানা গ্লুকোমার ঝুঁকিও কমায়৷ গ্লুকোমা চোখের এমন এক রোগ যা চির অন্ধত্ব ডেকে আনে৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
আলৎসহাইমার শত্রু
দ্য জার্নাল অফ আলৎসহাইমার’স ডিজিজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মারিজুয়ানা মস্তিষ্কের দ্রুত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়াও রোধ করে৷ আর এভাবে আলৎসহাইমার ঝুঁকিও কমাতে পারে মারিজুয়ানা৷ তবে মারিজুয়ানা ‘ওষুধ’ হলেই রোগ সারাবে, কারো নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তির পণ্য হলে নয়৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
ক্যানসারেরও ‘অ্যানসার’!
এই বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবেই স্বীকার করেছে৷ ২০১৫ সালে সে দেশের ক্যানসার বিষয়ক ওযেবসাইট ক্যানসার অর্গ-এ জানানো হয়, মারিজুয়ানা অনেক ক্ষেত্রে টিউমারের ঝুঁকি কমিয়ে ক্যানসার প্রতিরোধকেরও ভূমিকা পালন করে৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
কেমোথেরাপির ক্ষতি কম
ইউএস এজেন্সি ফর ড্রাগ জানিয়েছে, মারিজুয়ানা ক্যানসার রোগীর রোগযন্ত্রণা অন্যভাবেও কমায়৷ ক্যানসার রোগীকে এক পর্যায়ে কেমোথেরাপি নিতে হয়৷ কেমোথেরাপির অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া৷ মারিজুয়ানা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত অনেক ক্ষতি লাঘব করে৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
স্ট্রোক কম হয়
এটি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ নটিংহ্যামের গবেষকদের উদ্ভাবন৷ তাঁরা গবেষণা করে দেখেছেন, মারিজুয়ানা মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে৷ ফলে স্ট্রোক-এর ঝুঁকি কমে৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
গাঁজা মাল্টিপল সক্লেরোসিসবিরোধী
মানুষের স্নায়ুতন্ত্রে একটি বিশেষ স্তর ক্ষতিগ্রস্থ হলে ‘মাল্টিপল সক্লেরোসিস’ বা এমএস নামের এক ধরণের স্নায়ুরোগ হয়৷ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মারিজুয়ানা সেবন করলে এই রোগের ঝুঁকিও কমে৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
ব্যথা নিরোধ
ডায়াবেটিস চরম রূপ নিলে রোগীদের অনেক সময় হাত-পা এবং শরীরের নানা অংশে জ্বালা-যন্ত্রণা হয়৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা বলছেন, ক্যানাবিস সেই যন্ত্রণা লাঘব করতে সক্ষম৷
-
গাঁজা পরিমাণমতো সেবনে অনেক উপকার
হেপাটাইটিস ‘সি’-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমায়
হেপাটাইটিস সি-র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমায় মারিজুয়ানা৷ নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধের মতো গাঁজা সেবন করিয়ে দেখা গেছে এই রোগে আক্রান্তদের শতকরা ৮৬ ভাগেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেক কমেছে৷
লেখক: এএস/ এসিবি
বাংলাদেশে মাদক আসে যেখান থেকে
বাংলাদেশে ফেনসিডিল আসে সাধারণত ভারত খেকে৷ তবে ফেনসিডিল স্থানীয়ভাবেও তৈরি করেন মাদক ব্যবসায়ীরা৷ মাদ্রকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর প্রতিবছরই স্থানীয়ভাবে তৈরি করা ফেনসিডিল জব্দ করে৷ এ সব ফেনসিডিল প্লাস্টিকের কন্টেনারে ছিল৷ ২০১৫ সালে ৫ হাজার ৮৮ লিটার খোলা কন্টেনারজাত ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়৷
অপরদিকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসে প্রধানত মিয়ানমার থেকে৷ মিয়ানমারের মংডুতে বাংলাদেশ সীমানার ১০ কিলোমিটারের ভেতরে ইয়াবার কারাখানা আছে বলে জানা যায়৷ কক্সবাজার হয়ে আসা ইয়াবা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহণে কাজ করেন নিম্নবিত্তরা আর তা ব্যবহার করেন মধ্যবিত্ত ও উত্তবিত্তরা৷ সম্প্রতি অবশ্য কিছু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং নারীও ইয়াবা পাচারের সময় ধরা পড়েছে৷
বিজিবি-র টেকনাফ অঞ্চলের কমান্ডার আবুজার আল জাহিদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মিয়ানমার থেকে প্রশাসনিক উদ্যোগেই বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার করা হয়৷ আগে মংডু ধেকে ইয়াবা পাচার হতো৷ এখন একটি নতুন বন্দর সিটওয়ে (আকিয়াব) থেকে সমুদ্রপথে এই মাদকটি পাচার করা হচ্ছে৷ বাংলাদেশের অংশে প্রভাবশালী লোকজন, যেমন রাজনৈতিক নেতারাও এর সঙ্গে জড়িত৷ তাছাড়া মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের সহায়তায় ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে ইয়াবা৷''
গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সারাদেশে ৭৬৮ জন ইয়াবা পাচারকারীর তালিকা প্রকাশ করে৷ তালিকাভুক্ত অধিকাংশই কক্সবাজারের উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়ি ও টেকনাফের বাসিন্দা৷ কমান্ডার আবুজার আল জাহিদ জানান, ‘‘বাংলাদেশে ক্যারিয়ার হিসেবে প্রধানত নারী ও শিশুদের ব্যবহার করা হয়৷''
কারা মাদক গ্রহণ করে?
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা ৮০ লাখের কম নয়৷ আর তারা প্রায় সকলেই বয়সে তরুণ, ১৭ থেকে ৩৮বছরের মধ্যে৷
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বাংলাদেশে এখন ইয়াবাসেবী তরুণের সংখ্যা ৪০ লাখের কম নয়৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘এখন চিকিৎসা নিতে আসা মাদকসেবীদের ৮০ ভাগই ইয়াবা আসক্ত৷ এরা বয়সে তরুণ এবং অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল ঘরের সন্তান৷ তরুণীরাও এই মাদক গ্রহণ করছেন৷ ইয়াবার পর ফেনসিডিল ও গাজায় আসক্তের অবস্থান৷ তবে প্রধানত নিম্নবিত্তরাই এগুলিতে আসক্ত৷''
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
থাইল্যান্ডের পুনর্বাসন কেন্দ্র
থাইল্যান্ডে ফ্রা পুত্থাবাতের কাছে থামক্রাবক মঠ৷ এখানে মাদকাসক্তদের ভিন্ন উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ আধ্যাত্মিক ও প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তদের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়ার চেষ্টা করেন মঠের সন্ন্যাসীরা৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
বমনের মাধ্যমে শুদ্ধি
এখানে সাধারণত মাদকাসক্তদের ১০দিনের একটি কর্মসূচিতে রাখা হয়৷ তবে এর মধ্যে বহির্বিশ্বের সাথে মোকাবিলা করার ক্ষমতা গড়ে না উঠলে আরো দীর্ঘ সময় সেখানে থাকতে পারেন তারা৷ ভোর বেলা প্রত্যেককে একটি পানীয় খেতে বাধ্য করা হয়, যার ফলাফল বমি৷ মঠের সন্ন্যাসীদের মতে পানীয়টি খুবই বাজে, কিন্তু কার্যকর৷ এছাড়া মঠ ছাড়ার আগে প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে অঙ্গীকার করতে হয় যে, সে আর কখনো মাদক ছুঁয়ে দেখবে না৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আধ্যাত্মিক চেতনা
পেরুর আয়াহুয়াস্কা নিরাময় কেন্দ্রে প্রতি বছর কয়েক হাজার মানুষ প্রাকৃতিক উপায়ে মাদকাসক্তি থেকে মুক্তির চিকিৎসা নিতে যান৷ সেখানকার আদিবাসীদের বিশ্বাস আয়াহুয়াস্কা প্রত্যেকের মধ্যে আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ ঘটিয়ে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি এনে দেয়৷ তবে পশ্চিমা চিকিৎসকদের মতে এ ধরনের চিকিৎসার ফলে ভয়ের স্মৃতি, বমি, প্রচুর ঘাম এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে৷ তাই বিশ্বের অনেক দেশে এখন আয়াহুয়াস্কা নিষিদ্ধ৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
ধর্মীয় পন্থা
ব্রাজিলের রিও ডি জানেরোর পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি৷ এখানে আধ্যাত্মিক উপায়ে চিকিৎসা করা হয়৷ প্রতিদিন সকালে সব মাদকাসক্ত ব্যক্তি জড় হয়ে ঈশ্বরের বন্দনা করেন৷ প্রত্যেককেই একটি গির্জার পাশে থাকতে দেয়া হয়৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
শিকল বেঁধে চিকিৎসা
এই ব্যাক্তির নাম আমানউল্লাহ, যাকে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে জালালাবাদে একটি মাজারে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে৷ এখানে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করা হয়৷ শিকল দিয়ে ৪০ দিন বেঁধে রাখা হয় তাদের৷ খেতে দেয়া হয় একটু রুটি, অল্প পানি আর একটু মরিচের গুড়া৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
আধ্যাত্মিক সাহায্য
মীর আলী বাবা, যাঁর নামে এই মাজার৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাদকাসক্তদের এখানে এভাবে বেধে রাখার ফলে আলী বাবা তাদের এই আসক্তি থেকে বের হতে সাহায্য করেন৷ এই ধারণা কেবল আফগানিস্তানেই নয় বিশ্বের অনেক স্থানে রয়েছে৷ কিছু স্থানে মাদকাসক্তদের শাস্তি দেয়া হয়, এমনকি হত্যা করাও হয়৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
শ্রমিক শিবির
চীনে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন হয় জেলখানায়৷ কারাদণ্ড হওয়ার পর ঐ ব্যক্তিকে নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হয়৷ কোকেইন, হেরোইন বা মারিজুয়ানা নিয়ে কেউ ধরা পড়লেও একই শাস্তি৷ তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, চীন মাদকাসক্তদের ক্লিনিকগুলোকে শ্রমিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে৷ অর্থাৎ তাদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেয়৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
মৃত্যু অভিজ্ঞতা
কিরঘিজস্তানে যে পুনর্বাসন পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা ভয়াবহ৷ এটাকে বলা হয় ‘কোমা চিকিৎসা’৷ মাদকাসক্তদের একটি ইনজেকশন দেয়া হয় যার প্রভাবে তারা কয়েক ঘণ্টা কোমা’র মতো অবস্থায় থাকে৷ এরপর যখন তারা ঘুম থেকে জেগে ওঠে তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায় বলে বিশ্বাস সেখানকার মানুষের৷ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর ব্যাপক সমালোচনা করেছেন৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
বিলাসবহুল পন্থা
অনেক তারকারা মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বিলাসবহুল পথ বেছে নেন৷ সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্ধতিটি হয় অ্যামেরিকার বেটি ফোর্ড ক্লিনিকে৷ এখানে বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও অভিনেতারা চিকিৎসা করান৷ এই ক্লিনিকে এমন কিছু সুযোগ সুবিধা থাকে যাতে আপনার মনে হবে আপনি একটি বিলাসবহুল হোটেলে আছেন৷
-
বিশ্বের অদ্ভুত সব মাদক নিরাময় কেন্দ্র
সবার চিকিৎসার সুযোগ নেই
বিশ্বের বেশিরভাগ মাদকাসক্তের চিকিৎসার সুবিধা নেই৷ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী, সে দেশের মাত্র ১০.৪ শতাংশ মাদকাসক্ত ব্যক্তি চিকিৎসার সুবিধা পান৷ গরীব দেশগুলোতে এ অবস্থা আরো শোচনীয়৷
লেখক: ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি/এপিবি
ডা. তাজুল ইসলামের কথায়, ‘‘ইয়াবা সেবনে শরীরে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়৷ সেবনের পর প্রথমে মনে হয় যেন শরীরে অনেক শক্তি এসেছে, সব ক্লান্তি কেটে গেছে৷ আসলে এটি একটি উত্তেজক মাদক৷ দীর্ঘমেয়াদে এটি পুরো স্নায়ুতন্ত্রের ওপর অসম্ভব খারাপ প্রভাব ফেলে৷ স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কাঠামো ও কার্যক্রম নষ্ট করে দেয় ইয়াবা৷ এমনকি এ ধরনের মাদকের প্রভাবে অনেক সময় মানুষ বদ্ধ পাগলের মতো আচরণ করে (সাইকোসিস সিনড্রম), যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের (স্ট্রোক) ঝুঁকিও তৈরি হয়৷''
মাদক পাচারের রুট বাংলাদেশ
গত বছরের মে মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়া কোকেনের চালানটির গন্তব্য ছিল বাংলাদেশের প্রতিবেশী একটি দেশ৷ চালানের কাগজ-পত্র থেকে জানা যায়, চালানটি ভারতের যে কোনো বন্দরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল৷ জাতিসংঘ মনে করছে, দক্ষিণ এশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে আরও প্রচুর কোকেন পাচার হচ্ছে, যা ধরাই পড়ছে না৷ ল্যাটিন অ্যামেরিকার একটি সংঘবদ্ধ চক্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে নিজেদের চোরাচালানের রুট আড়াল করতেই দক্ষিণ এশিয়াকে পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করছে৷ এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থার সুযোগ নিয়েই এ কাজ করছে তারা৷ তাই বাংলাদেশকেও তাদের মাদক চোরাচালনের রুটে পরিণত করছে৷
আপনার কী মনে হয়? বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা কি সত্যিই মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত?