মাজার-দরবারে হামলার প্রতিবাদে ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’
মাজার-দরবারে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকায় ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’ করেছেন পীর, ফকিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা৷
বিক্ষোভ মিছিল
মাজার-দরবারে হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকায় ‘গণপ্রতিরোধ যাত্রা’ করেছেন পীর, ফকিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা৷ মিছিলটি হাইকোর্ট মাজার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়৷
স্বারকলিপি প্রদান
বিক্ষোভ মিছিলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করেন৷ বিক্ষোভ শেষে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন৷
‘হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
মিছিলে অংশ নেওয়া গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘আমরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি নতুন দেশ পেয়েছি৷ সেটাকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে৷’’ মাজার-দরবারে হামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন তিনি৷ এই সরকার শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনো ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন সাকি৷
ক্ষতিপূরণ দাবি
গোলাপশাহ মাজারের প্রতিনিধি নুরি পাগল নুরি বলেন, ‘‘ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম৷ আমরা শান্তি চাই৷ আমরা কোনো মাজার ধ্বংস চাই না৷ যে সকল মাজার ধ্বংস হয়েছে ও যারা আহত হয়েছেন, তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করছি৷’’
‘ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে’
শিল্পী অরুপ রাহী বলেন, ‘‘গণঅভ্যুত্থানের মাধমে এদেশে মানুষের মধ্যে যে বন্ধন তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে৷ যারা ষড়যন্ত্র করে মাজার ধ্বংস করছে, সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে, মানুষের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার মাধ্যমে সেসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে৷’’
স্লোগান
মিছিল থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়৷ যেমন ‘মাজারে হামলা চলবে না, দেশটা কারো বাপের না’, ‘মব জাস্টিস চলবে না, দেশটা কারো বাপের না’, ‘মাজারে হামলা করে, সরকার কী করে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি৷
‘থাকার জায়গা থাকবে না’
আব্দুল হক (পাগল হক) বলেন, ‘‘আমি পাগল, আমার কোনো থাকার জায়গা নেই৷ আমি মাজারে থাকি, সেখানে অনেক সময় খাবার দান করে অনেকে, আমি সে খাবার খেয়ে মাজারে বসবাস করি৷ এখন যদি মাজার ভেঙে ফেলে তাহলে আমার থাকার জায়গা থাকবে না৷ আমি চাই মাজার না ভেঙে সেখানে আমাদেরকে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হোক৷’’
শান্তিতে বাস করার অধিকার দাবি
সুরেশ্বর দরবার শরীফের মোঃ ফজল হক বলেন, ‘‘আমাদের একটাই দাবি, মাজারে যেন হামলা না হয়, আমরা যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারি৷’’
‘পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির কাজ’
কবি, প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘‘মাজার ভাঙা পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির কাজ৷ তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র করে এটা প্রমাণ করতে চায়, এ সরকার আসার কারণে এমনটা ঘটছে৷’’
পাঁচ দাবি
সাংস্কৃতিক সংগঠন সমগীতের সদস্য ও শিক্ষক বিথী ঘোষ গণপ্রতিরোধ যাত্রার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি পেশ করেন৷ এর মধ্যে রয়েছে হামলায় জড়িতদের বিচার, মাজার ও দরবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভেঙে ফেলা মাজার পুনরায় নির্মাণ, হামলায় আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ, নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ‘সম্মানজনক’ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, মব জাস্টিস, মোরাল পুলিশিং, নারীবিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি৷
প্রতিবাদ, বিক্ষোভের প্ল্যাকার্ড
গণপ্রতিরোধ যাত্রায় অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে৷ সেসবে লেখা ছিল ‘হামলাকারীকে লাল কার্ড, সরকারকে হলুদ কার্ড’, ‘বহু মত বহু পথের বাংলাদেশ’, ‘মাজার-দরবারে সুরক্ষা সরকারকেই দিতে হবে’, ‘ফ্যাসিবাদী হামলা রুখে দাঁড়াও বাংলা’, ‘মব জাস্টিস চলবে না’ প্রভৃতি৷