মরক্কো: বন্যায় সাহারা মরুভূমিতে হৃদ

বালির ঢেউয়ের ফাঁকে আপনি যা দেখছেন তাকে মরিচীকা ভেবে ভুল করবেন না৷ সেপ্টেম্বরের শুরুতে উত্তর-আফ্রিকার সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন দেশ মরক্কোর উপর দিয়ে বয়ে যায় সাইক্লোন৷ সাইক্লোনের সাথে হওয়া ভারি বৃষ্টিপাতের পর পানি জমে তৈরি হয়েছে এমন পরিবেশ, যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন৷ কোনো কোনো এলাকায় নাকি আট ইঞ্চি পর্যন্ত বর্ষণ হয়েছে, যা এই অঞ্চলের এক বছরের বৃষ্টিপাতের সমান৷

এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই খেঁজুর গাছগুলো যেন পানিতে গলা ডুবিয়ে আছে৷ ওপর থেকে নেওয়া মনোহর এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মরুভূমি আর পানির বন্ধুত্ব৷ যেন মিলেমিশে আছে৷ এরই মাঝে সাহারায় তৈরি হওয়া এমন হৃদের নামকরণও শুরু হয়েছে৷ যেমন ছবির এই হৃদটির নাম লেক ইয়াসমিন৷

সাহারা মরুভূমিতে পানি জমে এমন হৃদের সৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি ইতিহাসের মতোই৷ একদিকে যেমন ঐতিহাসিক বিষয় অন্যদিকে অপার সৌন্দর্য৷ আর এসব দেখতে ভিড় করছেন পর্যটকেরাও৷ ‘‘সাম্প্রতিক এই বৃষ্টিতে আমরা অত্যন্ত খুশি,’’ বললেন ট্যুর গাইড ইউসেফ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকে ‘আকাশ থেকে আসা আশীর্বাদ’ বলেই উদযাপন করছেন৷

উপর থেকে তোলা এই ছবিটি দেখুন৷ বালিয়াড়ির বাঁকে তৈরি হওয়া লেকটি দেখে মনে হচ্ছে যেন চিত্রশিল্পী সালভাদর ডালির আঁকা কোনো ছবি কিংবা বাস্তবতার বাইরের জগতের কোনো দৃশ্যপট৷

এমন বৃষ্টি সাহারার এই অঞ্চলে খুব একটা দেখা যায় না৷ মরক্কোর আবহাওয়াবিদ হোসাইনি ইয়োয়াবেব বলেন, ‘‘গত ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আমরা এমন বৃষ্টিপাত দেখিনি৷’’

মরক্কোর উত্তরাঞ্চলে গত ছয় বছর ধরে টানা খরা চলছিল৷ এবারের বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার ইরিকুই হৃদ পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠেছে৷ গত ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো লেকটি এতে পানির দেখা পেলো৷

ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল৷ বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ১৮জন প্রাণ হারিয়েছেন৷

মরক্কোর জলবায়ু বিজ্ঞানী ফাতিমা দ্রিয়োয়েচ বলেন, ‘‘সব কিছুই বলছে যে, এগুলো পরিবেশ পরিবর্তনের লক্ষণ৷’’ মরক্কোর আবহাওয়া দপ্তর বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে এই অঞ্চলে ঘন ঘন ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে৷ তবে পরিপূর্ণ গবেষণা ছাড়া এমন মন্তব্য করা যাবে না বলে মনে করেন ফাতিমা৷