মতবাদের পার্থক্য, হত্যা
২৮ আগস্ট ২০১৪ফারুকীর হত্যাকারীকে ধরতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে (আল্টিমেটাম) দিয়েছে ইসলামী ছাত্র সেনা৷ সকালে শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম শহরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ হয়েছে৷ রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে নিজ বাসায় বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী খুন হন৷ দুর্বৃত্তরা বাসায় ঢুকে হাত-পা বেঁধে তাঁকে গলা কেটে খুন করে৷ ফারুকী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের (মতিন) সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও আহলে সুন্নাতের নেতা ছিলেন৷ এ ছাড়া তিনি ইসলামিক মিডিয়া নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন৷
সামহয়্যার ইন ব্লগে সোহান চৌধুরী লিখেছেন,‘‘একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ শুরু হবার পূর্বেই অতি উত্সাহী কিছু মানুষ এর ওর ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন৷ মূর্খতারও একটা সীমা থাকা উচিত৷ তদন্তই শুরু হলো না, এমনকি ফারুকী সাহেবের পরিবারের সদস্যরাও এখনো জানেন না কারা এবং কেন ফারুকী সাহেবকে হত্যা করা হয়েছে৷ অথচ রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এক শ্রেণির ছাইপাঁশ লোকেরা কিছু না জেনেই অনুমান করে বলে দিচ্ছেন অমুক হত্যা করেছে তমুক দল জড়িত! এইসব লোকের এহেন অপরিণামদর্শী প্রচার প্রচারণা একদিকে যেমন সুষ্টু তদন্তে কাজে প্রভাব ফেলবে, তেমনি যারা আসল খুনি তারাই অশনাক্ত এবং বিচারের বাইরে চলে যাবার সম্ভাবনা আছে৷''
আরমান অরণ্য লিংকন লিখেছেন,‘‘মাওলানা ফারুকীকে তাঁর নিজ বাসায় জবাই করে হত্যা করা হয়েছে৷ এই ঘটনায় যতটুকু না অবাক হয়েছি, তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছি এই হত্যাকাণ্ডকে ‘সহীহ' (সঠিক) বানানোর চেষ্টা দেখে৷ অনেকেই অনলাইনে অনেক কথা বলছেন তাঁর মতবাদ নিয়ে, কিন্তু মতবাদের ভিন্নতা কি খুন করে ফেলাকে সমর্থন করে? একটা মানুষের সাথে মতের মিল হলো না বলে খুন করে ফেলাটা কি ইসলামিক পন্থা? দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের পুরো জাতির একটা বিশাল অংশ মানসিকভাবে অসুস্থ৷ এরা হত্যাকে সমর্থনের একটা কারণ খুজতে চায়, ধর্ষণকে সমর্থনের একটা কারণ খুজতে চায়, দুর্নীতি-সন্ত্রাসকে সমর্থনের কারণ খুঁজতে চায়, ভিকটিমকে কোনো না কোনোভাবে দায়ী করার কারণ বের করার জন্য এরা সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে৷''
গোলাম দস্তগীর লিসানি এই হত্যার কথা উল্লেখ করে লিখেছেন,‘‘ঠিক ৭১ সনে বাংলাদেশের প্রতিটা শহরে যে ঘটনা ঘটতো, সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়েছে৷ ১৪ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনেও ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার বিরোধী পশুশক্তি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের যেভাবে হত্যা করেছিল, সেই ঘটনার ছায়া খেলে গেল৷ ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, উত্তর আফ্রিকার টিউনিশিয়া, লিবিয়া, বা মধ্য আফ্রিকার নাইজেরিয়ার দেশগুলোর মতো, মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মতো, আরব দেশগুলোর মতো মতবাদের নামে নিরস্ত্র অসহায় মানুষকে জবাই করে হত্যা করা বাংলাদেশেও শুরু হলো৷''
তিনিও আরমান অরণ্যের কথায় সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ‘‘মতবাদের পার্থক্যের কারণে মানুষকে হত্যা করা যায় না৷ ধর্মর নামে, ভাষা জাতি বর্ণের নামে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা যায় না৷ এই মধ্যপন্থি মানুষটা কোনোক্রমেই জামাত শিবির রাজাকার আলবদরের সাথে আপোষ করেননি৷ হেফাজতের নাটকে অংশ নেননি, বরং টেলিভিশনে, রেডিওতে মানুষকে সচেতন করেছেন৷ তিনি কোনোদিন অস্ত্র তুলে নিতে বলেননি, যুদ্ধ করতে বলেননি, আক্রমণ করতে বলেননি৷ যা তাঁর সত্য মনে হয়েছে, যা সত্য বলে তিনি জেনেছেন ৫৫ বছরের দীর্ঘ জীবনে, সেই কথাই বলেছেন৷ বাংলা মায়ের সাথে তিনি প্রতারণা করেননি, বাংলাদেশের সাথে ঘাতকতাকারীদের সাথে কোনোমতেই হাত মেলাননি৷''
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ