ভ্রাতৃত্বের সপ্তাহ!
২৩ মার্চ ২০১৪‘‘আমার কাছে অনেকেই মজা করে খেতে আসেন৷ ইহুদি, খ্রিষ্টান যে ধর্মের অনুসারীই হোন না কেন, আমার ইহুদি- ইসরাইলি খাবার তাঁরা পছন্দ করেন'', বলেন এলিজাবেথ ভাইস৷ ৩৬ বছর ধরে কোলনের ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় – সিনাগগ কমিউনিটির কোশার খাবারের ক্যান্টিনটি পরিচালনা করছেন তিনি৷ তাঁর রন্ধনশিল্প আকৃষ্ট করে অতিথিদের৷ ইদানীং অনেকেই আসছেন এই খাবার খেতে৷
নানা ধরনের অনুষ্ঠান
এই সিনাগগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ নানা বয়স, ধর্ম ও শ্রেণির লোকজনকে ঘুরিয়ে দেখানো হয় প্রতিষ্ঠানটি৷
‘‘অন্যান্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান হয়৷ বিশেষ করে খ্রিষ্টান কমিউনিটির সঙ্গে সংলাপের ওপর জোর দেওয়া হয়৷'' বলেন সিনাগগের রাবিন শোরান এঙ্গেলমায়ার৷
সারা জার্মানিতে ৮০টি ইহুদি-খ্রিষ্টান মৈত্রি সমিতি রয়েছে৷ এদের মোট সদস্য সংখ্যা ২০ হাজার৷ বছরে একবার সমিতিগুলি ভ্রাতৃত্রের সপ্তাহ পালন করে৷ এবার অনুষ্ঠান ৯ই মার্চ শুরু হয়ে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চলেছে৷ মটো ছিল: স্বাধীনতা - বৈচিত্র্য - ইউরোপ৷
দেওয়া হয় সম্মাননা
এই উপলক্ষ্যে সম্মাননা দেওয়া হয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের৷ এই বছর সম্মাননা দেওয়া হলো হাঙ্গেরির লেখক ও প্রবন্ধকার গিয়্যোর্গি কনরাডকে৷ নিজ লেখার মাধ্যমে বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে ও মুক্ত সমাজব্যাবস্থার জন্য সোচ্চার হয়েছেন এই লেখক৷
মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয় জার্মানির কিল শহরে৷ এছাড়া নানা জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়৷ কোলন শহরে সাধারণত কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকে৷
প্রসঙ্গত, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের ব্যাপারে বিতর্ক সৃষ্টির কারণে রাজনীতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এই বছর৷ সেখানে জার্মানির সিন্টি ও জিপসি সম্প্রদায়ের প্রধান রোমানি রোসে জার্মানিতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন৷
সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ
‘‘যে সব মানুষ আমাদের কাছে এসেছেন তাঁদের প্রতি সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশ করতে চাই আমরা৷'' বলেন কোলনের খ্রিষ্টান ইহুদি মৈত্রি সমিতির প্রধান ও এসপিডি-র সক্রিয় সদস্য ইউর্গেন ভিলহেল্ম৷ তিনি আরো বলেন, ‘‘এই সব মানুষদের সম্পর্কে প্রায়ই সমালোচনা শোনা যায়, তাঁরা এখানে সামাজিক ভাতা ভোগ করতে এসেছেন৷ সামাজিক সিস্টেমে ঢোকাই তাঁদের লক্ষ্য৷''
ইহুদি কমিউনিটিতেও আলোচনার এক বড় বিষয় অভিবাসন৷ পূর্ব ইউরোপে লৌহ প্রাচীর ভেঙে পড়ার পর এই সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় অনেক গুণ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোলনের ইহুদি কমিউনিটিতে সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র কয়েকশ৷ ৮০-এর দশকে এই সংখ্যা হাজার খানেক হয়৷ ইতোমধ্যে এই শহরে ইহুদি জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৭,০০০-এর মতো হয়েছে৷ ১০ লক্ষ বাসিন্দার শহর কোলনে এই সংখ্যাটা অবশ্য নগন্য৷
এছাড়া সমাজে ও কর্মক্ষেত্রেও এই অবস্থার প্রতিফলন দেখা যায়৷ অনেক জার্মানই ইহুদি সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেননি৷ এক্ষেত্রে কিছুটা আড়স্টতাও লক্ষ্য করা যায় তাঁদের মধ্যে৷
অনেকের কাছেই অপরিচিত
‘‘ইহুদি ধর্ম ও এই ধর্মের অনুসারীরা অনেকের কাছেই অপরিচিত৷ একটা বদ্ধমূল ধারণাও রয়েছে অনেকের মনে৷ এই সব দূর করার জন্যই আমরা সক্রিয়'', বলেন ইউর্গেন ভিলহেল্ম৷
কোলনে খ্রিষ্টান ইহুদি সমিতি বছরে ৮০টির মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে৷ এর মধ্যে মাত্র দু-তিনটি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে হয়৷ জার্মানির অন্যান্য স্থানেও ধর্মের চেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে৷
বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে ‘ভ্রাতৃত্বের সপ্তাহ'- এর মতো কর্মসূচির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা৷