ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে গেলেও এখনই করোনা প্যানডেমিক বা অতিমারী কাটার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস। তাঁর বক্তব্য, ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হয়ে গেলেও সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন ইত্যাদি বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে। সকলকে একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ডাব্লিউএইচও প্রধান। সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে আগামী দিনে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন তিনি।
প্রায় এক বছর হয়ে গেল, বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রকোপ চলছে। গত বছর এই সময়েই চীনে প্রথম করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছিল। চীন এখন অনেকটাই বিপদ কাটিয়ে উঠলেও ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার অবস্থা ভয়াবহ। ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। অ্যামেরিকায় রেকর্ড সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ডাব্লিউএইচও-র নিজস্ব হিসেবে শনিবার রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গোটা বিশ্বে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৯০৫ জন। তার আগের দিন আক্রান্ত হয়েছিলেন ছয় লাখ ৪৫ হাজার মানুষ। গত এক বছরে এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হননি।
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
উজলেম টুরেচি
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন ট্রায়াল
যাদের আগে কখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷ জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
১৬ হাজার কোটি টাকার চুক্তি
ফাইজার ও বায়োনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি, প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ৷ ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে কয়েক মাস সংক্রমণে ধীরগতি থাকার পর আবার দ্রুত হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ (কেএম)
ডাব্লিউএইচও প্রধান জানিয়েছেন, বিভিন্ন দেশে করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছে। আগামী বছরের গোড়ায় কিছু ভ্যাকসিন হয়তো বাজারে চলেও আসবে। কিন্তু সেই ভ্যাকসিন নিলেই করোনা সম্পূর্ণ ভাবে চলে যাবে এমন ভাবার কারণ নেই। ভ্যাকসিন আসার পরেও প্যানডেমিক থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে করোনাকালে যে নিয়মগুলো মানার কথা বলা হয়েছিল, তা ভ্যাকসিন পরবর্তী সময়েও মেনে চলতে হবে।
ডাব্লিউএইচও প্রধান জানিয়েছেন, সকলকে একসঙ্গে ভ্যাকসিন দেয়া হবে না। প্রথমে বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ধীরে ধীরে তা সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এবং কাজটি করতে বহু সময় লাগবে। ফলে এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ নেই। বস্তুত, যে ভাবে ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসেছে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা প্রকাশ তিনি। এ বারের পরিস্থিতি আগের চেয়েও কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অ্যামেরিকাতেও প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমণ। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণেও ফের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। ভারতে মাঝে সংক্রমণ খানিক কমলেও ফের বিভিন্ন রাজ্যে বাড়তে শুরু করেছে। শীত বাড়লে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেই মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এসজি/জিএইচ (এএফপি)