1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিয়েতনাম : স্বাধীনতার ৫০ বছর

সঞ্জীব বর্মন৭ মে ২০০৪

শুক্রবার ভিয়েতনামে পালিত হলো ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তি ৷ লাওস-এর সীমান্তে ডিয়েন বিয়েন ফু শহরের স্টেডিয়ামে প্রায় ২০,০০০ মানুষ ১৯৫৪ সালের ৭ই মে ফরাসি সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক পরাজয়ের ঘটনার কথা স্মরণ করেন৷

https://p.dw.com/p/DQ3R
ছবি: AP


প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও ডিয়েন বিয়েন ফু শহরের স্টেডিয়ামে ভিয়েতনামের জাতীয় সেনাবাহিনী যখন সগর্বে কুচকাওয়াজ করছিলো, তখন উপস্থিত জনতার অনেকেই চোখের জল সামলাতে পারেন নি৷ ঐ শহরেই ৫০ বছর আগের যুদ্ধের ফলে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিন নামে পরিচিত অঞ্চলে ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির চুড়ান্ত পরাজয় ঘটে৷ ১৮৮৫ সাল থেকে ফ্রান্স ঐ অঞ্চলে আধিপত্য বাড়াবার চেষ্টা চালিয়ে এসেছিলো এবং সফলও হয়েছিলো৷

সেই সময় যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আজ জীবিত এবং গতকাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন৷ ৫৬ দিনের অবরোধের পর ভিয়েত মিন বাহিনীর হাতে প্রবল পরাক্রমশালী ফরাসি শক্তি সেদিন আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়৷ তারপরই ফ্রান্স ঐ অঞ্চল ত্যাগ করে৷ কিন্তু যাবার আগে ভিয়েতনমাকে উত্তর ও দক্ষিণ - দু ভাগে বিভক্ত করে যায়৷ সেই সঙ্কটেরই জের ধরে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে উত্তর ভিয়েতনামের যুদ্ধ চলে৷ ১৯৭৫ সালে সায়গনের পতনের মাধ্যমে কমিউনিস্ট উত্তর ভিয়েতনাম-এর হাতে মার্কিন বাহিনীর পরাজয় হয়৷ বিংশ শতাব্দীতে ভিয়েতনামের ইতিহাসে ডিয়েন বিয়েন ফু-র এই ঘটনা এবং সায়গনের পতন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়৷

গতকাল ডিয়েন বিয়েন ফু শহরে ৯৩ বছর বয়স্ক অশীতিপর স্বাধীনতা সংগ্রামী জেনারেল ভো নুইয়েন গাপ ৫০ বছর আগের ঐ ঘটনাকে গোটা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেন৷ তাঁর মতে, ঐ ঘটনার মধ্যে দিয়েই সারা বিশ্বে সব উপনিবেশের মানুষের জয় হয়েছিলো৷ তাছাড়া কমিউনিস্ট ও জাতীয়তাবাদী বিদ্রোহীদের হাতে ইউরোপের অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তির পরাজয়ের ফলে পশ্চিমা বিশ্ব বেশ বড় রকমের একটা ঘা খেয়েছিলো বলা চলে৷ তবে সেই জয়েরও একটা বড় মূল্য দিতে হয়েছিলো৷ ফরাসি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ চালাবার অভিযোগে ভিয়েত মিন বাহিনী যে ১০,৬৮৩ জনকে আটক করেছিলো, তাদের মধ্যে মাত্র ৩,২৯০ জন জীবিত অবস্থায় তাদের মুক্তি পায়৷

৫০ বছর পর আজকের ভিয়েতনামের সঙ্গে ফ্রান্স - এমনকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেরও অনেক উন্নতি হয়েছে৷ গতকাল ডিয়েন বিয়েন ফু শহরে প্রায় ১২ জন ফরাসি সৈন্য সপরিবারে অংশ নেন, যাঁরা সেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন৷ তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ফরাসি দূতাবাসের দুজন কূটনীতিকও৷ তাঁরা নিহত ফরাসি সৈন্যদের জন্য তৈরি ছোট একটি স্মৃতিসৌধে গিয়ে সেখানে পুষ্পস্তবক রেখে আসেন৷ মিশেল মার্সজ়ালেক নামের এক ফরাসি বিমান চালক, যিনি ৫০ বছর আগে ডিয়েন বিয়েন ফু শহরে সক্রিয় ছিলেন, তিনি গতকাল সেখানে ফিরে গিয়ে বলেন, সবকিছুই পুরোপুরি বদলে গেছে৷ ৭৩ বছর বয়স্ক মার্সজ়ালেক সেসময়ে মোট ১১৫ বার বিমান চালিয়ে অবরুদ্ধ ফরাসি ঘাঁটিতে রসদ নিয়ে এসেছেন৷ আজ ঐ শহরে চারিদিকে হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকান ও ইন্টারনেট কাফে দেখে অত্যন্ত আশ্চর্য হয়েছেন৷

ঐ যুদ্ধে শুধুমাত্র ফরাসি সৈন্যরাই অংশ নেয় নি - বহুজাতিক ফরাসি বাহিনীতে ছিলো জার্মানি, ইটালি, উত্তর আফ্রিকা, থাইল্যান্ড - এমনকী ভিয়েতনামের কিছু সৈন্যও৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জাক শিরাকও প্যারিসে যুদ্ধের স্মরণে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন৷