ভিন গ্রহের বাইলস
সর্বকালের সেরা সিমোন বাইলস। টোকিও অলিম্পিকে মানসিক অবসাদে ভুগে পাঁচটা ইভেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়া এই জিমন্যাস্ট প্যারিসে ফিরেছেন রানির মতো। অলিম্পিকে ছয় সোনাসহ নয়টি পদক জেতায় সর্বকালের অন্যতম সেরার দাবিদারও তিনি।
দুইয়ে দুই
দলীয় অল-অ্যারাউন্ডের পর সিমোন বাইলস জিতেছেন ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ডের সোনা। এটা অলিম্পিকে বাইলসের ষষ্ঠ সোনা আর সবমিলিয়ে নবম পদক। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে ব্যক্তিগত অল-অ্যারাউন্ডে ৬২.৪১৬ পয়েন্ট পেলেও প্যারিসে বাজিমাত করেছেন ৫৯.৫৬৬ পয়েন্টেই।
৭২ বছর পর
১৯৫২ মেলবোর্ন অলিম্পিকে ৩০ বছর বয়সে অল-অ্যারাউন্ডে সোনা জিতেছিলেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মারিয়া গোরোখোভস্কিয়া। ৭২ বছর পর সবচেয়ে বেশি বয়সি হিসেবে এই ইভেন্টে সোনা জয়ের কীর্তি গড়লেন ২৭ বছরের বাইলস।
হীরের নেকলেসে বার্তা
দ্বিতীয় সোনা জয়ের পর ৫৪৬টি হীরে দিয়ে তৈরি ‘ছাগল’-এর লকেট পড়েছিলেন বাইলস। এর অর্থ ‘গোট’ বা গ্রেটেস্ট অব অলটাইম। বাইলস বোঝাতে চেয়েছেন তিনিই সর্বকালের সেরা। যদিও অলিম্পিকে ৯ সোনাসহ রেকর্ড ১৮টি পদক সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লারিসা লাতিনিনার।
সোনায় মোড়া ক্যারিয়ার
অলিম্পিকে বাইলসের নয় পদকের ছয়টিই সোনা। আর বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ৩০ পদকের সোনা রেকর্ড ২৩টি! মর্যাদার দুই টুর্নামেন্টে এমন সোনায় মোড়ানো ক্যারিয়ার নেই কারও। অলিম্পিকে রেকর্ড নয়টি সোনা জেতা লারিসা লাতিনিনার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপেও সোনা ঠিক নয়টি, যা যৌথ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (অন্য দুজন রাশিয়ার সভেৎলিনা খরখিনা ও রোমানিয়ার জিনা গোগেন) ।
লাতিনিনাকে ছোঁয়ার হাতছানি
লারিসি লাতিনিনার অলিম্পিকে রেকর্ড নয় সোনা জয়ের হাতছানি এখনও রয়েছে বাইলসের। ৩ আগস্ট তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ভল্ট ইভেন্টে। ৫ আগস্ট ফাইনাল আছে ব্যালেন্স বিম আর ফ্লোর এক্সারসাইজে। এই তিনটি ইভেন্টে জিতলে ছুঁয়ে ফেলবেন লাতিনিনাকে।
রিও’র পর টোকিও দুঃস্বপ্ন
২০১৬ রিও অলিম্পিকে ৪ সোনা জেতা বাইলস টোকিওতে মানসিক অবসাদে ভুগে নাম প্রত্যাহার করেন পাঁচটি ইভেন্ট থেকে। এর নাম টুইস্টিস, তাতে মাথার সঙ্গে শরীরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যায় বেকায়দায় ল্যান্ডিং হলে প্রাণও যেতে পারে। সতীর্থ আর কোচ তাই মেনে নেন বাইলসের সিদ্ধান্ত।
মানসিক সুস্থতার পথপ্রদর্শক
জিমন্যাস্টিকস মানেই একটা সময় ভাবা হতো শারীরিক সৌন্দর্য আর কসরতের খেলা। এখানে যে মানসিকভাবে ১০০ ভাগ সুস্থ থাকাটাও জরুরি সেটা বুঝিয়েছেন বাইলস। ১৯৯৬ অলিম্পিকে পদকজয়ী ডোমিনিক ডসন বলেছেন, “কোচেরা যা বলত তাই শুনতে হত আমাদের। বাইলস এর প্রতিবাদ করেছিল। প্রথম জিমন্যাস্ট হিসেবে কথা বলেছিল মানসিক সুস্থতা নিয়ে।”
শূন্য থেকে শুরু
টোকিওর ব্যর্থতা শেষে গলায় একটি ট্যাটু করান বাইলস যেখানে লেখা, “অ্যান্ড আই স্টিল রাইজ’’। এরপর প্রেমিক জোনাথনকে বিয়ে করে নতুন জিমন্যাস্টদের মতো জিমে শুরু করেন শূন্য থেকে। ২০১৬ সালের পর প্রথমবার অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে হওয়া ১১টি ক্যাম্পের সবগুলোতে। এমন কঠিন পরিশ্রমে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের পর সফল অলিম্পিকে।
পালাবদলের কাণ্ডারি
’৮০-৯০ দশকে জিমন্যাস্টিকসে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের দেখাই যেত না। যুক্তাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ তারকা গ্যাবি ডগলাস ২০১২ অলিম্পিকের অল-অ্যারাউন্ড সোনা জিতলেও তার চুল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বেশি! সেই মানসিকতা বদলে বাইলস বুঝিয়ে দিয়েছেন, খেলাটাই আসল গায়ের রং নয়। তাতে উৎসাহিত হয়ে জিমন্যাস্টিক্সে উঠে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েরা।
ছিলেন প্রতিবাদীও
টানা ১৯ বছর যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের জিমন্যাস্ট দলের চিকিৎসক ল্যারি নাসেরের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন দুই জিমন্যাস্ট। তাদের সমর্থনে সাক্ষী দেন ২৬৫ জন অ্যাথলেট, তাদের অন্যতম বাইলস। তিনি বলেছিলেন, “আমরা বুঝতেই পারিনি আমাদের সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। ১৩-১৪ বছরের মেয়েরা কী বুঝবে?’’ তার মানসিক অবসাদের পেছনে এটাও একটা বড় কারণ ছিল।
ছায়াসঙ্গী দাদা-দাদি
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর বাইলসদের চার ভাই-বোনকে নিয়ে যাওয়া হয় ফস্টার হোমে (শিশুরা সেখানে থাকে)। বাইলস ও আদ্রিয়াকে দত্তক নেন তাদেরই দাদা-দাদি রন ও নেলি। টোকিও অলিম্পিক থেকে নাম প্রত্যাহারের কথা সবার আগে নেলিকে ফোন করেই জানিয়েছিলেন বাইলস। এরপর থেকে ছায়াসঙ্গী হিসেবে থেকে বাইলসকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রেরণা জুগিয়েছেন তারা।