1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌সরকারি শিক্ষা কি উপযুক্ত?‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৫ অক্টোবর ২০১৭

বেসরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের মান উন্নত করতে চায় ভারতের কেন্দ্র সরকার৷ কিন্তু তার জন্য যে সরকারি প্রশিক্ষণ, তার মান ঠিক আছে তো?‌

https://p.dw.com/p/2lEc6
ছবি: P. Samanta

সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে শিক্ষার মান যাচাইয়ের একটা সরকারি উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ সেই সুবাদে মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ইত্যাদি রাজ্যে শিক্ষকদের পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে এবং তার শোচনীয় ফল সামনে আসছে৷ ইংরেজি, ভূগোল, ইত্যাদি বিষয়ে তো বটেই, সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষাতেও অনেক সময় অসাধারণ জ্ঞানের অভাব প্রকট হয়ে পড়ছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷ এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষায়, শিক্ষকদের মানে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বিহার এবং তার পরেই পশ্চিমবঙ্গ৷ এই রাজ্যের প্রায় ১৩ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার পড়ানোর কোনও প্রশিক্ষণই নেই৷ এবং এই তালিম না পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেশিরভাগই পড়ান বেসরকারি স্কুলে৷ অবশ্য এই রিপোর্ট নেহাতই সরকারি এবং সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ, বিতর্কের অবকাশ আছে৷ তবে মুক্ত বিদ্যালয়ের জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, সম্প্রতি তারা অপ্রশিক্ষিত প্রাইমারি শিক্ষকদের একটি ডিসট্যান্ট লার্নিংয়ের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করেছে৷ স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াতে গেলে একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার এই ডিপ্লোমা থাকা বাধ্যতামূলক করছে সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকদের ১২ দশমিক ‌৭ লক্ষ আবেদনপত্র জমা পড়েছে এই কোর্সে নাম নথিভুক্ত করতে চেয়ে৷ এর মধ্যে ৯ দশমিক ‌২৫ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাই বেসরকারি স্কুলের, আর বাকি ৩ দশমিক ‌৫ লক্ষ সরকারি স্কুলে পড়ান৷

‘আধুনিক পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই এগিয়ে’

কিন্তু বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক এবং তাঁদের পড়ানোর মান কি এতটাই খারাপ?‌ সত্যিই কি বাস্তব ছবিটা এরকম?‌ এই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল কলকাতার এক প্রথম সারির বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা তমালী বসুর কাছে৷ তিনি একেবারে অন্য কথা বললেন৷ তাঁর দাবি, সরকারি প্রশিক্ষণ না পেলেও ভালো বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রতিনিয়তই নানা ধরনের কার্যক্রম, কর্মশালার মধ্যে দিয়ে যান, যা তাঁদের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করে৷ আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে তাঁরা অনেক বেশি পরিচিত, যা সম্ভবত সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা নন৷ এ কারণে অভিভাবকরা সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি স্কুলের ওপরেই বেশি ভরসা রাখেন, নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যতের প্রশ্নে৷ সেই কারণেই সম্ভবত সরকারি রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে যে, সরকারি স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের ড্রপ আউট করা, অর্থাৎ স্কুলছুটের হার বেশি৷ তমালী বসু ডয়চে ভেলেকে বললেন, আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাই এগিয়ে আছেন৷

তাহলে সরকারি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়ার ফরমান বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা কীভাবে নিচ্ছেন?‌ তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী?‌ তমালী বসু জানালেন, বিশেষ করে বর্ষীয়ান শিক্ষক-শিক্ষিকারা ক্ষুব্ধ৷ কারণ, তাঁদের ক্ষেত্রে অর্জিত দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অনেক বছরের অভিজ্ঞতা৷ যাঁরা কোনও সরকারি প্রশিক্ষণ ছাড়াই বছরের পর বছর অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে পড়াচ্ছেন৷ আর তমালী বসুর প্রশ্ন, সরকারি তালিমে যদি ভালো শিক্ষকই তৈরি হবেন, তাহলে যেসব সরকারি স্কুলে তাঁরা পড়ান, সেসব স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট ভালো হয় না কেন?