ভারতে দামী গাড়ির বাজারের বিপুল সম্ভাবনা
১২ এপ্রিল ২০২৪বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে ভারতের গাড়ির বাজারে বর্তমান বৃদ্ধির হার বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি৷ সে দেশের শিল্পক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ কি সেই বাজারেই নির্ধারিত হবে? গাড়ি বিশেষজ্ঞ হিসেবে স্টেফান ব্রাৎসেল মনে করেন, ‘‘২০৩০-এর দশকে ভারত ‘নতুন চিন' হয়ে উঠতে পারে৷ অর্থাৎ এটা শুধু আগামী বছর কিছু আয় করার প্রশ্ন নয়৷ আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে মুনাফার কথা ভাবতে হলে এখনই ভারতে পা রাখতে হবে৷''
ফল্কসভাগেন গ্রুপ দুই দশক ধরে ভারতের বাজারে উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু সে দেশে বছরে এক লাখের খুব বেশি ভিডাব্লিউ মডেল বিক্রি হয় না৷ এ ক্ষেত্রে চীনের সঙ্গে কোনো তুলনাই হয় না৷ জার্মানির এই গাড়ি নির্মাতার বিক্রির প্রায় ৪০ শতাংশ চীনের ভাগে পড়ে৷
ভারত যে চীন নয়, সেটা অবশ্যই অজানা নয়৷ হোরমাজড সোরাবজি ভারতের অটোমোবাইল ক্ষেত্রের অন্যতম সেরা সাংবাদিকদের একজন৷ অটোকার ইন্ডিয়ার সম্পাদক হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘চীনে বিলাসবহুল গাড়ির বাজার সত্যি বিশাল৷ ভারতে বছরে বড়জোর ৪০ থেকে ৫০ হাজার এমন গাড়ি বিক্রি হয়৷ আমাদের সংখ্যা বাজারের নীচের স্তরেই সীমাবদ্ধ৷ সেখানে অত্যন্ত কম মুনাফার কারণে কোম্পানিগুলির তেমন আয় হয় না৷''
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে সস্তার মারুতি সুজুকি গাড়ি ভারতের বাজারে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে৷ সেখানে আরো বড় জার্মান গাড়ির সাফল্যের সুযোগ কম৷ ১৯৮১ সালে জাপানের সুজুকি ভারতের মারুতি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ শুরু করে৷ সেই কোম্পানি ভারতের সবচেয়ে বড় অটোমোবাইল নির্মাতা হয়ে উঠেছে৷
মারুতি সুজুকি কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক শশাঙ্ক শ্রীবাস্তব ভারতে জার্মান গাড়ি সম্পর্কে উৎসাহের অভাবের কারণ ব্যাখ্যা করলেন৷ তাঁর মতে, ‘‘ভারতে ইউরোপের নির্মাতাদের কয়েকটি মডেল গ্রাহকদের প্রয়োজনের সঙ্গে খাপ খায় না৷ তারা অন্যান্য দেশের জন্য ডিজাইন করা মডেল এখানে নিয়ে এসেছে৷ তাদের মৌলিক ইতিহাস অন্যান্য জায়গায় সাফল্যের উপর নির্ভরশীল৷''
সে কারণে ফল্কসভাগেন প্রথম বার শুধু ভারতের বাজারের কথা ভেবে চারটি মডেল ডিজাইন করেছে৷ সেগুলি হলো স্কোডা কুশাক, স্কোডা স্লাভিয়া, ভিডাব্লিউ টাইগান ও ভিডাব্লিউ ভার্টাস৷ ভারতীয়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, যেমন পেছনের সিটে বেশি জায়গা, হাই গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি৷
ভারতের অটোমোবাইল বাজারে বর্তমানে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে৷ সম্প্রতি এসইউভি গাড়ির উৎপাদন অনেক বেড়ে গেছে৷ সবার জন্য না হলেও সার্বিকভাবে ভারতে জীবনযাত্রার মান বেড়ে চলেছে৷ গাড়ি বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেটার ফিন্টল বলেন, ‘‘অটোমোবাইল শৃঙ্খলে তারা উপরের দিকে উঠবে৷ জনতার মডেল থেকে শুরু করে মিডল ক্লাস হয়ে আরো দামী গাড়ির চাহিদা বাড়বে৷ বিদেশি নির্মাতাদের হাতে উচ্চ মানের গাড়ি থাকায় তারা এর ফায়দা তুলবে৷''
কিন্তু বিদেশি গাড়ির উপর শুল্ক ও করের জটিল প্রণালীর কারণে ভারতে ইউরোপীয় গাড়ির দাম বেশ বেড়ে যায়৷ ভেহিকেল ক্লাস ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ভারতীয় উপাদানের অনুপাতের উপর সেই বাড়তি আর্থিক বোঝা নির্ভর করে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মরিয়া হয়ে ভারতের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চালাচ্ছে৷ কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চতুরভাবে অর্থনীতির রাশ নিজের হাতে রেখেছেন৷ পেটার ফিন্টল মনে করেন, ‘‘উন্মুক্ত ও খোলা বাজারের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য ও নিজস্ব শিল্পখাতের বৃদ্ধির কথা ভেবে সেটা করা হচ্ছে৷''
টাটা ও মহিন্দ্রের মতো ভারতীয় কোম্পানি ইলেকট্রোমোবিলিটির প্রতি পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তবে বিশেষ করে ব্যাটারি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভারত এখনো বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভরশীল৷ সে কারণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইলন মাস্কের মতো সহযোগীর প্রয়োজন৷ ভারতে টেসলা উৎপাদনের বিষয়ে বেশ কিছু কাল ধরে দুজনের মধ্যে আলোচনা চলছে৷
চীনের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা বিওয়াইডি-ও ভারতে গাড়ি তৈরি করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু ভারতের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের অবনতির জের ধরে সেই প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে৷
তাহলে কি ইউরোপের গাড়ি নির্মাতাদের জন্য ভারত এখন বড় সুযোগ এনে দেবে?
গেয়ারহার্ড সনলাইটনার/এসবি