ডিডাব্লিউ: ভারত কি সত্যিই আরো অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, নাকি পুরোটাই একটা মিডিয়া হাইপ?
শকুন্তলা বানাজি: এটা সত্যি যে, দঙ্গল বেঁধে মারা, অনলাইন ও অফলাইন প্রতিহিংসা, অসহিষ্ণু, আগ্রাসী আচরণের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন ইত্যাদির ঘটনা গত এক বছরে খুব বেড়েছে৷
ভারতে অসহিষ্ণুতা সম্পর্কে দেশি ও বিদেশি মিডিয়ায় কী ধরনের বিবরণ দেওয়া হচ্ছে?
ভারত জুড়ে যে সব সংঘাত ও নিপীড়ন চলেছে, তার কারণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক: শকুন্তলা বানাজি
ভারতীয় অথবা ইংরেজি ভাষায় ভারতের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া একটা বড় ভূমিকা নিয়েছে৷ অনেক মিডিয়া আউটলেট অসহিষ্ণু আচার-আচরণে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত, বিশেষ করে সেই সব সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যারা ‘‘এনকাউন্টার কিলিং'', নির্মমতা, দাঙ্গা ও দুর্নীতির প্ররোচনা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নির্দেশ কোথা থেকে এসেছে অথবা কে দিয়েছে, এই সব নিয়ে অনুসন্ধান করছেন৷ এই সব ইস্যুকে ‘হাইপ' না দিয়ে, সে বিষয়ে আলোচনাকে ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে ‘‘বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তির'' দোহাই দিয়ে৷ যে সব সাংবাদিক সমালোচনা করেন অথবা নিজেদের সততা বজায় রাখেন, তাদের ছাঁটাই করা হয়, অথবা মালিক ও সম্পাদকরা তাদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন৷
ভারতে অনৈক্য কি একটি সামাজিক সমস্যা, নাকি তার অন্যান্য অর্থনৈতিক কারণও আছে?
ভারত জুড়ে যে সব সংঘাত ও নিপীড়ন চলেছে, তার কারণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক৷ গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের জন্য বুনিয়াদি অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারা; আরো ৩০ কোটি মানুষকে এমন চরম দারিদ্র্য ও অধিকারহীনতায় রেখে দেওয়া যে, অনন্ত শ্রম, এমনকি শিশুশ্রম দিয়েও দু'বেলা পেট ভরানো সম্ভব হয় না – এটা শুধু কোনো একক সরকারের ব্যর্থতা নয়, এটা বিগত কয়েক দশক ধরে একের পর এক সরকারের ব্যর্থতা – সেই সঙ্গে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থার দায়িত্ব, যারা অর্থনৈতিক কাঠামো বদলের শর্ত দিয়ে এসেছে, বেসরকারি মালিকানা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে এসেছে৷
-
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
কিং খানের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
গত ২ নভেম্বর ছিল ‘বলিউড কিং’ শাহরুখ খানের ৫০তম জন্মদিন৷ জীবনের অর্ধ শতাব্দী পূরণ বলে কথা! বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত এ উপলক্ষ্যে অভিনন্দন এবং শুভকামনায় সিক্ত করেন শাহরুখকে৷
-
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
শাহরুখের সত্যি বয়ান
জন্মদিনে একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শাহরুখ৷ সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস নিয়ে হিন্দু মৌলবাদীরা যে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা ছড়িয়েছে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শাহরুখ বলেছিলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু আর হয়না৷ ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷’’
-
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
বিজেপিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সাক্ষাৎকারটি প্রচারের পরই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গব টুইটারে লিখে দেন,‘শাহরুখের হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’৷ সেই টুইট পরে প্রত্যাহার করে নিলেও বুধবার তিনি বলেছেন, ভারত অসহিষ্ণু হলে শাহরুখের মতো এক মুসলমান অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না৷’’ বিজেপির কয়েকজন নেতা শাহরুখকে ‘মুখ সামলে কথা বলা’র অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, মুখ না সামলালে শাহরুখের ছবি বয়কট করা হবে৷
-
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
জঙ্গি নেতার সঙ্গে তুলনা
শাহরুখের সমালোচনা করতে গিয়ে বিজেপির আরেক সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘শাহরুখ এখন হাফিজ সাঈদের ভাষায় কথা বলছেন৷’’ বলিউড ইতিহাসের অন্যতম সেরা সুপারস্টারের সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই তৈয়বার শীর্ষ নেতা হাফিজ সাঈদের তুলনা ভারতের সাধারণ মানুষ এবং শাহরুখ ভক্তদের আহত করেছে৷ সংবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের তেমন প্রতিক্রিয়াই জানাচ্ছেন সবাই৷
-
শাহরুখকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ বলল হিন্দু মৌলবাদীরা
শাহরুখের ধর্মনিরপেক্ষতা
ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবনে শাহরুখ খুবই উদার৷ তাঁর স্ত্রী গৌরির জন্ম হিন্দু পরিবারে৷ প্রেম করে বিয়ে করার পরেও শাহরুখ কখনো গৌরির ধর্ম বিশ্বাস বা ধর্ম চর্চায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ ভক্তদের কাছে ‘এসআরকে’ নামেও পরিচিত মুম্বই মহাতারকা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাঁর বাড়িতে নামাজ পড়া এবং পূজা করার ব্যবস্থা রয়েছে৷ ছবিতে স্ত্রী গৌরির সঙ্গে শাহরুখ৷
লেখক: আশীষ চক্রবর্ত্তী
...(অপরদিকে) ‘‘মেক ইন ইন্ডিয়া''-র মতো বিভিন্ন অভিযান (অসহিষ্ণু আচরণকে) জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের নামান্তর হিসেবে এক ধরনের বৈধতা দিয়েছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে, যারা বিজেপি ও মোদীকে সমর্থন করে থাকে৷....কাজেই গরিবির উল্লেখ করাটাই জাতীয়তা-বিরোধী; যারা আদিবাসীদের জমি নিয়ে দেশি কিংবা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেয়, তারাই হলো দেশপ্রেমী!
ভারতে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধির কারণ পাকিস্তানে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান, এ কথা বলা কি ঠিক?
না, আমি ঐ বিশ্লেষকদের সঙ্গে একমত নই৷....পাকিস্তানে ইসলামি জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছে একটা সম্পূর্ণ আলাদা ভূরাজনৈতিক আঙ্গিকে, এবং তার ফলে সরলমনা আন্তর্জাতিক মিডিয়া ভারতে হিন্দুত্ববাদী জঙ্গিবাদের উত্থান ও তার ফলশ্রুতি সম্যক উপলব্ধি করতে পারেনি৷
শকুন্তলা বানাজি লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্সের ডিপার্টমেন্ট অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর লেকচারার৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
চা ওয়ালা
১৯৫০ সালে গুজরাটের নিম্নবিত্ত এক ঘাঞ্চি পরিবারে জন্ম নেয়া নরেন্দ্র মোদী কৈশরে বাবাকে সাহায্য করতে রেল ক্যান্টিনে চা বিক্রি করেছেন৷ ঘাঞ্চি সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী ১৭ বছর বয়সে যশোদাবেন নামের এক বালিকার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়, যদিও বেশিদিন সংসার করা হয়নি৷ ছাত্র হিসেবে সাদামাটা হলেও মোদী বিতর্কে ছিলেন ওস্তাদ৷ ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস-এর প্রচারক হিসাবে রাজনীতির দরজায় পা রাখেন মোদী৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
গুজরাটের গদিধারী
১৯৮৫ সালে আরএসএস থেকে বিজেপিতে যোগ দেয়ার ১০ বছরের মাথায় দলের ন্যাশনাল সেক্রেটারির দায়িত্ব পান ১৯৯৫ সালে গুজরাটের নির্বাচনে চমক দেখানো মোদী৷ ১৯৯৮ সালে নেন দলের জেনারেল সেক্রেটারির দায়িত্ব৷ ২০০১ সালে কেশুভাই প্যাটেলের স্বাস্থ্যের অবনতি হলে দলের মনোনয়নে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আবির্ভূত হন নরেন্দ্র মোদী, যে দায়িত্ব তিনি এখনো পালন করে চলেছেন৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
দাঙ্গার কালিমা
মোদীকে নিয়ে আলোচনায় ২০০২ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ আসে অবধারিতভাবে৷ স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ সেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় গুজরাটে প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হন৷ মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি দাঙ্গায় উসকানি দেন৷ তিনি এ অভিযোগ স্বীকার করেননি, আদালতও তাঁকে রেহাই দিয়েছে৷ তবে দাঙ্গার পক্ষে কার্যত সাফাই গেয়ে, হিন্দুত্ববাদের গান শুনিয়েই তিন দফা নির্বাচনে জয় পান মোদী৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
রূপান্তর
দাঙ্গার পর নিজের ভাবমূর্তি ফেরানোর উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদী৷ একজন বিতর্কিত নেতার বদলে উন্নয়নের কাণ্ডারি হিসাবে তাঁকে প্রতিষ্ঠা দিতে শুরু হয় ‘গুজরাট মডেল’-এর প্রচার৷ ২০০৭ সালের পর নিজেকে একজন সর্বভারতীয় নেতা হিসাবে তুলে ধরতে নতুন প্রচার শুরু করেন এই বিজেপি নেতা, প্রতিষ্ঠা করেন ‘ব্র্যান্ড মোদী’৷গুজরাটের উন্নয়নের চিত্র দেখিয়ে কলঙ্কিত ভাবমূর্তিকে তিনি পরিণত করেন ভারতের ত্রাতার চেহারায়৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
ভারতের পথে পথে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে নরেন্দ্র মোদী পাড়ি দিয়েছেন তিন লাখ কিলোমিটার পথ৷ সারা ভারতে পাঁচ হাজার ৮২৭টি জনসভায় তিনি অংশ নিয়েছেন, নয় মাসে মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচ কোটি মানুষের৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসাবে শুরু করলেও এবার তিনি হিন্দুত্ব নিয়ে প্রচার এড়িয়ে গেছেন সচেতনভাবে, যদিও বাংলাদেশের মানুষ, ভূখণ্ড এবং ধর্ম নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতাদের বক্তব্য নতুন সমালোচনার জন্ম দিয়েছে৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
নতুন ইতিহাস
ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটই যে এবার ভারতে সরকারগঠন করতে যাচ্ছে, বুথফেরত জরিপ থেকে তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ ৬৩ বছর বয়সি মোদীর নেতৃত্বে এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি৷ ৭ই এপ্রিল থেকে ১২ই মে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৮১ কোটি ৪০ লাখ৷ তাঁদের মধ্যে রেকর্ড ৬৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ভোট দিয়েছেন৷
-
একজন নরেন্দ্র মোদী
শেষ হাসি
নির্বাচনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল – মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের অর্থনীতি নতুন গতি পাবে, গুজরাটের আদলে তিনি ভারতকে বদলে দেবেন৷ অবশ্য সমালোচকরা বলছেন, ‘কলঙ্কিত ভাবমূর্তি’ ঢাকতে এসব মোদীর ফাঁপা বুলি৷ তাঁর স্বৈরাচারী মেজাজ, শিক্ষা ও অর্থনীতির জ্ঞান নিয়েও ঠাট্টা-বিদ্রুপ হয়েছে৷ বলা হচ্ছে, ভোটাররা টানা তৃতীয়বার কংগ্রেসকে চায়নি বলেই বিজেপি জয় পেয়েছে৷ যদিও শেষ হাসি দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর মুখেই৷
লেখক: প্রতিবেদন: জাহিদুল কবির