1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভাঙা হলো বিসমিল্লাহ খানের বাড়ি

২১ আগস্ট ২০২০

সানাই সম্রাট বিসমিল্লাহ খানের বাড়ি ভেঙে ফেলা হলো। প্রবল নিন্দায় তাঁর অগণিত ভক্ত।

https://p.dw.com/p/3hHsr
ছবি: SAJJAD HUSSAIN/AFP/Getty Images

বারাণসীর ডালমান্ডির সরাই হারাহা। এখনও সেই গলিতে ঢুকলে ইতিহাস গ্রাস করে সংগীতপ্রেমীদের। দুই দশক আগেও এই গলিতে ঢুকলে বেহাগ রাগ ভেসে আসত কানে। ওই গলিরই তিনতলা একটি বাড়ির উপরতলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংগীত অভ্যাস করতেন সানাই সম্রাট বিসমিল্লাহ খান। গোটা পৃথিবী যাঁর সুরে পাগল। তাঁকে ঘিরে বসে থাকতেন শ্রোতা, ভক্ত আর ছাত্রছাত্রীরা। ১২ অগাস্ট ভেঙে ফেলা হলো সেই হেরিটেজ বাড়ি। অচিরেই সেখানে তৈরি হবে কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স। অথচ এত বড় খবরটা না কি জানাই ছিল না বারাণসীর প্রশাসনের।

বারাণসীর এই তিনতলা বাড়িটিই ছিল বিসমিল্লাহ খানের সব চেয়ে পছন্দের জায়গা। পৃথিবীর বহু দেশ তাঁকে সেখানে গিয়ে থাকার এবং সানাই শেখানোর অনুরোধ করেছে। কিন্তু বরাবরই বিসমিল্লাহ বলেছেন, বারাণসীর ওই বাড়ি ছাড়া তাঁর ঘুম আসে না। নিজের জায়গা ছেড়ে কোথাও চলে যাওয়ার কথা কল্পনাই করতে পারেন না তিনি। ওই বাড়ির, ওই তিনতলার ঘরেই ২০০৬ সালে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অনেকেই তার পর সেই ঘরটিতে বিসমিল্লাহ খানের নামাঙ্কিত মিউজিয়াম তৈরি করতে চেয়েছেন। কিন্তু রাজি হননি তাঁর নাতিরা। বিসমিল্লাহর সংগীত যাপন গ্রহণ করেননি নাতিরা।

কিছুদিন আগে দাদুর চারটি সানাই এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক নাতি। তাও মাত্র ১৭ হাজার টাকায়। পরে অবশ্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সেই সানাই উদ্ধার করেছিল। গ্রেফতার করা হয়েছিল এক নাতিকেও। কিন্তু তাতেও তাঁদের দমিয়ে রাখা যায়নি। স্থানীয় এক বাহুবলী রাজনীতিকের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন নাতিরা। গত ১২ অগাস্ট বাড়ির তিনতলা ভেঙে ফেলা হয়েছে। গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিসমিল্লাহ খানের ঘর। কিছু দিনের মধ্যেই সেখানে একটি বিশাল কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ার কথা। শোনা যাচ্ছে, ওই কমপ্লেক্সের অর্ধেক দোকান এবং ফ্ল্যাট পাবে বিসমিল্লাহর পরিবার। বাকি অর্ধেক থাকবে নির্মাণকারী সংস্থার। যা বিক্রি করা হবে।

স্বাভাবিক ভাবেই সানাই সম্রাটের বাড়ি ভেঙে ফেলার খবর প্রচার হতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগণিত বিসমিল্লাহ ভক্তের মধ্যে। ঘটনার নিন্দা করেছেন বিসমিল্লাহর এক ছেলে এবং পাতানো মেয়ে। বিসমিল্লাহর ছোট ছেলে নাজিম হুসেইন তবলাবাদক। বাবার বাড়ি ভেঙে দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করে তিনি বলেছেন, বারাণসীর প্রশাসনের কাছে তিনি আবেদন করেছেন, যাতে দ্রুত বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করা হয়। সংগীত শিক্ষার সূত্রেই বিসমিল্লাহ খান মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন সোমা ঘোষকে। সোমা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''বাবার ওই ঘর শুধুমাত্র একটি বাসস্থান নয়, আমাদের কাছে মন্দির। এ ঘটনা মেনে নিতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে আবেদন করছি, দ্রুত হস্তক্ষেপ করুন। বাড়িটি বাঁচান।''

বারাণসীর প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, বিসমিল্লাহর বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, এমন খবরই তাদের কাছে ছিল না। তবে হেরিটেজ রক্ষা আন্দোলনের কোনো কোনো কর্মীর প্রশ্ন, প্রশাসনকে না জানিয়ে ওই বাড়ি ভাঙা হয়েছে, এমন ভাবার কারণ নেই। বিষয়টির মধ্যে সম্ভবত রাজনীতির মহারথীরা আছেন। তাই বাড়ি ভাঙা আটকানোর সাহস দেখাচ্ছেন না কেউ।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই)