1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

ভগ্ন হৃদয় সত্যি বিপজ্জনক হতে পারে

১ অক্টোবর ২০২৪

হৃদযন্ত্রে আচমকা গোলোযোগ দেখা দিলে দ্রুত রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি৷ জার্মানির এক ফুটবল খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে প্রথমে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি দেখা গিয়েছিল৷

https://p.dw.com/p/4lH89
Symbolbild Herzschlag Herz EKG Stethoskop
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জাপানেই প্রথম ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের বর্ণনা করা হয়েছিলছবি: Fotolia/JohnKwan

আর্তুর আমব্রোজিক ফুটবল মাঠে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেন৷ তিনি যে আবার মাঠে বসে ফুটবল ম্যাচ দেখতে পাচ্ছেন, সেটা সত্যি আশ্চর্যের বিষয়৷ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে তিনি ট্রেনিং-এর সময় আচমকা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন৷ আর্তুর বলেন, ‘‘আমি কিছুই টের পাইনি, অনুভব করিনি৷ সেটা সাধারণ দিন ছিল৷ ট্রেনিংয়ে গেলাম৷ হঠাৎ এমনটা ঘটলো৷’’

হাসপাতালে ২৮ বছর বয়সি এই খেলোয়াড়কে সরাসরি কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ ডাক্তাররা যত দ্রুত সম্ভব তাঁর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ জানতে চেয়েছিলেন৷ তাঁরা হার্ট অ্যাটাক সন্দেহ করে তাঁর করোনারি ধমনীর ইমেজিং-এর ব্যবস্থা করেন৷ স্টুটগার্ট হাসপাতালের কর্মকর্তা প্রো. টোমাস নর্ট বলেন, ‘‘তাঁর সব করোনারি ধমনী দেখতে ভালোই ছিল৷ কোনো সংকোচন বা ব্লকেজ ছিল না৷ আমরা বিস্মিত হয়ে ভাবলাম, তাঁর ক্ষেত্রে কেন হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, অথচ করোনারি ধমনীগুলিতে সেই অনুযায়ী কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে না? এর পরেই আমরা ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম'-এর কথা ভাবলাম৷ আমরা তাঁর বাম দিকের ভেনট্রিকেলের ইমেজিং করে সেই রোগ শনাক্ত করলাম৷’’

‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম' বা ‘স্ট্রেস কার্ডিওমায়োপ্যাথি’-র ক্ষেত্রে বাম দিকের ভেনট্রিকেলের পাম্পিং-এর ক্ষমতা সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ অ্যাপেক্স সাধারণত বেলুনের মত প্রসারিত হয়৷ বাম দিকের স্বাভাবিক ভেনট্রিকেল দেখতে ভিন্ন হয়৷ সেটা ইংরাজি অক্ষর ‘ভি'-এর মতো এবং অ্যাওর্টা বা মহাধমনীর সাহায্যে শরীরের বাকি অংশে রক্ত পাম্প করে৷

‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম' হলে সেই ভেনট্রিকেল অনেকটা ‘টাকো-সুবো' নামের জাপানের অক্টোপাস ফাঁদের মতো দেখতে হয়৷ গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জাপানেই প্রথম এই রোগের বর্ণনা করা হয়েছিল৷ সে কারণে ডাক্তাররা প্রায়ই ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম'-কে টাকোসুবো সিন্ড্রোম নামেও ডাকেন৷ প্রো. নর্ট বলেন, ‘‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম অনেকটা ‘সাধারণ হার্ট অ্যাটাক'-এর মতোই মনে হয়৷ রোগীরা আচমকা বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন, আচমকা দম আটকে যায়৷ বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান৷ প্রথমেই কিন্তু আমরা সাধারণ হার্ট অ্যাটাক ও ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারি না৷ কার্ডিয়াক ক্যাথিটারাইজেশন করলে তবেই সেটা বুঝতে পারি৷’’

ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম কেন হয়?

হৃদযন্ত্রের ক্যাথিটারাইজড পরীক্ষার সময়ে ডাক্তাররা আর্তুরের ক্ষেত্রে ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম নির্ণয় করেন৷ টোমাস নর্ট ও তাঁর টিম তাঁর হৃদযন্ত্রের পেশিতে এক কনজেনিটাল বা জন্মগত রোগও শনাক্ত করেন, যে বিষয়ে তিনি সচেতন ছিলেননা৷ প্রো. টোমাস নর্ট বলেন, ‘‘তিনি যখন এই হাসপাতালে এলেন, তখন আমরা অবাক হয়ে ভাবলাম, তিনি কীভাবে ভেনট্রিকুলার ফিব্রিলেশনে পড়ছেন৷ আমরা দুটি কারণ খুঁজে পেলাম৷ কনজেনিটাল হার্ট মাসেল ডিজিজ এবং সেই সঙ্গে শরীরের স্ট্রেসও ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম ঘটিয়েছে৷’’

ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমের প্রায়ই কোনো ‘ট্রিগার' থাকে না, যা আগে থেকেই শনাক্ত করা যায়৷ আর্তুরের ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছে৷ কিন্তু আবেগজনিত স্ট্রেসও প্রায়ই এক ভূমিকা পালন করে৷ প্রো. নর্ট মনে করেন, ‘‘শারীরিক স্ট্রেসের পাশাপাশি ইমোশনাল স্ট্রেসও ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম ঘটাতে পারে, যেমনটা আমরা আর্তুর আমব্রোজিকের ক্ষেত্রে দেখেছি৷ আচমকা জীবনসঙ্গীর মৃত্যু অথবা বাসার সামনে রাস্তার উপর পছন্দের বিড়াল গাড়ি চাপা পড়লে, এমনকি টেলিভিশনের পর্দায় আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত দেখলেও এমনটা ঘটতে পারে৷ অর্থাৎ শারীরিক চাপের পাশাপাশি ইমোশনল স্ট্রেসও ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোমের কারণ হতে পারে৷’’

ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের চিকিৎসাও হার্ট ফেলিয়ারের চিকিৎসার মতো৷ স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবে রাশ টানতে বিটা ব্লকার কাজে লাগানো হয়৷ রোগীর শরীরে ফ্লুইড ওভারলোড বা মাত্রাতিরিক্ত তরল দেখা দিলে ডাইইউরেটিক্স ওষুধ দেওয়া হয়৷

চিকিৎসায় আর্তুর ভালোই সাড়া দিয়েছেন৷ তবে আবার ফুটবল ট্রেনিং-এ ফিরে যেতে তাঁকে আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে৷ সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় তাঁর মনমেজাজ ভালোই রয়েছে৷

সিমোনে শাউমব্যার্গার/এসবি