ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট উঠলেও আলুর দাম এখনো চড়া
আলু ছাড়া বাঙালির হেঁসেল অচল। আর সেই আলু কিনা দিনের পর দিন ৫০ টাকা কিলো দরে বিকোচ্ছে।
বাঙালি-জীবনে আলু
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির কাছে আলু কেবলমাত্র একটা সবজি নয়, আলু হলো বাঙালির আবেগ। বাঙালির রান্নাঘরে প্রতিদিনের প্রায় সব রান্নাতেই আলুর উপস্থিতি। মাছ, মাংস, ডিম, নিরামিষ সবজি সবকিছুতেই আলু থাকে। সেই আলুর দাম এখন এতটাই বেড়েছে যে, দোকানের সামনে থলে হাতে থমকে যেতে হচ্ছে। কতটা আলু কিনবেন, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আলুর দিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে ক্রেতাকে।
আলু ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট
আলুর এরকম দাম বাড়ার কারণ, ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট। আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট শুরু করার পর থেকে আলুর দাম লাফিয়ে বাড়ছে। কলকাতার বাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কিলো দরে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছে। চন্দ্রমুখী হাফ সেঞ্চুরি পার করেছে। দোকানদাররা যে যেমন পারছেন, দাম নিচ্ছেন। আলুর দাম জিজ্ঞাসা করেই ঢোঁক গিলছেন ক্রেতারা। কয়েক দিন আগেই যে আলু ৩২ টাকা ছিল, সেটাই এখন ৪৫ টাকা কেজি!
বাজারে আলু কম
বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, পাইকারি বাজারে আলু নেই। এই অবস্থায় তাঁরা ‘অসহায়’। গত কয়েক দিনে সবজির দাম কিছুটা কমলেও আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের পকেটে টান পড়েছে। তা ছাড়া, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর কয়েক দিন ধরে বাজারে বাজারে যে টাস্ক ফোর্সের অভিযান দেখা যাচ্ছিল, তারও দেখা মিলছে না বলেও দাবি।
আলু ব্যবসায়ীদের কর্মবিরতি
রাজ্যের সীমান্তগুলিতে পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতি। এ জন্য হিমঘর থেকে আলু বেরোনো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আড়তগুলিতেও আলুর জোগান কমছে। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে।
হিমঘর থেকে আলু আসছে না
সিঙ্গুরে কিছু আলুর আড়ত খোলা থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ধর্মঘটের জেরে রাজ্যে বেশির ভাগ হিমঘরগুলির ঝাঁপ বন্ধ। এখন বাজারে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কিছু আলু বিক্রি হচ্ছে। সেটাও এক কেজি কিনতে হলে দাম পড়ছে ৩৫ টাকা।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর
মঙ্গলবার আলু ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, অন্য রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না। তার পরামর্শ, যতদিন আলুর দাম না কমছে, আপাতত তত দিনের জন্য রপ্তানি বন্ধ থাকুক। সূত্রের খবর, এই পন্থাকে সামনে রেখেই আলু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বেচারাম। সেই পথেই আপাতত মিলেছে সমাধান।
ব্যবসায়ীদের দাবি
আলু ব্যবসায়ীরা বরাবর অন্য দাবি করেছেন। তাদের বক্তব্য তারা যে আলু রপ্তানি করেন পশ্চিমবঙ্গের বাজারে তা বিক্রি হয় না। ফলে সীমান্তে গাড়ি আটকে দিয়ে খামোখা তাদের আর্থিক লোকসানের বোঝা বাড়ানো হচ্ছে। রপ্তানি বন্ধ করাটা দাম কমানোর উপায় হতে পারে না বলেই তাদের দাবি। তাদের দাবি স্টোরেজ থেকে যে দামে আলু বেরোচ্ছে, তা বিভিন্ন মজুতদারদের হাত মারফত ঘুরে বেশি দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এতে হিমঘরের কোনো দোষ নেই।
পাইকারি বাজারে আলু কম
পাইকারি বাজারে আলুর আকাল দেখা দিয়েছে। ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় ১০০-১৫০ টাকা বেড়ে আলুর দাম দাঁড়িয়েছে ১৬০০-১৬৫০ টাকা বস্তা। আলুর আড়ত থেকে কেনাই পড়ছে ৩২ টাকার বেশি। পচা কাটপিস ছোটো বাদ দিয়ে সেই আলু ৩৫ টাকা কিলো দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজ্যের পাঁচশোর বেশি হিমঘর থেকে আলু বেরোনো বন্ধ রয়েছে প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির ডাকা কর্মবিরতির ফলে।
সমিতির দাবি
সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের প্রায় ৮০ হাজার আলু ব্যবসায়ী কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছেন। ২০১৪ সালে এ রকম হয়েছিল। অন্য রাজ্যে আলু যাওয়া আটকানো হয়েছিল।
তৃণমূলের সিদ্ধান্ত
আলু ব্যবসায়ীদের নিয়ে নতুন সংগঠন গড়বে তৃণমূল। আলুর দাম বৃদ্ধির পরিস্থিতি দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ওই সংগঠন গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সরকারের মনোভাব
মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে আলুর দাম নিয়েও আলোচনা হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে মমতা বলেন, ‘‘আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠিন পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার। সাধারণ মানুষের উপর চাপ বাড়ুক এটা চায় না সরকার।’’
ধর্মঘট উঠলো
বুধবার প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তার পরেই ধর্মঘট তুলে নেয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। আশা করা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার থেকেই রাজ্যে আলুর জোগান আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু দাম কতটা কমবে সে ব্যাপারে সন্দিহান ক্রেতারা। তাদের কথায়, দাম একবার বাড়লে তা আর কমতে চায় না। বৃহস্পতিবার সকালেও কলকাতায় আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কিলো দরে।
পেঁয়াজের দামও চড়া
শুধু আলু নয়, কলকাতায় পেঁয়াজের দামও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এক কিলো পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা বা তার বেশি। ফলে আলুর পাশাপাশি পেঁয়াজ কিনতেও ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
পিছিয়ে নেই টমেটোও
টমেটো তো সেঞ্চুরি করেছে। এক কিলো টমেটো কিনতে গেলে ১২০ টাকা দিতে হচ্ছে। মানুষের নজর আলুর দিকে বেশি গেলেও পেঁয়াজ, টমেটো এবং অন্য সবজির দামও ছ্যাঁকা দিচ্ছে।