বিস্ফোরণের জের, বৈরুতে শুরু হলো জনগণের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টের বাইরে জমায়েত হন সাধারণ মানুষ। সরকারের বিরুদ্ধে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ সেই বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে পরিস্থিতি যা, তাতে শুক্রবার ফের বিক্ষোভের সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের দাবি, বর্তমান সরকারের অবহেলার জন্যই বন্দরে বিস্ফোরণ ঘটেছে। অভিযোগ, ছয় বছর ধরে যে ভাবে গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফেলে রাখা হয়েছিল, তাতে আরও আগে এমন বিস্ফোরণ ঘটতে পারতো। বস্তুত, বৃহস্পতিবারই বন্দর কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ জানিয়েছিলেন, একাধিকবার সরকারের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লেখা হয়েছিল। চিঠি দেওয়া হয়েছিল আদালতকেও। কিন্তু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরানো বা বিক্রির বিষয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবহেলার কারণেই বৈরুতের সাধারণ মানুষকে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের সাক্ষী থাকতে হলো বলে অভিযোগ।
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
বিধ্বস্ত মসজিদে
বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত এক মসজিদের কার্পেট থেকে ভাঙা কাঁচ কুড়াচ্ছেন এক জন৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
গির্জাও বিধ্বস্ত
রাসায়নিকের গুদামে বিস্ফোরণের ফলে এক গির্জার এখন এই অবস্থা৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
শহর লন্ডভন্ড
বিস্ফোরণে লন্ডভন্ড শহরের এক বিধ্বস্ত ভবনের পাশ দিয়ে মোটর সাইকেলে এগিয়ে চলেছেন দুজন৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
বিস্ফোরণস্থল
৫ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতের ঠিক এই জায়গাটায় হয়েছিল বিস্ফোরণ৷তাই ভবনগুলো যেন শুধু রডের কঙ্কাল৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
হাসপাতালের হাল
বিধ্বস্ত এক হাসপাতাল গোছানোয় ব্যস্ত কর্মীরা৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
লড়াকু দুজন
নিজের মুদির দোকানটা প্রায় শেষ, বিস্ফোরণে নিজেও আহত৷ বৈরুতের এই নারী তবু সামান্য কিছু বেচাবিক্রির আশায় দোকান খুলে বসেছেন৷ পাশে তার স্বামী৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
এ কোন ঘর!
নিজের সাজানো গোছানো ঘরের অবস্থা দেখে এই নারী যেন বুঝতে পারছেন না কোথায় আছেন তিনি!
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
চলছে রাস্তা পরিষ্কার করার কাজ
বৈরুতের বন্দরের পাশের রাস্তা পরিষ্কার করছেন দুজন স্বেচ্ছাসেবী৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
ধ্বংসস্তূপে শান্তির ঘুম
বিধ্বস্ত ভবনের বাইরে ঘুমে মগ্ন একজন৷
-
বিধ্বস্ত বৈরুতে
রাস্তা উদ্ধার
ভেঙে পড়া কাঠ, কাঁচ, ইট-সুড়কি সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছেন দুজন স্বেচ্ছাসেবী৷
মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৫৭। আহতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এখনও বহু মানুষের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকে আছেন কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। রাজধানী জুড়ে ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ এখনও চলছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে এক জার্মান কূটনীতিকেরও মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। শোকপ্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ জানিয়েছেন বৈরুতের সংস্কার কাজে ফ্রান্স সবরকম সাহায্য করবে। তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, দেশের সরকার বড় রকমের সংস্কার না করলে লেবানন ক্রমশ ডুবতে থাকবে।
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, রাজধানীর অধিকাংশ বাড়ি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে বহু অফিস। সরকার এখনও পর্যন্ত জানায়নি কী ভাবে তার সংস্কার হবে। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার সমস্ত অধিকার হারিয়েছে। দ্রুত ক্ষমতার পরিবর্তন দরকার।
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী
এটি একধরনের গন্ধহীন অতি স্বচ্ছ রাসায়নিক উপাদান, যা সাধারণত সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তবে এর সঙ্গে জ্বালানি তেল মিশিয়ে বিস্ফোরকও তৈরি করা হয়, যা নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে থাকে৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে জ্বালানি তেল মিশিয়ে বোমা তৈরি করে থাকে অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী৷ ১৯৯৫ সালের ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা শহরের এক ভবনে হামলায় ব্যবহৃত বোমা তৈরিতে দুই টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল৷ ঐ হামলায় ১৬৮ জন নিহত হয়েছিলেন৷ তালেবানও বিস্ফোরক তৈরিতে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করে থাকে৷ ছবিটি ঐ বছরের ৫ মে তোলা৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
সার কারখানায় আগুন
২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটি সার কারখানায় আগুন লেগে ১৫ জন প্রাণ হারান৷ আগুন লাগার কারণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ছিল বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা৷ ইচ্ছে করেই আগুন লাগানো হয়েছিল বলেও জানান তারা৷ ছবিটি দুর্ঘটনার পরদিন তোলা৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
চীনে দুর্ঘটনা
২০১৫ সালে চীনের তিয়ানজিন শহরের এক গুদামে অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও রাখা ছিল৷ গুদামে আগুন লেগে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ১৬৫ জন মারা যায়৷ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন ডলারের বেশি৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
লেবানন দুর্ঘটনা
মঙ্গলবার দেশটির বৈরুত বন্দরের এক গুদামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ গুদামে মজুদ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে কর্তৃপক্ষ বলছে৷ প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব জানিয়েছেন, গত ছয় বছর ধরে ওই গুদামে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত রয়েছে৷ ২০১৪ সালে একটি মালবাহী জাহাজে করে ওই রাসায়নিক এসেছিল৷ কাগজপত্রে গণ্ডগোল থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ জাহাজের জিনিস বাজেয়াপ্ত করেছিল৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
উত্তর কোরিয়ায় দুর্ঘটনা
২০০৪ সালের ২২ এপ্রিল দেশটির এক রেলস্টেশনে জ্বালানিবাহী দুটি ট্রেনের সংঘর্ষে ১৬১ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ ছবিটি দুর্ঘটনার দুই দিন পর তোলা৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
নিরাপদ সংরক্ষণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচণ্ড তাপ পেলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জ্বলে উঠতে পারে৷ সেজন্য সংরক্ষণের সময় একে জ্বালানি তেল ও তাপের সূত্র থেকে দূরে রাখতে পরামর্শ দেয়া হয়৷ বিপদ কমানোর জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক করেছে৷ কারণ এর ফলে ক্যালসিয়াম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তৈরি হয়, যা একটু বেশি নিরাপদ৷
-
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে যত দুর্ঘটনা
যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ম কঠোর করা হয়েছে
১৯৯৫ সালে ওকলাহোমা শহরে হামলায় ব্যবহৃত বোমায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহার করা হয়েছিল৷ এরপর থেকে সে দেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সংরক্ষণে নিয়ম কঠোর করা হয়েছে৷ ফলে ৯০০ কেজির বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থাকা কোনো স্থাপনা পরিদর্শনের নিয়ম করা হয়েছে৷
এ দিকে প্রশাসন জানিয়েছে এখনও পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক সকলেই বন্দরের কর্মী। বৃহস্পতিবারেই বন্দরের বহু কর্মীকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে থেকে ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছিল। দুই জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৬ জনকে আটক করে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগ, ওই কর্মীদের অবহেলাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
তবে সরকার বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ দানা বাঁধছে লেবাননে। এক সাংসদও এই ঘটনার পরে পদত্যাগ করেছেন। দাবি করেছেন, নতুন সরকার না আসা পর্যন্ত তিনি পার্লামেন্টে যাবেন না। জর্ডনে লেবাননের রাষ্ট্রদূতও পদত্যাগ করেছেন। তিনিও জানিয়েছেন, লেবাননে ক্ষমতার পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
লেবাননে সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত বছরেই। অর্থনীতির বেহাল দশা, সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। করোনা-কালে সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। করোনার মধ্যেও মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবে বিস্ফোরণের পরে বিক্ষোভ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)