1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈদ্যুতিক বাতির তাণ্ডবে কোণঠাসা রাতের আকাশ

২৯ এপ্রিল ২০১৯

আধুনিক সভ্যতার কারণে কি রাতের আকাশ হারিয়ে যাচ্ছে? কৃত্রিম আলোর গ্রাসে অন্ধকার আকাশ সত্যি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ এই আলো দূষণের প্রভাব পড়ছে জীবজগতসহ গোটা ইকো সিস্টেমের উপর৷ বিজ্ঞানীরা তার পরিণতি বোঝার চেষ্টা করছেন৷

https://p.dw.com/p/3HbCw
Projekt Zukunft - Lichtverschmutzung
ছবি: BR

বিজ্ঞানের একেবারে প্রথম যুগেই জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা হতো৷ আমাদের ক্যালেন্ডার বা সময়ের গণনাও সেখান থেকেই শুরু৷ তবে সৃষ্টির রহস্য উন্মোচনের সেই প্রচেষ্টা অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছিল৷ রাতের পরিষ্কার আকাশে এমন সব নক্ষত্র দেখা যায়, যা লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে জ্বলজ্বল করছে৷

তবে পদার্থবিদ হিসেবে  মানুয়েল ফিলিপ মনে করেন, রাতের আকাশ ধীরে ধীরে উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ তিনি মিউনিখের কাছে রোজেনহাইমে এক তারকা পার্ক খুলেছেন৷ অন্ধকার এই সংরক্ষিত এলাকায় রাতের আকাশ স্পষ্ট দেখা যায়৷ সেদিকে তাকালে কত সংখ্যক ক্ষুদ্র নক্ষত্র যে দেখা যায়, তিনিও তা জানেন না৷ মানুয়েল বলেন, ‘‘গোটা বিশ্বে সম্ভবত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ রাতের আকাশ তার প্রকৃত রূপে দেখতে পায়৷ বাকি ৭০, ৮০ শতাংশ মানুষ আর তা দেখতে পারেন না৷ কারণ রাতে কৃত্রিম আলোর আধিক্য মারাত্মক হারে বেড়ে গেছে৷ গত ১০, ২০ বছরে কৃত্রিম আলোর ছটা আকাশ ভরিয়ে দিয়েছে৷''

বড় শহরগুলিতে আলো ও অন্ধকারের প্রাকৃতিক ছন্দ কার্যত লোপ পেয়েছে৷ এই সব শহরে  কৃত্রিম আলোর তীব্রতা প্রায় ৪০ গুণ বেড়ে গেছে৷ সপ্তদশ শতাব্দীতে আবিষ্কৃত ল্যাম্পপোস্ট আজ প্রায় গোটা বিশ্ব আলোকিত করছে৷ প্রতি বছর রাতের বেলায় আলোর তীব্রতা প্রায় ২ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়ছে৷

কৃত্রিম আলো নতুন ও ক্ষতিকারক এক নির্গমন৷ পৃথিবীর ইকোসিস্টেমের জন্য তার পরিণতি এখনো স্পষ্ট নয়৷ মানুয়েল ফিলিপ মনে করেন, ‘‘যথেষ্ট অন্ধকারের পরিবেশ না পেলে অনেক কিছু ঘটে৷ পাখি নির্ধারিত সময়ের আগেই বংশবৃদ্ধি করে, আগেই গান গায়৷ গাছের পাতা দেরিতে ঝরে পড়ে৷ পোকামাকড় কৃত্রিম আলোর দিকে ধেয়ে যায় এবং ল্যাম্পপোস্টের বাতির কাছে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে মরে যায়৷ জার্মানিতে আমরা বিভিন্ন গবেষণার ভিত্তিতে এক গড় হার জানতে পেরেছি৷ প্রতি রাতে জার্মানিতে ল্যাম্পপোস্টে ধাক্কা খেয়ে প্রায় একশ' কোটি পোকা মরে যায়৷''

 

আজ মানুষ মহাকাশে পাড়ি দিচ্ছে৷ কিন্তু বিষয় হিসেবে অন্ধকার আজও প্রাসঙ্গিক৷ ব্ল্যাক ম্যাটার, ব্ল্যাক এনার্জির কথা শোনা যাচ্ছে৷ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ৯৫ শতাংশ সম্পর্কে মানুষ আজও কিছু জানে না৷ এই বিশাল প্রান্তরে সামান্য এক বিন্দু হিসেবে আমরা আলোকিত থাকতে চাই৷ মানুয়েল বলেন, ‘‘পেঁচানো এই ছায়াপথের মধ্যে আমাদের ঠাঁই ঠিক সেখানে, যেখানে আমি ছোট্ট এই গুঁড়াটি রাখছি৷ বাইরে থেকে কেন্দ্রবিন্দুর পথে অর্ধেক অংশে আমাদের সৌরজগত, সূর্য, গ্রহগুলি রয়েছে৷''

বলগাহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন হিসেবে রাতের ভাবমূর্তি অবশ্যই এক প্রচলিত ধারণামাত্র৷ তবে দিনের বেলা নিয়ে শুধু পদার্থবিদ্যার শুকনা কচকচির পর রাতকে ঘিরে নেশা, প্রেরণা ও কাব্যের প্রয়োজন হয়৷

পৃথিবী ১১৮টি রাসায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি৷ সে সবই মহাকাশের গভীর থেকে এসেছে৷ আমরা আসলে নক্ষত্রের ধুলিকণামাত্র৷ মানুয়েল ফিলিপ সেই প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমরা মহাকাশ থেকে এখানে আসি নি, বরং আমরা মহাকাশের বিশাল ব্যাপ্তির অংশমাত্র৷ কেউ প্রশ্ন করলে আমি সংক্ষিপ্ত জবাবে বলি, যে পৃথিবীকে নিয়ে আমরা মোটেই ব্রহ্মাণ্ডের মধ্যে নেই৷ আমাদের মধ্যেই ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে৷''

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রায় ৭০ ট্রিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে৷ তাদের আলোর মধ্যেই আমাদের অস্তিত্বের রহস্য লুকিয়ে রয়েছে৷ কিন্তু রাতের আকাশে সেগুলি দেখতে না পেলে সেটা হবে বিশাল এক ক্ষতি, তাই না?

আঙ্গেলিকা কেলহামার/এসবি