1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বেতন ছাঁটাই শুরু, যাচ্ছে চাকরিও

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনের পর রুটিরুজি হারিয়েছেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। এ বার সংগঠিত ক্ষেত্রের লোকেদের বেতন ছাঁটাই শুরু হল। শুরু হল চাকরি হারানো।

https://p.dw.com/p/3aLpl
ছবি: Reuters/D. Siddiqui

লকডাউনের নয় দিনের মাথাতেই উদ্বেগজনক ছবিটা সামনে চলে এল। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন। সংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের বেতন ছাঁটাই শুরু হয়ে গিয়েছে। এর পরিমাণটা ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৫০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত। অনেক সংস্থায় কর্মীদের সঙ্গে চুক্তি থাকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। সেই চুক্তির নবীকরণ হয়নি। হবে কি না, তাও বোঝা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অবশ্য আবেদন জানিয়েছেন, করোনা-প্রাদুর্ভাবের অস্বাভাবিক সময়ে কাউকে যেন কর্মহীন না করা হয়। কিন্তু সেই আবেদনে বেসরকারি সংস্থা কান দেবে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

তেলেঙ্গানা সরকার কর্মীদের বেতন ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব মন্ত্রী, বিধায়ক, পারিষদরা মাত্র ২৫ শতাংশ বেতন পাবেন। আইএএস, আইপিএস অফিসাররা পাবেন ৪০ শতাংশ বেতন। বাকি সরকারি কর্মী ও পেনশনপ্রাপকরা ৫০ শতাংশ টাকা পাবেন। কেবলমাত্র চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা ৯০ শতাংশ বেতন পাবেন। মহারাষ্ট্র সরকার বেতন দিচ্ছে দুই ভাগে। প্রথমে ৫০ শতাংশ। পরে আবার পঞ্চাশ শতাংশ দেওয়া হবে। আর একের পর এক ছোটবড় বেসরকারি সংস্থা তাঁদের কর্মীদের বেতন ছাঁটাইয়ের কথা ষোষণা করছে। সেই পরিমাণটা ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বেসরকারি বিমানসংস্থা, গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা থেকে শুরু করে ছোট ও বড় বিভিন্ন সংস্থা হয় কর্মীদের বেতন ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করে দিয়েছে বা ভাবনাচিন্তা করছে।

তবে সব চেয়ে খারাপ অবস্থা অসংগঠিত ক্ষেত্রের। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব হলো, ভারতের ৮১ শতাংশ লোকই অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধর ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অনেকেই বলেন, কৃষি ও এমএসএমই বা ছোট ও মাঝারি শিল্পে প্রায় ৯৩-৯৪  শতাংশের মতো মানুষ কাজ করেন।  তাঁদের এখন কোনও কাজ নেই। তার সঙ্গে সংগঠিত ক্ষেত্রেও, যেমন ধরুন মারুতি, সেখানেও প্রচুর ক্যাজুয়াল শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদেরও হয়তো রাখা হবে না। তাই সংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত এই ধরনের শ্রমিকরা কাজ হারাবেন।''

ফলে লকডাউনের কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় দেশের প্রমুখ অর্থনীতিবিদ, আমলা, সমাজবিজ্ঞানীরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন, আগামী তিনমাস ২০ কোটি জনধন অ্যাকাউন্টে যেন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি মিলে ছয় হাজার টাকা করে দিতে থাকে। একেবারে গরিব মানুষের জন্য এই জনধন অ্যাকউন্ট খুলে দিয়েছে মোদী সরকার। ওই বিশিষ্টজনেরা বলেছেন, এর ফলে তিন লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু অসংগঠিত ক্ষেত্রের গরিব মানুষগুলি বাঁচবে। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্স-এর প্রাক্তন প্রধান সুমিত দত্ত মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সরকারকে বেশ কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিতেই হবে এবং লোকের হাতে যাতে টাকা থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। লোকের ক্রয়ক্ষমতা থাকলেই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এটা সরকারকেই করতে হবে। বেসরকারি সংস্থা করবে এমন আশা করাটা ভুল। এটা অপ্রিয় হলেও সত্য। এখন বাজেট ঘাটতির কথা ভুলে সরকারকে ভালো করে টাকা ঢালতে হবে। গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের হাতে টাকা দিতেই হবে।'' 

নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''অসংগঠিত ক্ষেত্রের লোকেদের অবস্থা ভয়াবহ। তাঁরা সরকার বা গুরুদ্বার অথবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যের ওপর ভরসা করে বেঁচে আছেন। সংগঠিত ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই চুক্তির নবীকরণ হচ্ছে না। ঢালাও বেতন ছাঁটাই হচ্ছে।'' 

ফসল কাটার সময় এসে গিয়েছে। বিশ্বজিতবাবু মনে করেন, এই সময় ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার হাতে আগের তুলনায় বেশি অর্থ দিতে হবে শষ্য সংগ্রহের জন্য। কারণ, বাজারে চাহিদা কম থাকায় কৃষকরা ফুড কর্পোরেশনের কাছেই বেশি করে ফসল বেচতে চাইবে। ফলে তাঁদের অনেকর বেশি শষ্য সংগ্রহ করতে হবে।''  কিন্তু ফসল কাটার শ্রমিক পেতেও তো অসুবিধা হবে? জয়ন্ত বলছেন, ''স্থানীয় শ্রমিক যেখানে পাওয়া যায়, সেখানে অসুবিধা কম। কিন্তু পাঞ্জাবের মতো রাজ্য যারা বাইরের শ্রমিকের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তারা বিপাকে পড়বে।''  

এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায়কী? বিশ্বজিৎ ধরের মতে, ''একটা ফিসকাল পলিসি দরকার।  সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের মাধ্যমে খুব কম সুদে ঋণ দিতে হবে। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে গেলে সরকারকে টাকা বিনিয়োগ করতেই হবে। সরকারকে মার্কেট বরোয়িং বাড়াতে হবে।'' সুমিত দত্ত মজুমদার মনে করেন, ''আগে লোককে বাঁচাবার পর অর্থনীতিকে বাঁচাতে হবে। এখন সরকার বাজেট ম্যানেজমেন্টের কথা ভাবলে চলবে না। তাদের নিশ্চিত করতে হবে, বাজারে যেন অর্থের জোগান থাকে।'' জয়ন্ত রায়চৌধুরি বলছেন, ''আগামী তিন মাসে আমাদের জিডিপি তিরিশ শতাংশের মতো কমবে। তাতে পুরো বছরের জিডিপি খুব বেশি হলে সাড়ে তিনের মতো হবে। তবে মন্দা অবধারিত। কারখানাগুলির উৎপাদন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ হবে বলে আমার ধারণা।''  

তা হলে চাকরির সুয়োগ কমবে সেরকম পরিস্থিতিতে। আরও বেশি বেতন ছাটাইয়ের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।