বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার নির্দেশ
১১ আগস্ট ২০২৪এটা করতে গিয়েপুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদান করানোর জন্য নানা চেষ্টা চলছে। তাদের ১৫ আগস্টের(বৃহস্পতিবার) মধ্যে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের পলাতক দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
বাংলাদেশে মোট থানা ৬০৯টি। পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে রোববার বিকাল পর্যন্ত ৫৯৯টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এরমধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোর ১১০টি থানার মধ্যে ৯৭টি এবং জেলা পুলিশের ৫২৯টি থানার মধ্যে ৫০২টি থানার কাজ শুরু হয়েছে।
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানের থানার কাজ শুরু হলেও পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি খুবই কম। ঢাকার পল্টন থানায় গিয়ে দেখা গেছে পুরো থানা ভবন এবং আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। থানার চার তলা ভবনের সবখানেই ধ্বংসের আলামত।
এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন মোল্লা ডয়চে ভেলেকে বলেন," ৫ আগস্ট আমাদের থানায় লোকজন ঢুকে সব পুড়িয়ে দিয়েছে, ধ্বংস করে ফেলেছে। আমাদের এখন বসার মতো কোনো পরিবেশ নাই। আমাদের অস্ত্রগুলো নিয়ে গেছে। মালখানায় যা ছিলো নিয়ে গেছে। বাইরের মোটর সাইকেল নিয়ে গেছে। তিন ও চার তলায় ফোর্সদের থাকার জায়গা পুড়িয়ে ফেলেছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি কাজের পরিবেশ তৈরি করার। আর অধিকাংশ ফোর্সই এখনো জয়েন করেনি।”
বাংলাদেশেপুলিশ বাহিনীতে সব মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজারের মতো সদস্য আছেন। ঢাকাসহ সারাদেশের থানাগুলো চালু করার চেষ্টা করা হলেও বাস্তব পরিস্থিতি সবখানে এরকমই, তাদের অধিকাংশই কাজে যোগ দেননি। তারা ১১ দফা দাবি দিয়েছেন কাজে যোগদানের শর্ত হিসেবে। আর যারা কাজে যোগ দিচ্ছেন তারা কাজ করছেন সিভিল ড্রেসে।
আরেকটি থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান," আমরা এখনো ভয়ের মধ্যে আছি। অনেকেই সেই কারণে যোগ দিচ্ছেনা। যারা যোগ দিচ্ছেন তারা পুলিশের পোশাক পরছেন না। আর থানাগুলোতে এখন সাধারণ মানুষও তেমন কোনো অভিযোগ নিয়ে আসছেন না। দুই-একজন আসছেন কোনো কিছু হারানোর জিডি করতে।”
এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন রোববার সচিবালয়ে বলেছেন, "পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগ দেয়ার শেষ দিন বৃহস্পতিবার( ১৫ আগস্ট)। এরপর তাদের পলাতক বলে গণ্য করা হবে।” তিনি আরো বলেন," এর ভিতরে পুলিশ সদস্যরা যদি কাজে যোগ না দেন আমরা ধরে নেব তারা পলাতক। আমাদের হাতে অনেক ম্যাকানিজম আছে। আমরা তাদের রিপ্লেস করব। দেখবেন অল্প সময়ের মধ্যে আমরা তাদের রিপ্লেস করে ফেলব।”
অন্যদিকে যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা আছে তাদেরও কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। এদিকে পুলিশের আইজি মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪২ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন র্যাব সদস্য রয়েছেন। এছাড়া বহু আহত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেই ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া হামলায় গুরুতর আহত ২৭ জন পুলিশ সদস্য ভর্তি রয়েছেন, যার মধ্যে একজন আইসিইউতে আছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। পাশাপাশি আহতদের পরিবারকে মানসিকভাবে সাপোর্ট ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি।''
পুলিশকে এখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বা অপারেশনাল দায়িত্ব বা অপরাধ দমনে দেখা যাচ্ছেনা। ট্রাফিক ব্যবস্থা এখনো সামলাচ্ছে শিক্ষার্থী ও কিছু আনসার সদস্য। আর সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন,"পুলিশ সদস্যদের ওপর যেভাবে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। আবার তারা যেভাবে হামলার শিকার হয়েছেন তাতে রাতারাতি যে থানাগুলো সচল করা যাবে তা মনে হয়না। কারণ তাদের অনেক সদস্য নিহত হয়েছেন। অনেক থানা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অস্ত্র লুট হয়েছে। অনেকে পালিয়ে গেছেন। এখন এটাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনাই বড় চ্যালেঞ্জ।”
আর সাবেক আইজিপি নূর মোম্মদ বলেন," পুলিশকে স্বাভাবিক দায়িত্বে ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের মনোবল ও সাহস বাড়াতে হবে। তাদের মনোবল পুরোই ভেঙে পড়েছে। এত বড় ঘটনার পর তাদের মধ্যে আতঙ্ক এখনো দূর হয়নি। মিলিটারি থানায় থানায় আছে। তারপরও সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলেকে তাদের মনোবল বাড়াতে কাজ করতে হবে।”
তার কথায়," বিভিন্ন সরকারের সময়ে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আর বিগত ১৬ বছরে এটা আরো ভয়াবহ হয়েছে। এখন আশা করি পুলিশে সংস্কার হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা হবে। তবে আবার রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে কী হয় জানিনা।”