1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিদ্যুৎ সংকটের আপাতত সমাধান নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন
১১ অক্টোবর ২০২২

গ্রিড বিপর্যয়ের পর গত এক সপ্তাহেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থতি আগের লোডশেডিং অবস্থায়ও ফিরতে পারেনি। আগের চেয়ে লোডশেডিং আরো বেড়েছে। আর আপাতত এই পরিস্থিতির উন্নতির কোনো আশাও নেই।

https://p.dw.com/p/4I2sx
Bangladesch Dhaka City Markt
ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেই মঙ্গলবার  বলেছেন,"মধ্যরাতেও লোডশেডিংনিয়ে আপাতত বিছু করার নাই। সবাইকে আরো একটু কষ্ট করতে হবে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে বিদুৎ কেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না।”
এদিকে দেশের ১৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে ৬৩টি কেন্দ্র এখন জ্বালানির অভাবে  বসে আছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন অনেকটা প্রকৃতির ওপরই পরিস্থিতি ছেড়ে দিয়েছেন। তার কথা,"শীত এলে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। তখন হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।”
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এর আগে এই অক্টোবরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছিলেন। এখন নভেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন। কিন্তু বিশ্লেষকেরা সহসাই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখছেন না। তারা বলছেন,"নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের কারণে বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। সেই আশায় মনে হয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলেছেন।”
বাংলাদেশে চলমান বিদ্যুৎ সংকট শুরু হয় জুলাই মাস থেকে। ১৯ জুলাই থেকে  সারাদেশে লোডশেডিং করে বিদ্যুতের রেশনিং শুরু হয়। তখন কথা ছিলো প্রত্যেক এলাকায় দিনে এক ঘন্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না। কিন্তু শুরুতেই তার চেয়ে অনেক বেশি লোডশেডিং করা হয়। পরিস্থিতি সামলাতে রাত আটটার পর দোকান পাট বন্ধ, অফিস সময়সূচির পরিবর্তন করে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। তখন বলা হয়েছিলো বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিজেল চালিত বিদু্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয় দিনে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। উৎপাদন করা যাচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এক হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের ঘাটতি পুরণে এই ব্যবস্থা। কিন্তু গত ৪ অক্টোবর বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এখন বলা হচ্ছে গ্যসের অভাবে আরো প্ল্যান্ট বন্ধ আছে। গ্রিড বিপর্যয়ের পর কিছু প্ল্যান্ট আর সচল হয়নি।  
মুখে যাই বলা হোক গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিনে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। আর এখন তা বেড়ে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। লোডশেডিং গত তিন মাসের মধ্যে এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। ঢাকায় গড়ে দিনে চার থেকে-পাঁচ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর ঢাকার বাইরে সাত থেকে ১৫ ঘন্টা। মধ্যরাতেও একাধিকবার লোডশেডিং হচ্ছে খোদ রাজধানীতেই।
তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখার পর এখন গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও উৎপাদন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। স্পট প্রাইসে এলএনজি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ আছে।
দেশে এখন মোট বিদ্যুৎ বেন্দ্র ১৩৩টি। এর মধ্যে গ্যাসচালিত ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে মাত্র পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। ফার্নেস অয়েল চালিত ৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াট এবং ১১টি ডিজেল কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাত হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও দিনে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ মেগাওয়াট থেকে চার হজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন," আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি আছে। কিন্তু গ্যাস ও তেল নাই। তাই এই পরিস্থিতি চলতেই থাকবে। কারণ তেল ও গ্যাসের দাম বেড়েছে। ডলার সংকট অব্যাহত আছে। সরকারের হাতে ডলার নেই। গ্রিড বিপর্যয়ের পর যেসব প্ল্যান্ট এখনো চালু করা যায়নি বলা হচ্ছে সে সব প্ল্যান্ট আসলে জ্বালানির অভাবে চালু হয়নি। ”
তার কথা,"এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিদ্যুতের এই খারাপ অবস্থা চলতেই থাকবে। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা একটু কম থাকে। তাই হয়তো নভেম্বরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। মার্চে কী হবে জানি না। যদি রামপালের( কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র) এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ভারতের আদানির ৮০০ মেগাওয়াট আসে তাহলে দুই হাজার মেগাওয়াট তখন পাওয়া যাবে। এটা যদি যোগ হয় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অন্যথায় নয়। আর রূপপুরের বিদ্যুৎ পেতে আরো অনেক সময় লাগবে।”
তার মতে ,"আর যদি এপ্রিলের দিকে তেল গ্যাসের দাম কমে আসে তাহলে প্ল্যান্টগুলো চালু করা যাবে। তবে তেলের বাকি আছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এটা শোধ না করলে আমরা তেল পাব না।”
আর এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন,"আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংকট এই রকমই থাকবে। এর চেয়ে আর অবনতি হবে না। তারপর কী হবে তার পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। কারণ প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। এটা প্রকৃতির সহায়তা। আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া তো উপায় নেই।”
তার কথা,"সংকট মেকাবেলায় আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের গ্যাস থাকলেও তা আমরা উত্তোলন করছিনা।আমরা আমাদের গ্যাসের ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে দিলেও এই সমস্যা থাকত না। গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে পারলে অনেক গ্যাস পেতাম। যে গ্যাস আবিষ্কার হয়েছে তাও তুলতে পারছি না।”
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন,"পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে তো তেল গ্যাস আমদানি করতে হবে। সরকারের হাতে তো টাকা নেই। আর এটা করলে খরচ বেড়ে যাবে। আসলে আমাদের বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো করা হয়েছে কিছু লোককে ব্যবসা দেয়ার জন্য। এখন তার পরিণতি আমরা ভোগ করছি। এটা আমলাদের অদক্ষতার কারণে হয়েছে। এর আপাতত কোনো সমাধান নাই। এজন্য পুরো সিস্টেম পরিবর্তন দরকার। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আজ তার অসহায়ত্বের কথা বলেছেন। বলেছেন তেল-গ্যাসের উচ্চমূল্যের কথা। এই কথা আমরা আগেই বলেছিলাম। এখন তিনি সেটা স্বীকার করলেন।”

‘আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস ও তেল নাই’