জার্মানদের বিদেশি স্বামী বা স্ত্রীদের জার্মান ভিসা পাওয়ার অন্যতম শর্ত জার্মান ভাষা পরীক্ষার প্রাথমিক স্তর এ-ওয়ান পাস করা৷ কিন্তু সেটি করতে না পারায় গত কয়েক বছর ধরে প্রতিবছর আট থেকে ১০ হাজার ‘স্পাউস রিইউনিফিকেশন’ ভিসা আবেদন বাতিল কিংবা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

জার্মান নাগরিক শিক্ষার্থী লিন্ডা ভেনড্ট (ছদ্মনাম) ২০২২ সালে সেনেগালের নাগরিক মরো ডিওপকে (ছদ্মনাম) বিয়ে করেন৷ কিন্তু ডিওপ এখনও জার্মানি আসতে পারেননি৷ কারণ ১৪ মাস ধরে সেনেগালের ডাকারে জার্মান ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান গ্যোয়েটে ইনস্টিটিউটে ক্লাস করে এবং তিনবার পরীক্ষা দিয়েও তিনি এ-ওয়ান পাস করতে পারেননি৷ তাই বিয়ের এতদিন পরও লিন্ডা আর ডিওপ একসঙ্গে থাকতে পারছেন না৷

‘‘আমি সরকারের উপর ক্ষুব্ধ,’’ বলেন লিন্ডা৷ ‘‘জার্মানিতে বিয়েকে অনেক উঁচু স্তরে রাখা হয়েছে, কিন্তু আমাকে এ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে,’’ বলেন তিনি৷ নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বিটুইন টু ওয়ার্ল্ডস’ নামে একটি বইও লিখেছেন লিন্ডা৷ এছাড়া জার্মানির বিভিন্ন দলের ২০ জনের বেশি সাংসদকে তার গল্প শুনিয়েছেন৷ তাদের কেউ কেউ ভিসা নিয়ম শিথিল করা নিয়ে সংসদে কথা বলবেন বলে লিন্ডাকে আশ্বস্ত করেছেন৷

জার্মানির বাম দল ২০২২ সালে একটি খসড়া আইন প্রস্তাব করে৷ এতে জার্মানিতে আসার পর সঙ্গীর জন্য ভাষা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেয়া হয়৷ জার্মানির জোট সরকারের প্রধান শরিক এসপিডির সাংসদ গ্যুলিস্তান ইয়্যুকসেল (ছবি) জানিয়েছেন, পরবর্তী আইনি প্যাকেজে সঙ্গী ভিসার নিয়মকানুন শিথিল করা হবে৷ সম্প্রতি একজন সাংসদ লিন্ডাকে জানিয়েছেন, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্যামিলি রিইউনিয়ন ভিসা নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে৷

জার্মানিতে থাকা ইইউর অন্য সদস্যরাষ্ট্র এবং আরও কয়েকটি নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের সঙ্গীদের জন্য জার্মানির ভিসা পেতে ভাষা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক নয়৷ স্বীকৃত শরণার্থী, গবেষক, সেল্ফ-এমপ্লয়েড কিংবা উঁচু দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গীরাও ভাষা পরীক্ষা ছাড়াই ভিসা পেতে পারেন৷ অথচ জার্মানদের সঙ্গীদের জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়৷ একে ‘অভ্যন্তরীণ বৈষম্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন আইনজীবী স্ভেনিয়া গেয়ারহার্ড৷

২০১২ সালে জার্মানির ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্টের বিচারকরা বলেন, একজন সঙ্গীর জার্মান ভাষায় দক্ষতার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা উচিত নয় ‘যদি কারও পক্ষে কোনো কারণে একবছরের মধ্যে ভাষা শেখার চেষ্টা করা সম্ভব না হয়’৷ কারণগুলো হতে পারে অসুস্থতা, অক্ষমতা কিংবা ভাষা শেখার সুযোগের অভাব৷ তবে বিবাহিত দম্পতিরা প্রায়ই এসব কারণের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হন বলে জানান গেয়ারহার্ড৷