টেলিভিশন দেখছেন৷ অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে দেখছেন বিজ্ঞাপন৷ অর্থাৎ দেখে চলেছেন সুন্দরী, আকর্ষণীয় নারী, নারীদেহ৷ শুধু মেয়েলি জিনিসের বিজ্ঞাপন নয়, ঘরকন্নার জিনিস – সাবান, খাবার, গাড়ি, ব্যাটারি, এমনকি আসবাবের বিজ্ঞাপনেও নারী!
আজকের এই বিশ্বায়নের যুগে পণ্যের বিজ্ঞাপন অপরিহার্য৷ তাই তো বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের মূলধনের একটা বড় অংশ ব্যয় করে বিভিন্ন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে৷ টেলিভিশনের পর্দায় যে কোনো বিজ্ঞাপনকে ধরুন – তার প্রকাশভঙ্গি, মডেল নির্বাচন, কথাবার্তা – এগুলো নিয়ে কি একবারও প্রশ্ন ওঠে না আপনার মনে? মনে হয় না যে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কেন বার বার নারীদের টেনে আনা হচ্ছে? কেন তারা পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র ভোগ্যবস্তুতে?
ভারতীয় বিজ্ঞাপনে আগে কাপড় কাচার সাবানের বিজ্ঞাপনে দেখানো হতো, নারীরা কাপড় ধুচ্ছেন৷ আর এখন দেখানো হয়, বউ বাড়িতে না থাকায় বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্বামী৷ কীভাবে তিনি এত ময়লা কাপড় ধোবেন? দু'টি বিজ্ঞাপনেই বোঝানো হচ্ছে যে, কাপড় ধোয়া নারীর কাজ৷ এ তো কিছুই নয়৷ আজকাল তো বার্গার, আইসক্রিম, জুস, এমনকি গাড়ির বিজ্ঞাপনেও স্বল্পবসনা অথবা ‘সুইম স্যুট' পরা নারীর প্রয়োজন হচ্ছে৷ কেন? পণ্যটিকে আরো ‘আবেদনময়' করতে?
পোশাকের শালীনতা, সামাজিক মূল্যবোধ, রুচি – এ সব কথা না হয় বাদ দিলাম৷ কিন্তু মিডিয়া যদি এমন শিক্ষা দেয়, তবে সে দেশে নারী স্বাধীনতা কি সম্ভব? ‘না, সম্ভব নয়', বলছেন নারীবাদীরা৷ তাঁরা বলছেন অবিলম্বে নারীদের হেয় করে এমন বিজ্ঞাপন বানানো বন্ধ করতে, যা এই ভিডিওটা দেখলেই আপনি বুঝতে পারবেন৷
নারী-পুরুষের ভেদ নেই, এমন সমাজ গঠনে মিডিয়াকেই যে এগিয়ে আসতে হবে৷ তাই নয় কি?
ডিজি/এসি
রোগা মডেল আর চলবে না
হুরিপরি
ফ্যাশন ম্যাগাজিন বা কোনো বিউটি প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনে মডেলদের এমনভাবে দেখানো হয়, বাস্তবের সঙ্গে যার বিশেষ কোনো সম্পর্ক নেই৷ ফটোশপের কল্যাণে বড় বড় চোখ আর ভরা ঠোঁট দেখিয়ে বাজিমাত করা হয়৷
রোগা মডেল আর চলবে না
টাচ আপ
ফ্রান্সে নতুন কানুন চালু হয়েছে যে, এই ধরনের ছবির নীচে বলে দিতে হবে যে, ফটোশপ ব্যবহার করে ছবির রদবদল করা হয়েছে - অর্থাৎ ছবি ‘‘টাচ আপ’’ করা হয়েছে৷
রোগা মডেল আর চলবে না
ডাক্তারের সার্টিফিকেট
এছাড়া মডেলদের ডাক্তারের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে, যাতে লেখা থাকবে যে, তারা সুস্থ এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি রোগা নয়৷ এজন্য তাদের বিএমআই বা ‘বডি মাস ইনডেক্স’ পরীক্ষা করে দেখা হবে৷
রোগা মডেল আর চলবে না
অপুষ্টির শিকার?
বিএমআই-তে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন নির্ধারণ করা হয়৷ সেই সঙ্গে বয়সের দিকেও নজর রাখা হয়৷ একজন সুস্থ মানুষের বিএমআই সাধারণত ১৮ থেকে ২৫-এর মধ্যে হয়; ১৮-র কম হলে অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ধরে নেওয়া হয়৷ ওদিকে মডেলদের বিএমআই হয় ১৫ থেকে ১৬-র মধ্যে৷
রোগা মডেল আর চলবে না
কম ওজন
ফটোশুটের জন্য প্রায়ই মডেলদের বলা হয় ওজন কমাতে৷ কোনো কোনো মডেলের ওজন ৪০ থেকে ৪৫ কিলোও হয়৷ এজন্য তারা ক্র্যাশ ডায়েট করে বা দিনভর না খেয়ে থাকে৷
রোগা মডেল আর চলবে না
জরিমানা
আইনভঙ্গ করলে, মডেলকে যে এজেন্সি নিয়োগ করেছে, তাদের সাজা হতে পারে৷ সেই সাজা ছ’মাসের কারাদণ্ড থেকে শুরু করে ৭৫ হাজার ইউরো অর্থদণ্ড অবধি সব কিছু হতে পারে৷ শোনা যায়, ফ্রান্সে ৩০ থেকে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছায় না খেয়ে থেকে অসুখে পড়েছেন৷
রোগা মডেল আর চলবে না
অসুস্থ যুবসমাজ
শুধু ফ্রান্সেই নয়, দুনিয়া জুড়ে রোগাপাতলা মডেলরা যুবতীদের আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাদের দেখে যুবতীরা নিজেরাও সেইরকম হবার চেষ্টা করে আর অসুস্থ জীবন যাপন করা শুরু করে৷
রোগা মডেল আর চলবে না
তাহলে আমরা কি শিখলাম?
ফ্রান্সের আগে ইসরায়েল ও ইটালি অতিমাত্রায় রোগা মডেলদের বিদায় দিয়েছে৷ আশা আছে যে, বাদবাকি দেশও এ’থেকে শিখবে ও সৌন্দর্যের বিকৃত সংজ্ঞাকে আবার সুস্থ করে তুলবে৷