মার্কিন সংস্থা মডার্না ইনকর্পোরেটেডের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সফলভাবে করোনা ভাইরাস ঠেকাচ্ছে, বলে জানাচ্ছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স৷ এই প্রতিষেধকটি বর্তমানে শেষ পর্যায়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷
এই মুহূর্তে, প্রতিষেধক তৈরির বিশ্বব্যাপী দৌড়ে এটি দ্বিতীয় আশা জাগানো খবর৷ এর আগে বায়োনটেক ও ফাইজারের প্রতিষেধকের ৯০ শতাংশ সাফল্যের খবর পাওয়া গিয়েছিল৷
সব পরীক্ষা পেরোতে পারলে বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার দু'টি প্রতিষেধকের ছয় কোটি ডোজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য ডিসেম্বর মাসেই পাওয়া যেতে পারে৷ এই সংখ্যাই আগামী বছরে গিয়ে দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডোজে, যা অ্যামেরিকার ৩৩ কোটি জনসংখ্যার প্রয়োজনের চেয়ে অনেকটাই বেশি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
উজলেম টুরেচি
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
ভ্যাকসিন ট্রায়াল
যাদের আগে কখনও করোনা সংক্রমণ হয়নি, এমন মানুষের ওপর চালানো পরীক্ষায় দেখা গেছে যে টিকা দেয়ার পর শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করলেও তাদের কোভিড-১৯ হয়নি৷ জুলাইয়ের শেষ থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় পর্যায়ের এ ট্রায়ালে ৪৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন৷ মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এফডিএর অনুমতির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দু’টি৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
১৬ হাজার কোটি টাকার চুক্তি
ফাইজার ও বায়োনটেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টিকা সরবরাহে এরই মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের চুক্তি সই করেছে৷ চুক্তি সই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, জাপানের সঙ্গেও৷ ২০২০ সালেই প্রতিষ্ঠান দু’টি পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে। ২০২১ সালে আরো ১৩০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ফিজার৷
-
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ
জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি, প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি মানুষ৷ ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে কয়েক মাস সংক্রমণে ধীরগতি থাকার পর আবার দ্রুত হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ (কেএম)
সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকারে মডার্নার প্রেসিডেন্ট স্টিফেন হজ জানান, ‘‘কোভিড-১৯ থামাতে পারে এমন প্রতিষেধক আমরা পেতে চলেছি৷’’
মডার্নার এই ঘোষণা যে পরীক্ষার ফসল, সেই পরীক্ষায় মোট ৯৫জন করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির ওপর প্রতিষেধকটি ব্যবহৃত হয়৷ দেখা যায়, এর মধ্যে মাত্র পাঁচজনের মধ্যে সংক্রমণ লক্ষ্য করা যায়৷
মডার্নার প্রতিষেধক বায়োনটেক-ফাইজারের প্রতিষেধকের তুলনায় বেশি তাপমাত্রায় রাখা যেতে পারে, ফলে এই প্রতিষেধককে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়াটা আরো সহজ হবে বলে মনে করছেন অনেকে৷
এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইলিয়ানর রাইলি বলেন, ‘‘একটার বেশি কার্যকর প্রতিষেধকের সম্ভাবনা যেহেতু রয়েছে, তাতে করে ২০২১ সালে এখনের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনের দিকে যেতে পারব আমরা, এমনটা আশা করা যাচ্ছে৷''
জার্মানিতে যেভাবে প্রতিষেধক দেওয়া হবে
জার্মান পত্রিকা বিল্ড আম জনটাগ জানিয়েছে যে ডিসেম্বর মাস থেকে দেশজুড়ে কয়েকশ' করোনা প্রতিষেধক প্রদান সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করবে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের প্রতিষেধক তৈরির কাজে প্রাথমিক সাফল্যের খবর প্রকাশ হবার পরই এই কাজের ঘোষণা দিয়েছে জার্মান সরকার৷
২০২১ সালে সেই প্রতিষেধক প্রদানের কাজ শুরু হবে এই আশায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইতিমধ্যে ৩০ কোটি প্রতিষেধক ডোজ কিনতে বায়োনটেক-ফাইজারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে৷
এসএস/কেএম (রয়টার্স, বিল্ড আম জনটাগ)