1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাজেট-বঞ্চনার জবাব দিতে হচ্ছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যকেও

২৪ জুলাই ২০২৪

তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট নিয়ে প্রবল বিতর্ক। বিরোধীদের অভিযোগ, শুধু দুই রাজ্যকে সুবিধা দেয়া হয়েছে।

https://p.dw.com/p/4iecf
বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন নির্মলা সীতারামন।
তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে রাজ্যগুলিকে বঞ্চনার অভিযোগ। জবাব দিতে হচ্ছে বিজেপি-কেও। ছবি: Imtiyaz Khan/Anadolu/picture alliance

তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেটে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিপুল বরাদ্দের ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনো রাজ্যের নাম অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের মুখে বিশেষ শোনা য়ায়নি। তারপর থেকে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অর্থমন্ত্রী সীতারামন।

মঙ্গলবার রাতে বিরোধীদের বৈঠকে ঠিক হয়, তারা এর প্রতিবাদ জানাবেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সব রাজ্যকে গুরুত্ব দিতে হয়। তাদের সাহায্য করতে হয়। তা না করে শুধু দুই শরিক দলের নেতৃত্বাধীন রাজ্যকে ঢালাও প্রকল্পের ঘোষণা করা নিয়ে তারা সোচ্চার হবেন।

সেইমতো বুধবার লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীরা সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখান। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীদের পাশে দাঁড়িয়ে অখিলেশ যাদব, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধী দলের নেতা ও সাংসদরা মিলে রাজ্যগুলিকে বঞ্চনার অভিযোগ করেন।

পরে তারা লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন। রাজ্য়সভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, দুইটি রাজ্যকে ঢালাও দেয়া হয়েছে। বাকিদের কিছুই দেয়া হয়নি। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

অর্থমন্ত্রীর জবাব

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন খাড়গের অভিযোগের জবাব দেন। সেসময় বিরোধী সাংসদরা ওয়াক আউট করেন। নির্মলা বলেন, ভারতে বাজেট বক্তৃতায় সব রাজ্য়ের নাম কখনই বলা হয় না। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অন্যদের বঞ্চনা করা হয়েছে।

নির্মলা জানান, দিন কয়েক আগেই মহারাষ্ট্রের জন্য বিশাল অংকের টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। বাজেটে তার উল্লেখ করা হয়নি। তার মানে কি মহারাষ্ট্রকে বঞ্চনা করা হয়েছে?

তৃণমূল সাংসদরা তখন সভায় ফিরে এসেছেন। তাদের প্রতি নির্মলা বলেন, তৃণমূলের প্রতিবাদ করার কোনো অধিকারই নেই। তারা তো কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি পশ্চিমবঙ্গে রূপায়ণই করে না।

বিজেপিকেও সাফাই দিতে হচ্ছে

বেশ কয়েকটি রাজ্যে অদূর ভবিষ্যতে বিধানসভা নির্বাচন হবে। তারমধ্যে বিজেপি শাসিত হরিয়ানা ও বিরোধী শাসিত ঝাড়খণ্ড আছে।

দুই রাজ্যেও বাজেট পেশের পর বিজেপি-র তরফ থেকে বলা হয়েছে, তাদের রাজ্যকে মোটেই বঞ্চিত করা হয়নি। হরিয়ানার বিজেপি মুখপাত্র সঞ্জয় শর্মা বলেছেন, ''হরিয়ানা হলো কৃষকদের রাজ্য। কৃষি ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী যে সুবিধা দিচ্ছেন তা এখানকার কৃষকরা পাবেন। আয়কর ছাড়ের সুবিধা পাবেন চাকুরিরতরা। আর হরিয়ানা সমৃদ্ধ রাজ্য। তাদের নিজের বাজেট সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার। ফলে তারা রাজ্যের মানুষকে সাহায্য করতে পারবেন।''

ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখপাত্র প্রতুল শাহদেও বলেছেন, ''কেন্দ্রীয় সরকার জনজাতির জন্য পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে। এর ফলে ঝাড়খণ্ড উপকৃত হবে। বাজেটে ঝাড়খণ্ডের উল্লেখ না থাকলেও সব প্রকল্প তো রাজ্যেও রূপায়িত হবে।''

বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের সিদ্ধান্ত

বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীরা বিজেপি নেতাদের যুক্তি মানতে নারাজ। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, তেলেঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, হিমাচলের সুখবিুন্দর সিং সুখু, তামিলনাড়ুর স্ট্যালিন জানিয়েছেন, তারা তাদের রাজ্যকে বঞ্চনার প্রতিবাদে নীতি আয়োগের ডাকা বৈঠক বয়কট করবেন। চার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাজেটে তাদের রাজ্যকে বঞ্চনা করা হয়েছে এবং উপযুক্ত অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি।

অখিলেশের বক্তব্য

সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, ''বিজেপি রাজ্য ও কেন্দ্রে একই দলের সরকারের কথা বলে ভোট চেয়েছিল। তারা ডবল ইঞ্জিন সরকারের কথা বলেছিল। ডবল ইঞ্জিন সরকার থাকা সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশকে কিছুই দেয়া হয়নি। তাহলে ডবল ইঞ্জিন সরকার রেখে কোন কাজ হলো?''

বঞ্চনা নাকি অর্থাভাব?

কেন্দ্রীয় বাজেটের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে বঞ্চনা করার অভিযোগ নতুন নয়।  একসময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু, অন্ধ্রের এনটি রাম রাও, কর্ণাটকের রামকৃষ্ণ হেগড়েরা নিয়মিত এই অভিযোগ করতেন। পরবর্তীকালেও এই অভিযোগ উঠেছে। মোদী সরকারের আমলেও উঠছে। তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক না রাখলে রাজ্যের প্রাপ্তির ভাড়ার পূর্ণ হবে না? সুসম্পর্ক রেখে কেন্দ্রের সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বরে ছিলেন ওড়িুশার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক।

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এটা ঠিক, সুসম্পর্ক থাকলে বঞ্চনার অভিযোগ কম ওঠে। কিন্তু এবারের ছবিটা একটু আলাদা। এবার তো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকেও সেভাবে কিছু দেয়া হয়নি। আর অন্ধ্র ও বিহারের ক্ষেত্রে প্রচুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও অর্থবরাদ্দের বিষয়টিও দেখতে হবে। অন্ধ্রের ক্ষেত্রে তো বাইরের থেকে ঋণ নেয়ার বিষয়টির উপর জোর দেয়া হয়েছে।''

শুভাশিস বলেছেন, বাজেট দেখে মনে হচ্ছে, ''বর্তমান আর্থিক অবস্থায় সরকারের পক্ষে রাজ্যগুলিকে খুব বেশি কিছু দেয়া সম্ভব ছিল না। রাজনৈতিক দিক থেকে বিরোধীরা বঞ্চনার অভিযোগ তুলবেন। কিন্তু রাজনীতিকে এখন তো আর অর্থনীতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)