1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে হুমকির চেয়ে চাকরিচ্যুতি বড় চ্যালেঞ্জ

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ মে ২০১৯

মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে হত্যা, হুমকি ও কাজে বাধার চেয়ে হুট করেই চাকরিচ্যুতি, বেতন না দেয়াসহ কয়েকটি বিষয়কে প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সাংবাদিকরা৷ তাঁরা বলছেন, চাকরিই যদি না থাকে, তাহলে স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে?

https://p.dw.com/p/3HtLG
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

এসবের প্রতিকারে আগামী ৬ মে জাতীয় প্রেসকাবের সামনে সমাবেশ ডেকেছে সাংবাদিক সংগঠনগুলো৷

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর সভাপতি মোল্লা জালাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হত্যা, হুমকি, পেশাগত কাজে বাধা তো আছেই৷ কিন্তু তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুতি৷ অনেক মালিক তো বেতনই বন্ধ করে দিয়েছেন৷ ফলে চাকরি রক্ষাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ আপনার চাকরি যদি না থাকে, তাহলে স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে? আগে তো চাকরি রক্ষা করা দরকার৷ সাংবাদিকরা কাজ করেন রাষ্ট্রের স্বার্থে, মানুষের পক্ষে৷ কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকরা মাফিয়া হয়ে উঠছেন৷ হুট করেই চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছেন৷ এগুলো দেখার দায়িত্ব তো রাষ্ট্রের৷ কিন্তু রাষ্ট্র যখন এদিকে মনোযোগ না দেয়, তখন মালিকরা মাফিয়া হয়ে  ওঠেন৷ ফলে হত্যা বা হুমকির ঘটনা এখানে চাপা পড়ে যাচ্ছে৷’’

চাকরি যদি না থাকে তাহলে স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে: মোল্লা জালাল

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফিডম ডে উপলক্ষে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেখানে বাংলাদেশে গণমাধ্যম, অধিকারকর্মী ও মত প্রকাশের চর্চাকারীদের ‘হত্যা, হুমকি ও পেশাগত কাজে বাধা' দেওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে৷ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে মত প্রকাশের অধিকার খর্বের ৪৬৩টি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ৷

ভয়ভীতি প্রদর্শন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রেকে ‘অবদমিত' করছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সল৷ তিনি বলেন, ‘‘এসব অনভিপ্রেত ঘটনা মানবাধিকারকর্মী, যোগাযোগকর্মী, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পী-সাহিত্যিকদের কণ্ঠরোধে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে৷’’

পুরো চিত্র এই প্রতিবেদনে আমরা আনতে পারিনি: রুবায়েত রহমান

প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র কনসালটেন্ট রুবায়েত মল্লিকা রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, পুরো চিত্র এই প্রতিবেদনে আমরা আনতে পারিনি৷ আংশিক এসেছে৷ আমাদের সারাদেশেই একটা বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে৷ বিভাগীয় শহর ছাড়াও জেলা শহরে আমাদের প্রতিনিধি আছেন৷ এছাড়া পত্রিকা, টিভি চ্যানেল ও অনলাইনগুলো আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি৷ সেভাবেই আমাদের প্রতিবেদন তৈরি হয়৷ আমি এবং ফারুক ফয়সল দু'জনই খুব অল্পদিন আগে এখানে এসেছি, ভবিষ্যতে আমাদের এগুলো নিয়ে বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে আছে৷’’

আর্টিকেল নাইনটিন-এর প্রতিবেদনে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো এমন:

·       ২০১৮ সালে মত প্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত মোট ৪৬৩ টি ঘটনা পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ

·       অধিকার লঙ্ঘনের শতকরা ৫১ ভাগ ঘটনাই ঘটেছে জাতীয় পর্যায়ে, ঢাকায়৷

·       নারীকর্মীদের যৌননিপীড়ন-হয়রানির ঘটনার বেশীরভাগই তথ্য-প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট

·       ২০১৮ সালে মতপ্রকাশজনিত মোট ১৩১টি ঘটনায় আইনের অপব্যবহার হয়েছে

·     শুধু মতপ্রকাশজনিত কারণে মোট ৩১টি ফৌজদারি মানহানি মামলা হয়েছে

·    ৭১টি মামলা করা হয়েছে আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায়

·     ৯টি বেআইনি আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাসহ ২০টি বিভিন্ন ধরনের হয়রানিমুলক মামলা হয়েছে

·     ২০১৮ সালে মোট ২ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন

·       ১৯ জন মতপ্রকাশ-কর্মী মারাত্মক শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন

·     ১৫৬ জন মতপ্রকাশের চর্চাকারী বিভিন্নভাবে শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছেন

প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০১৮ সালে মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে হুমকি ও নানা ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দমনের চিত্রই বেশি লক্ষণীয়৷ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে মতপ্রকাশের চর্চা রোধে সংগঘটিত অপরাধের দ্রুত বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইটনটিন৷

পেশাদার সাংবাদিকতা উঠে যাচ্ছে: ডিইউজে সভাপতি

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)-র সভাপতি আবু জাফর সূর্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে সংবাদপত্রের মালিকরা এটাকে কর্পোরেট কালচারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন৷ এখানে পেশাদার সাংবাদিকতা উঠে যাচ্ছে৷ ফলে মালিকরা ইচ্ছে মতো কর্মীদের ছাঁটাই করছেন, বা বিনা নোটিশে অফিসে যেতে মানা করছেন৷ এখানে যদি পেশাদার সাংবাদিকতা গড়ে ওঠে, তাহলে এগুলো অনেক কমে যাবে৷ তবে এখানে হত্যার হুমকি এত বেশি আছে বলে আমি মনে করি না৷ আর্টিকেল নাইনটিনের প্রতিবেদনে যেটা বলা হয়েছে, হত্যার হুমকির কথা, আমার মনে হয় চিত্রটা এমন নয়৷ আসলে এখানে সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে৷’’

মালিকদের রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বড় বাধা: নূর খান

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অধিকাংশ সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের মালিকরা ব্যবসায়ী৷ ফলে তাঁদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় সংবাদ মাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছেন৷ পাশাপাশি এখানে মালিকদের রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তিও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বড় বাধা৷ এর মধ্যে আমরা দেখেছি, কিছু টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানা বদল হয়েছে৷ যেভাবে এটা হয়েছে, বা যাদের বসানো হয়েছে, সেটা তো রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তির জন্যই৷ ফলে এখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না৷’’