1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় আরসা

আরাফাতুল ইসলাম | নাওমী কনরাড | স্টেফান চিমেক কক্সবাজার
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে কঠোর ইসলামি আইন চালুর চেষ্টা করছে আরসা৷ পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যোদ্ধাদের৷ ডয়চে ভেলের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য৷

https://p.dw.com/p/3Q8e9
ছবি: DW/ P. Vishwanathan

মিয়ানমারের রাখাইনে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একযোগে পুলিশের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালিয়েছিল৷ সেই হামলার জবাবে সেদেশের সেনাবাহিনী কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করে, জ্বালিয়ে দেয় কয়েকটি গ্রাম৷ ফলে সেদেশ থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেন বেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গা৷ সেখানে আগে থেকে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে নতুনরা যোগ হওয়ায় এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরটির অবস্থান বাংলাদেশে৷

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর পথঘাটে রাতের বেলা কার্যত কোনো সাধারণ মানুষ হাঁটাচলা করেন না৷ দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়নকর্মীরা ছাড়াও রোহিঙ্গা নয় এমন মানুষদের রাতের বেলা শিবিরগুলোতে অবস্থানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷

রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ আছে, অস্ত্র নেই

আগস্টের এক রাতে সেই শিবিরে প্রবেশ করে দেখা গেল এক রাস্তায় দু'জন টর্চের আলো ফেলতে ফেলতে দ্রুত চলে যাচ্ছেন৷ বৃষ্টি পড়ছিল তখন, রাস্তা ছিল কর্দমাক্ত৷ দূরে একটা কুকুর ডাকছিল৷ আর আলোর স্বল্পতায় চারপাশটা বেশ ভৌতিক মনে হচ্ছিল৷ 

রাস্তার কোণায় একটি ঘরের কিনারায় কয়েকজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল, যারা নাকি শিবিরগুলোতে ‘ওয়াচম্যান' হিসেবে কাজ করেন৷ শিবিরের ভেতর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঠেকানো তাদের কাজ৷

সবমিলিয়ে রাতের বেলা রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একধরনের অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করে৷ এমনকি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও গাড়িতে যাওয়া যায় না এমন স্থান এড়িয়ে চলেন৷

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনাখুনি

সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে খুন হওয়া এক ব্যক্তির স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে আমরা রাতের বেলা একটি শিবিরে প্রবেশ করেছিলাম৷ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা সেই নারী দিনের বেলা কথা বলতে কোনোভাবেই রাজি হননি৷ তাঁর ধারণা, তাঁর স্বামীকে খুন করা গোষ্ঠীটি তাঁর উপর নজর রাখছে৷

সেই নারীর ছোট্ট ঘরে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, দুই ছোট্ট শিশুকে নিয়ে কোনোক্রমে জীবনযাপন করছেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় একটি শিশু তাঁর কোলে ছিল, অন্যটি ঘরের মেঝেতে খেলছিল৷ ঘরের মধ্যে আসবাব বলতে ছিল একটি চেয়ার আর একটি পাতলা ম্যাট্রেস, যেটি কার্যত ঘরের অর্ধেক জায়গা দখল করে রেখেছিল৷

যদিও তাঁর ঘরের চালে বৃষ্টি পড়ায় অনেক শব্দ হচ্ছিল, তারপরও তিনি ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের আস্তে কথা বলছিলেন, যাতে প্রতিবেশীরা তাঁর কথা শুনতে না পারেন৷ তিনি জানান যে, তাঁর স্বামী রোহিঙ্গাদের ভালো চাইতেন৷

‘‘তিনি রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে অন্যায়, অপকর্ম রুখতে চাইতেন,'' বলেন তিনি৷

ডয়চে ভেলে সেই নারী এবং তাঁর নিহত স্বামীর পরিচয় জানে৷ তবে তিনি যেহেতু এখনো নজরদারিতে আছেন বলে জানিয়েছেন, তাই তাদের পরিচয় এবং অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি৷

তবে একটি বিষয় পরিষ্কার: রোহিঙ্গা শিবিরে সেই নিহত ব্যক্তির ভূমিকা খুব শক্তিশালী কোনো গোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল, যারা তাঁকে খুন করতে দ্বিধা করেনি৷ 

রোহিঙ্গা শিবিরে সক্রিয় আরসা

‘‘যারা তাঁকে হত্যা করেছে, তারা আল-ইয়াকিন গোষ্ঠীর সদস্য,'' বলেন সেই নারী৷

তিনি যে নামটি বলেছেন, সেটি আসলে রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একটি গোষ্ঠীর সাবেক নাম৷ গোষ্ঠীটি ২০১৬ সালে নিজেদের নাম পরিবর্তন করে আরকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি (আরসা) রাখে৷ সৌদি আরব এবং পাকিস্তানে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের একটি ছোট্ট গ্রুপ এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছে৷ তারা রোহিঙ্গাদের জন্য স্বায়ত্বশাসন চায়৷ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তবে দেশটির সরকার তাদেরকে সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি৷

অধিকাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য রাখাইনের বাসিন্দা৷ সেখানে তারা অনেক বিধিনিষেধের মধ্যে জীবনযাপন করেন৷ এমনকি বিয়ে করতেও কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়৷ বর্তমানে অবশ্য রাখাইনের চেয়ে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি৷

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে ত্রিশটি পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি এবং একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয় আরসা৷ মিয়ানমারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেসব হামলায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য নিহত হয়েছিল৷ এর আগে ২০১৬ সালেও এরকম হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি৷

আরসার এসব হামলার ফলে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান বেড়ে যায় এবং আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে৷ রোহিঙ্গাদের কয়েকটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ এবং বোমাবর্ষণ করে সেনাবাহিনী৷ সেই অভিযানে অনেক রোহিঙ্গা নিহত হন এবং অনেক নারী হন ধর্ষণের শিকার৷ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘‘জাতিগত নিধনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ'' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷

সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে সেসময় সাত লাখ ত্রিশ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন৷ তাদের কেউ কেউ নৌকা বা ভেলায় করে নাফ নদী পাড়ি দিয়েছেন, কেউবা দুর্গম পাহাড়ি পথে পায়ে হেঁটে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন৷

রোহিঙ্গা শিবিরে আরসা কতটা প্রভাবশালী?

বাংলাদেশ সরকার তখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়েছে৷ আগে থেকে রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার যে অঞ্চলে বসবাস করতেন সেখানকার আশেপাশের বনজঙ্গল সাফ করে নতুনদের জন্য আশ্রয় শিবির গড়ে দিয়েছে৷ ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এই এলাকায় এখন দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছন৷ বিশাল সংখ্যক এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে কিছু আরসা সদস্যও রয়েছেন৷

নারী এবং চরদের হুমকি

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে কর্মরত কয়েকজন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, শিবিরগুলোতে সম্ভবত কয়েকটি ‘রক্ষণশীল গোষ্ঠী' শরিয়া আইন চালুর চেষ্টা করছে

একজন বিদেশি উন্নয়নকর্মী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠানের বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গা নারী হুমকির শিকার হয়েছেন৷ তাদের কয়েকজন হুমকি পেয়ে এতই ভীত হয়ে পড়েছেন যে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যে অল্প কিছু রোজগার হতো সেই রোজগারের মায়া ছেড়ে দিয়েছেন৷ তাঁরা আর কাজ করছেন না বলে জানিয়েছেন সেই উন্নয়নকর্মী৷

বিষয়টি এমন যে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী শরণার্থী শিবিরগুলোতে সক্রিয় রয়েছেন৷ সেগুলোর কয়েকটি সম্ভবত আরসার নামে পরিচালিত হচ্ছে৷ আবার কিছু আছে সুবিধাবাদী সন্ত্রাসীদের গোষ্ঠী৷ 

আর শরণার্থী শিবিরগুলো এমন এক স্থানে অবস্থিত যেটি ইয়াবা নামের এক মাদক পাচারের আন্তর্জাতিক রুটের অংশ৷ এই অঞ্চলে অনেক সন্ত্রাসী দল সক্রিয় রয়েছে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের গোলাগুলি এক নিয়মিত ঘটনা৷

বাংলাদেশ সরকার অবশ্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আরসার কোনো উপস্থিতি নেই৷ ঢাকায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে. আব্দুল মোমেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে আরসা নেই৷ তারা মিয়ানমারে আছে, এখানে নয়৷ আমরা যদি এখানে তাদের কাউকে পাই, তাহলে ধরে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেবো৷''

তবে, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আরসা এমনই এক নাম, যেটি শুনলে যেকারো কান খাড়া হয়ে যায় এবং এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়৷ এই গোষ্ঠীর চর, যাদের মধ্যে শিশু-কিশোররাও আছে, সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷

রোহিঙ্গারা পতিতাবৃত্তিতে জড়াচ্ছেন কেন?

ডয়চে ভেলের পক্ষে অবশ্য আরসার চরসংক্রান্ত এই তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷ তবে এটা পরিষ্কার যে অনেকেই একথা বিশ্বাস করেন এবং আরসা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন৷ ফলে, আরসার প্রতি রোহিঙ্গা শিবিরে কতটা সমর্থন রয়েছে তা বোঝা কঠিন৷

আরসা বিচ্ছিন্নতাবাদী: ‘‘আমরা তোমাকে স্বাধীনতা দিতে এসেছি''

ডয়চে ভেলের সাংবাদিকরা কয়েক সপ্তাহ চেষ্টা করার পর স্থানীয় এক সূত্রের মাধ্যমে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ সক্ষম হয়, যিনি নিজেকে আরসার সদস্য বলে দাবি করেন৷ ডয়চে ভেলের পক্ষে সেই ব্যক্তির পরিচয় এবং বক্তব্য আলাদাভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি৷ তবে তিনি যা বলেছেন, তার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণায় প্রকাশিত তথ্যের মিল রয়েছে৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে সেই ব্যক্তি ক্যাম্পের বাইরে একটি নির্জন স্থানে দেখা করেন৷ তিনি লম্বা এবং সুঠোম দেহের অধিকারী৷ তাকে দেখলে মনে হয় তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি৷

সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তিনি কিছুটা স্নায়বিক চাপে ছিলেন বলে মনে হয়েছে৷ তিনি একটু পরপরই আশেপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন৷ কথা বলার সময় তাঁর এক হাতে একটি মোবাইল ফোন ছিল এবং অন্য হাত দিয়ে তিনি ঘাস নাড়ছিলেন৷

তিনি জানান যে, আরসায় যোগ দিতে ২০১৭ সালে শপথ গ্রহণ করেন তিনি৷ সেটা ছিল পুলিশের নিরাপত্তা চৌকিতে হামলা চালানোর অল্প কিছুদিন আগের ঘটনা৷ সেসময় বেশ কয়েকজন মানুষ তাদের গ্রামে গিয়ে জানতে চান যে, তারা তাদের করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি চান কিনা৷

‘‘তারা বলেন যে, তোমাদের নিজেদের দেশে তোমাদের কোনো অধিকার নেই৷ আমরা এখানে তোমাদের দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি৷ তোমরা যদি তাতে রাজি থাকো তাহলে আমাদের সাথে যোগ দাও,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন আরসা সদস্য৷

তিনি বন্দুক চালানো এবং রাস্তার পাশে বোমা পোতার মতো প্রাথমিক সামরিক প্রশিক্ষণ পেয়েছেন বলেও জানান৷

এই ব্যক্তির মতো আরো বেশ কয়েকশত গ্রামবাসী ২০১৪ সালে আরসায় যোগ দিয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা আইসিজি'র এক গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে৷

যারা ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া ব্যক্তির গ্রামে গিয়েছিলেন, তারা সৌদি আরব এবং পাকিস্তান থেকে আসা রোহিঙ্গা বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

পাকিস্তানি তালেবান কি আরসা নেতাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে? 

আইসিজি'র তথ্য অনুযায়ী সৌদি আরবভিত্তিক একদল রোহিঙ্গা আরসা প্রতিষ্ঠা করেন৷ রোহিঙ্গা মুসলিমদের এই গোষ্ঠীর প্রধান হচ্ছেন আতাউল্লাহ নামের এক ব্যক্তি, যার জন্ম হয়েছিল পাকিস্তানে এক শরণার্থী পরিবারে এবং অল্প বয়সেই তাঁর পরিবার তাঁকে নিয়ে সৌদি আরব চলে যান৷সেখানে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন তিনি৷

আর রাখাইনে গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে রয়েছেন একদল ব্যক্তি, যাদের আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মতো দেশে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে৷

আতাউল্লাহসহ কয়েকজন পাকিস্তানি তালেবানের (টিটিপি) কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন৷ টিটিপির এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন যে, অতীতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি৷ তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার অনুরোধ তালেবান ফেলতে পারেনি বলেও জানান তিনি৷

কক্সবাজারে ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া আরসা সদস্য জানান যে, রোহিঙ্গাদের মুক্তির স্বাদ দিতে কাজ করছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীটি৷ তিনি বলেন, ‘‘আরসা প্রত্যেকের জন্য একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে চায়৷''

অবশ্য এই সুন্দর জীবনের অর্থ কী সেটা নিয়ে তাঁর মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ আরসা শরিয়াভিত্তিক ইসলামিক আইন চালুর পক্ষে৷ কক্সবাজারের একটি শরণার্থী শিবিরে থাকা তাঁর কমান্ডার একবার আরসা যোদ্ধাদের এই নির্দেশনা দিয়েছেন যে, যেসব নারী ঠিকভাবে পর্দা করেন না, তাদের যেন শাস্তি দেয়া হয়৷

‘‘আমরা যদি এমন কোনো নারীকে দেখতে পাই যে ঠিকমতো বোরকা পরেনি এবং তার অনাবৃত হাত দেখা যাচ্ছে, তাহলে তাকে আঘাত করতে পারি,'' বলেন তিনি৷

‘পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে’

তিনি এটাও স্বীকার করেছেন যে, রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন উন্নয়নসংস্থায় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা নারীদের হুমকি দিয়েছে আরসা

‘‘মেয়েদের কাজ করা উচিত নয়, কেননা, ইসলাম ধর্ম এটা অনুমোদন করে না,'' বলেন মধ্যত্রিশ বয়সের এই ব্যক্তি৷

রোহিঙ্গা শিবিরে সাড়ে তিন হাজার আরসা যোদ্ধা?

এই আরসা সদস্য আরো জানান যে, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে মিয়ানমারের চর হিসেবে কাজ করে এমন কাউকে পেলে তাকে হত্যা করে আরসা৷ ইতোমধ্যে এরকম কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷ তিনি দাবি করেন, আরসা কখনো কখনো মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণও করে৷ 

তবে রোহিঙ্গা শিবিরে কাউকে হত্যা করার ঘোর বিরোধী আরসার এই সদস্য৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে সমস্যা তৈরি করলে এবং মানুষ হত্যা করলে বাংলাদেশ সরকারও যদি আমাদের মারতে শুরু করে? এজন্য আমি এদেশে আরসার খুনখারাবিকে সমর্থন করি না৷''

তাঁর মতে, আরসার উচিত মিয়ানমারে সংগ্রামের দিকে মনোযোগ দেয়া৷

তিনি দাবি করেন, কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে সাড়ে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা যোদ্ধা রয়েছে৷ আর নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে আলাদা আলাদা গ্রুপে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারে চলে যান৷

তবে আরসার পক্ষে শীঘ্রই রাখাইনে বড় ধরনের কোনো হামলা চালানো সম্ভব মনে করছেন না তিনি৷ কারণ, গোষ্ঠীটির অস্ত্র এবং গোলাবারুদের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে৷ ‘‘কেউ আমাদের সাহায্য করছে না,'' বলেন তিনি৷

‘‘আমরা যদি পর্যাপ্ত সহায়তা এবং অস্ত্রসস্ত্র পাই, তাহলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে হত্যা করতে পারবো,'' বলেন তিনি৷

তবে বর্তমানে সেটা এক অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয় বলেও মানেন তিনি৷

ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়ার এক পর্যায়ে তাঁর মোবাইল ফোনটি বাজতে শুরু করে৷ তিনি তখন কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন এবং ফোনটি বন্ধ করে সেটির ব্যাটারি খোলার চেষ্টা করতে থাকেন৷

তিনি বলেন, কেউ সম্ভবত তাঁকে দেখেছে, ফলে তাঁকে ফোন করছে৷ এক পর্যায়ে তিনি নিরবে কাঁদতে শুরু করেন৷

কিছুক্ষণ পর তিনি বলেন, ‘‘দয়া করে আমার চেহারার ছবি প্রকাশ করবেন না৷ তাহলে তারা আমাকেও মেরে ফেলবে৷''

ডয়চে ভেলের আব্দুল সাত্তার প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য