1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক ব্লগারের স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

৩ এপ্রিল ২০১৩

গোয়েন্দা পুলিশের বার্তা পেয়ে ব্লগার স্বামী গিয়েছিলেন দেখা করতে৷ কিন্তু রাতে আর ফেরেননি তিনি৷ রাতভর জেগে থেকে স্ত্রী তাই সকালে গেছেন গোয়েন্দা কার্যালয়ে, বিকেলে আদালতে৷ ইচ্ছা ছিল, স্বামীকে নিয়ে ঘরে ফিরবেন৷ হলো না৷

https://p.dw.com/p/188Ml
ছবি: REUTERS

ঢাকায় তিন ব্লগার গ্রেপ্তারের খবর এখন সবার জানা৷ এদেরই একজন মশিউর রহমান বিপ্লব৷ এক কন্যা এবং স্ত্রী ড. সানজিদা পারভীনকে নিয়ে সংসার তাঁর৷ সোমবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মশিউরকে ডেকে পাঠায়৷ ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের পর এরকম আরো কয়েকবার গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়েছেন তিনি৷ সেটা রাজীবের খুনিদের বিচারে সহায়তার জন্য৷ মশিউরের স্ত্রী সানজিদার তাই ভাবনার কোনো কারণ ছিল না৷

কিন্তু রাতের দিকে বদলে গেল পরিস্থিতি৷ কথা বলার জন্য ডেকে নিয়ে বিপ্লবকে আটক করে গোয়েন্দারা৷ রাতের বেলা তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া হয়৷ ঘটনার আকস্মিকতায় দিশেহারা হয়ে পড়েন সানজিদা৷ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার তাঁর স্বামী৷ অথচ তাঁকেই কিনা রাতারাতি গ্রেপ্তার করা হলো!

দুশ্চিন্তায় সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে সকালেই তিনি ছোটেন গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে৷ কিন্তু ততক্ষণে ‘ধর্মীয় উস্কানিমূলক' লেখালেখির কথিত অভিযোগ উঠেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে৷ মশিউরকে আরো দুই ব্লগারসহ সাধারণ অপরাধীর মতো হাজির করা হয়েছে গণমাধ্যমের সামনে৷ অথচ উচ্চ আদালতের পরিষ্কার নির্দেশ রয়েছে, গ্রেপ্তার বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া কোন ব্যক্তিতে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা যাবে না৷ কিন্তু আদালতের এই নির্দেশনা গোয়েন্দা পুলিশ মানেনি৷

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে সংগ্রামরত স্বামীকে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকারের মেয়াদকালে এভাবে দেখাটা কল্পনারও বাইরে ছিল সানজিদার৷ বেদনায় নীল এই নারী তবুও হাল ছাড়েননি৷ ছুটেছেন আদালতে৷ স্বামীর জন্য জামিন আবেদন করেছেন৷ কিন্তু সেই আবেদন আমলে নেননি আদালত৷ বরং পুলিশের দশ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্লগার সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক৷

একদিনে এত ধকল সহ্য করা একজন নারীর পক্ষ সহজ নয়৷ কিন্তু সানজিদা লড়ে যাচ্ছেন৷ ডয়চে ভেলেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তাঁর কথা মাঝোমাঝেই আটকে যাচ্ছিল৷ ক্রন্দনরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি জানালেন, আদালত থেকে এইমাত্র ফিরলাম৷ এখন মশিউরের জন্য জামাকাপড় নিয়ে যেতে হবে৷ ওকে আরো সাতদিন আটকে রাখবে৷

মশিউরদের আটকের খবরে গোটা ব্লগ সম্প্রদায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে৷ তাঁদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ব্লগাররা৷ ব্লগ সাইট ‘আমারব্লগ’ নিজেদের সকল কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে৷

সানজিদা নিজেও ব্লগার৷ স্বামীর লেখালেখির খবর তিনি ভালোই রাখেন৷ তিনি অকপটে জানালেন, তাঁর স্বামী ধর্মে বিশ্বাস করেন না৷ কিন্তু তাই বলে তিনি কখনো কাউকে গালি দেননি৷ কখনো ধর্মীয় কটুক্তি করে কোন মন্তব্যও করেননি৷ বরং সবসময় নিয়ন্ত্রিত কথাবার্তা বলেছেন৷

সানজিদা মনে করেন, তাঁর স্বামীকে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এবং এই গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে খুব নিরীহ ধরনের তিনজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘খুব নিরীহ তিনজন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ যারা একেবারে ছাপোষা, কিছু করতে পারবে না৷'

Screenshot der Internetseite www.amarblog.com
ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে বন্ধ ‘আমারব্লগ’ছবি: www.amarblog.com

গত কয়েক বছর ধরে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে লেখালেখির পর স্বামীর এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছেন না সানজিদা৷ তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘বাংলাদেশ থাকবে রাজাকার মুক্ত – এই অবস্থান থেকে আমরা গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি৷ এখন এই অবস্থানে থাকার পরও যদি (বর্তমান সরকারের আমলে) আমাদের জেল খাটতে হয়, সেটা খুবই দুঃখজনক৷ তাহলে তো শিবির করলেই ভালো ছিল৷''

সানজিদা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে নীতির কোনো দাম নেই৷'’ দাম থাকলে আজ বিপ্লবদের মতো ব্লগাররা হেনস্থার শিকার হতেন না৷ জেল খাটতেন না৷

এতকিছুর পরও সানজিদার চাওয়াটা সীমিত৷ শুধু চান, মশিউরকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হোক৷ তাঁর আট বছর বয়সি কন্যা যে বসে আছে বাবার প্রতিক্ষায়!

সাক্ষাৎকার: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের মানুষ (ফাইল ফটো)
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

প্রথম পাতায় যান