1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের শ্রমিকদের ইইউ ও জার্মানির সহায়তা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ ডিসেম্বর ২০২০

বাংলাদেশে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক, বিশেষ করে পোশাক শ্রমিকরা এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকার (১১৩ মিলিয়ন ইউরো) নগদ সহায়তা পাচ্ছেন৷ এই সহায়তা দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি৷ চলতি মাসেই এই সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3malC
পোশাক শ্রমিক
ছবি: DW/S. Hossain

রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিক ছাড়াও চামড়া এবং পাদুকা শিল্পের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরাও এই সহায়তা পাবেন৷

বাংলাদেশ সরকারের ‘আরএমজি (তৈরি পোশাক), চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের বেকার ও অসহায় শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির’ অধীনে বাংলাদেশকে এই সহায়তার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে৷

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং ইইউর উন্নয়ন সমন্বয় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিন লুই ভিল এ চুক্তিতে সই করেছেন৷

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত ২ ডিসেম্বরের এ চুক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা শিল্পে বেকার ও অসহায় শ্রমিকদের লক্ষ্য করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য মোট ১১৩ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ইইউ ৯৩ মিলিয়ন এবং জার্মানি ২০ মিলিয়ন ইউরো বাংলাদেশকে দেবে৷

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রম অধিদপ্তর চার ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে৷ এই কর্মসূচির আওতায় যারা কাজ হারিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে সর্বোচ্চ মাসের জন্য ৩ হাজার টাকা করে দেয়া হবে৷ এই টাকা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যাবে৷ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হলে, চলতি ডিসেম্বর থেকেই শ্রমিকদের এই অর্থ সহায়তা শুরু হওয়ার কথা৷

প্রকৃত বেকাররা যাতে এই সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন: সিরাজুল ইসলাম রনি

ঢাকায় ইইউ'র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দিতেই এই সহায়তা দেয়া হচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনসে তারিঙ্ক বলেন, ‘‘এই সহায়তার উদ্দেশ্য হলো রপ্তানি খাতে যেসব শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তাদের জীবিকা ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়া৷ বেকার, দুস্থ এবং সাময়িক বেকার শ্রমিকদের সহায়তা করা৷’’

জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহোলৎজ বলেন, ‘‘বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের কর্মীদের এই সহায়তা দীর্ঘদিনের সহায়তার অংশ৷ করোনা মহামারির এই কঠিন সময়ে আমরা শ্রমিকদের জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করতে পেরে আনন্দিত৷ এর ফলে তাদের ওপর করোনার নেতিবাচক প্রভাব কিছুটা হলেও কমবে৷’’

এই সহায়তাকে শ্রমিকদের জন্য ইতিবাচক বললেও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বাছাই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং প্রকৃতই ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা যাতে পায় তা নিশ্চিতের দাবি জনিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস কর্মচারী ঐক্য লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি৷ তিনি বলেন, ‘‘সরকারের কাছে একটি ডাটাবেজ আছে চাকরি হারানো শ্রমিকদের৷ এটা আপডেট করা প্রয়োজন৷ কারণ, পোশাক কারখানা আবার ভালোর দিকে যাচ্ছে৷ তাই কেউ কেউ আবার চাকরি পেয়েছে৷ প্রকৃত বেকাররা যাতে এই সহায়তা পায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷’’ তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে এই করোনায় দুই লাখ ৫০ হাজার পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছিল৷

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন, ‘‘এই অর্থ বিজিএমইএ'র শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডে দিলে সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সহায়তা করা যাবে৷ তবে বেকার শ্রমিক এখন আর তেমন নেই৷’’ তিনি বলেন, ‘‘মাসে তিন হাজার টাকায় শ্রমিদের তো চলবে না৷ আমরা কল্যাণ ফান্ড থেকেও এর সঙ্গে যোগ করতে পারি৷’’

বেকার শ্রমিক এখন আর তেমন নেই: সিদ্দিকুর রহমান

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অর্থ বিরতরণ করা হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে৷ আর পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করবে শ্রম অধিদপ্তর৷ শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল লতিফ খান বলেন, ‘‘তালিকা তৈরির কাজ চলছে৷ আমরা চার ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টস, নীট ওয়্যার, পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য শিল্পের অ্যাপেক্স বডির সাথে কাজ করছি৷ সেখান থেকে তালিকা চূড়ান্ত করবো৷ অর্থ ছাড় করবে অর্থমন্ত্রণালয়৷ শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাবে৷’’

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দিপু বলেন, ‘‘আসলে বেকার শ্রমিকদের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে করোনার এই সেকেন্ড ওয়েভের পর৷ কারণ, আগে যারা কাজ হারিয়েছেন, তাদের প্রায় সবাই কাজ ফিরে পেয়েছেন৷’’

তবে এই তালিকা নিয়ে পোশাক কারখানা নিয়ে যেসব এনজিও এবং শ্রমিক সংগঠন কাজ করে, তাদেরও যুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিআইডিএস-এর অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘‘এর সাথে মালিকদের কল্যাণ ফান্ডও যুক্ত করা যায়৷’’

গত মে মাসে ইইউ করোনায় বাংলাদেশকে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা (৩৩ কোটি ৪০ লাখ ইউরো) সহায়তা দেয়ার কথা জানায়৷ এর মধ্যে চার কোটি ৮০ লাখ ইউরো দিচ্ছে জার্মানি৷ খাদ্য নিরাপত্তা, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য এই সহায়তা৷

এসবের বাইরে জার্মানি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ছয় হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করেছে৷

১ জুলাইয়ের ছবিঘরটি দেখুন..

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য