শহরে শিশু শ্রমিক
স্বোচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অ্যাসিসটেন্স ফর স্লাম ডুয়েলার্স (এএসডি)' বা বস্তিবাসীর সাহায্য সংগঠন জার্মানির ‘ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ড' নামের একটি চ্যারিটি সংগঠনের সহায়তায় ঢাকায় শ্রমজীবী শিশুদের নিয়ে কাজ করছে৷ রাজধানীর বাসা-বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে এরকম ৩০০ শিশুর ওপর গবেষণা করেছে তারা৷ এএসডি-র গবেষণায় দেখা গেছে যে, রাজধানীর অন্ততপক্ষে ৪৫ ভাগ বাড়িতে শিশুরা গৃহকর্মে নিয়োজিত৷ আর তাদের অধিকাংশের বয়স ১৩ থেকে ১৫ বছর৷
এএসডি-র গবেষক আব্দুল্লাহ জাফর ডয়চে ভেলেকে জানান, এই শিশুরা গৃহে কাজ করতে গিয়ে নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে৷ তাদের ধারালো বস্তু বা খুন্তি দিয়ে আঘাত করা হয়৷ তাদের ক্ষমতার বাইরে ভারি বস্তু বহন করতে হয়৷ দীর্ঘ সময় ধরে গরম চুলার পাশে অবস্থান করতে হয় তাদের৷
এখানেই শেষ নয়৷ কাজের পরও তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হয় না৷ আর ঘুমাতে দেয়া হয় অপরিষ্কার ও অস্বাস্থ্যকর জায়গায়৷ এভাবেই তারা সহানুভূতিহীন পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ এই শিশুদের জন্য কোনো শ্রমঘণ্টা নির্দিষ্ট নেই৷ নেই কাজের কোনো চুক্তি বা লিখিত নিয়োগ-পত্র৷ এত সব কাজের পরও তাদের বেতন মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা৷ উল্লেখ্য যে, গৃহ কর্মে নিয়োজিত এই শিশুদের মধ্যে ৮০ ভাগই মেয়ে৷ ফলে তাদের ওপর যৌন নির্যাতনও চালানো হয়৷ এমনকি ছেলেরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়৷
আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, ঢাকার বাসা-বাড়িতে প্রায় দেড় লাখ শিশু কাজ করে৷ এই শিশুরা সাধারণত গ্রাম থেকে আসে৷ শহরে গৃহকর্মে নিয়োজিত হওয়ায় তাদের নেই দুরন্ত শৈশব৷ আনন্দহীন জীবনে তাদের সামনে এক ধুসর ভবিষ্যত ছাড়া আর কিছুই নেই৷ পড়াশোনা তো দূরের কথা, অসুস্থ হলে চিকিত্সাও হয় না তাদের৷ আব্দুল্লাহ জাফর বলেন, শিশুদের গৃহকর্মে শ্রম দাস বানানো হচ্ছে৷ এরা শিশু শ্রম দাস – যা আমাদের জন্য লজ্জা এবং অপমানের৷
তিনি বলেন, সরকার শিশু অধিকার আইন করেছে৷ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করেছে৷ কিন্তু গৃহকর্মে নিয়োজিত এই শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ তাই শুধু আইন করলে হবে না, এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷ আর যারা গৃহকর্মে শিশুদের নিয়োগ করছেন, তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে৷ এই শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেন না করানো হয়, সেটা দেখতে হবে৷ এছাড়া, কাজের ফাঁকে তাদের পড়াশোনা এবং চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কারণ, সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম পুরোপুরি বন্ধের কথা বললেও বাংলাদেশের অর্থ সামাজিক অবস্থায় তা সময় সাপেক্ষ৷