1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ৪৫০ কোটি ডলারের একটি ঋণ চুক্তি সই করেছে৷ বুধবার স্বাক্ষরিত এই চুক্তি দু' দেশের মধ্যে তৃতীয় ঋণচুক্তি৷ শতকরা এক টাকা সুদে ২০ বছরে এই ঋণ শোধ করতে হবে বাংলাদেশকে৷

https://p.dw.com/p/2lCoE
ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিছবি: bdnews24.com

বুধবার ঢাকায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)-এর সচিব এবং ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন৷ চুক্তি সইয়ের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং ঢাকা সফররত ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি উপস্থিত ছিলেন৷

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এটি তৃতীয় ক্রেডিট লাইন (এলওসি) চুক্তি৷ গত এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বাংলাদেশের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি ক্রেডিট লাইনের ঘোষণা দেয়া হয়৷ গত ছয় বছরে বাংলাদেশকে ভারতের দেওয়া সর্বমোট ক্রেডিট লাইনের পরিমাণ দাঁড়াল ৮০০ কোটি ডলার৷ তৃতীয় ক্রেডিট লাইন চুক্তি সইয়ে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারভিত্তিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সংক্রান্ত একটি যৌথ ইন্টারপ্রেটিভ নোটও সই হয় বুধবারের অনুষ্ঠানে৷

Arun Jaitley Dhaka Bangladesch Indien
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতছবি: bdnews24.com

চুক্তি সইয়ের পর ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘তৃতীয় ঋণ চুক্তি সইয়ের ফলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, রেলপথ, সড়ক, জাহাজ চলাচল, বন্দর ইত্যাদিসহ ১৭টি অগ্রাধকিারভিত্তিকি উন্নয়নমূলক প্রকল্পল্পের অবকাঠামোতে উন্নয়ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে৷ এ ঋণে সুদের হার বছরে এক শতাংশ, যা ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে৷’’

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘‘ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু৷ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে৷ এ ঋণ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সুসম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ৷’’

তিনি জানান, ‘‘ভারত থেকে নেওয়া ক্রেডিট লাইনের প্রথম পর্যায়ে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ তবে দ্বিতীয় পর্যায়ের দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাস্তবায়ন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি, তা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে৷ এবার তৃতীয় ধাপের ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হবে৷ এ জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে৷ মূলত এ ঋণের অর্থ ব্যয় হবে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে৷’’

তৃতীয় ঋণচুক্তির প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিতরণ অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের বহুমুখী টার্মিনাল নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার ও তীর সংরক্ষণ, কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন তৈরি, মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ, এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডাবলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নতকরণ, বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা সড়ককে চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, ঈশ্বরদীতে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ, মোংলা বন্দর উন্নয়ন, চট্টগ্রামে ড্রাই ডক নির্মাণ, মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট থেকে রামগড় পর্যন্ত চার লেনে সড়ক উন্নীত করা, মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ এবং মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রেলপথ নির্মাণ৷

ভারত প্রতিবেশী দেশকে সাধারণভাবে সহায়তা করছে বিষয়টি আর এমন নয়: ড: নাজনীন

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর অর্থনীতিবিদ ড, নাজনীন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার যে খাতগুলোকে কেন্দ্র করে ঋণ চুক্তি হয়েছে তা বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরর জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে বিদ্যুৎ, সড়ক ,রেল অবকাঠামো,বন্দর এগুলো বাংলাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগে কাজ দেবে৷ অন্যদিকে ভারত উপকৃত হবে কানেকটিভিটির দিক থেকে৷’’

ড. নাজনীন বলেন, ‘‘আজ (বুধবার) ভারতের অর্থমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত ছিলাম৷ সেখানে তাঁর কথা শুনে মনে হয়েছে ভারত প্রতিবেশী দেশকে সাধারণভাবে সহায়তা করছে, বিষয়টি আর এমন নয়৷ ভারত এখন বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উন্নয়নের অংশীদার মনে করছে৷ ভারতের কাছে তার নিজের অর্থনেতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা খুবই ইতিবাচক৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘তবে ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে৷ আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ের ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি৷ এই ঋণ নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ আছে৷ এবার যেন সেরকম না হয়৷ আর  কোনো নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব যেন এই ঋণে না পড়ে৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...