নতুন এই জঙ্গি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সতর্কতা ছাড়াও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা প্রয়োজন৷
আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির ৫৫ মিনিটের এক ভিডিওতে তাদের সংগঠন বিস্তারের যে পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে, তার লক্ষ্য হল ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ গোটা উপমহাদেশে ৷
জাওয়াহিরি বলেছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে জিহাদের পতাকা তুলে আল-কায়েদা ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করবে৷ এই অঞ্চলের মুসলিম জনতাকে এক করতে যাবতীয় কাল্পনিক সীমানা তারা মুছে দেবে৷
বৃহস্পতিবার এই ভিডিও প্রচারের পর পরই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ দেশের গোয়েন্দা প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে দু-তিন দিনের মধ্যেই আল-কায়েদার পরিকল্পনা-সংক্রান্ত আরও তথ্য সংগ্রহ করতে৷ দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের সরকারকে সজাগ করে দিয়ে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা জোরদার করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু যেন করা হয়৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
টিকরিট পুনরুদ্ধারের চেষ্টা
সুন্নিদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) উত্তর ও দক্ষিণ ইরাকের কিছু অংশ দখল করে নিয়েছে৷ বাগদাদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দূরের শহর টিকরিটও এখন তাদের দখলে৷ সে এলাকায় ইরাক সরকারের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের জন্য আইসিস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়ছে সেনাবাহিনী৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইসিস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইসিস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷ ইরাকে নুসরা ফ্রন্টসহ বেশ কিছু সংগঠন তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
বিদ্রোহীদের পাশে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ আর ইরাকে নুরি আল মালিকির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের মধ্যে মধ্যপন্থি এবং মৌলবাদী সংগঠনের কর্মী রয়েছে৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনকে সমর্থন দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র৷ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বিদ্রোহীদের একাংশকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছেন৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি জানিয়েছেন, কংগ্রেস বিদ্রোহীদের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করলে তা সিরিয়া এবং ইরাকে দেয়া হবে৷ এই বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ, কেননা, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বড় একটা অংশ যে আইসিস-এর কাছে যাবেনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
কুর্দিরা চায় স্বাধীন কুর্দিস্তান
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি সুন্নি এবং কুর্দিদের অংশিদারিত্বের সরকার গঠন করুন৷ ইরাকের কিছু অংশে কুর্দিদের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে৷ কুর্দিরা ‘পেশমেরগা’, অর্থাৎ কুর্দিদের স্বাধিকার আন্দোলনের অংশ হিসেবে আইসিসের বিরুদ্ধে লড়ছে৷ কুর্দিদের মূল লক্ষ্য ইরাকে স্বাধীন কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠা করা৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
ইরানের ভূমিকা
ইরাকে শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মধ্যে জড়াতে চায়না ইরান৷ কিন্তু শিয়া প্রধান দেশ ইরানের সরকার ইরাকের মালিকি সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে বলে ধারণা করা হয়৷ নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিস-বিরোধী যুদ্ধে মালিকি সরকারকে ড্রোন এবং অন্যান্য সমর উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছে ইরান সরকার৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
এক হাজারেরও বেশি নিহত
সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছে সৌদি আরব৷ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি মনে করেন, আইসিসকেও মদদ দিচ্ছে সৌদি সরকার৷ ইরাকে চলমান সংঘাতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে৷ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ জন্য ইরাক সরকার এবং আইসিস-এর কঠোর সমালোচনা করেছে৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
বাড়ছে শরণার্থী
আইসিসের হামলা শুরুর পর থেকে ইরাকের বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ১২ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন৷ সিরিয়া সংকট শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ সিরীয় স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি রাজ্যগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে৷ এখন আইসিসের দখল করে নেয়া শহরগুলো থেকে পালিয়ে ইরাকিরাও আসছে৷ ছবিতে খাজাইর চেকপয়েন্ট অতিক্রম করে কুর্দিদের নিয়ন্ত্রিত শহর এরবিলের দিকে যেতে দেখা যাচ্ছে মসুল থেকে আসা ইরাকিদের৷
-
ইরাকে জিহাদিবিরোধী যুদ্ধ
স্বেচ্ছাসেবীরাও নেমেছে যুদ্ধে
প্রধানমন্ত্রী মালিকি জানিয়েছেন, রাশিয়া আর বেলারুশের কাছ থেকে পুরোনো যুদ্ধ বিমান কিনেছে ইরাক৷ আইসিসের বিরুদ্ধে সেগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷ বাড়ছে সমরাস্ত্র৷ বাড়ছে যোদ্ধা৷ স্বেচ্ছাসেবীরাও যোগ দিচ্ছেন আইসিস বিরোধী যুদ্ধে৷
লেখক: জেনিফার ফ্রাচেক/এসিবি
কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের এখনো দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া বা তৎপরতা নেই৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তাকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই৷ এটাকে আমলে নিয়ে বাংলাদেশকে জঙ্গি বিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে৷
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, আল-কায়েদার শক্তি কমে যাওয়ায় তারা নতুন করে অনুসারী বাড়াতে চাইছে৷ বিশেষ করে ইরাকের আইসিস জঙ্গিরা যেভাবে আকর্ষণ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে, আল-কায়েদা সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ৷ তাই তারা নতুন করে কাজ শুরু করছে৷
তিনি বলেন, তারা জঙ্গি অনুসারী বাড়ানোর পাশাপাশি ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারসহ উপমহাদেশের সীমানা মুছে দিতে চাইছে৷ এটি তাদের বক্তব্যে একটি নতুন দিক৷ যা তারা মুসলমান তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করতে চাইছে৷
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ বলেন, ‘‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা তেমন বড় আকারে দেখা না গেলেও আল-কয়েদার অনুসারী ছোট ছোট অনেক জঙ্গি সংগঠন আছে৷ তাদের এক ছাতার নীচে আনার তৎপরতা চালান হতে পারে৷ আর তারা যদি একটি নেটওয়ার্কের অধীনে আসে, তাহলে তা বড় ধরনের হুমকির কারণ হতে পারে৷''
তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মসজিদ, মাদ্রাসা এবং ইসলামি জলসার আড়ালে জঙ্গিরা সক্রিয় আছে৷ একটি গোষ্ঠী এ সবের মাধ্যমে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ায়৷ এ ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক হতে হবে৷ বিশেষ করেন ধর্মীয় আলোচনার নামে কেউ যাতে উগ্র-জঙ্গি মতবাদ ছড়াতে না পারে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকা প্রয়োজন৷ আর নজরদারির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে৷'' এর বাইরে জঙ্গি বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি সব সময় সচল রাখার কথা বলেন তিনি৷
তিনি বলেন, এই উপমহাদেশই এখন আল-কায়েদার টার্গেট৷ আর তাদের অনুসারীরাই পুরো উপ মহাদেশেই আছে ৷ তাই জঙ্গি বিরোধী আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন৷ এ জন্য তথ্য বিনিময় ছাড়াও কৌশল নির্ধারণে এক দেশ আরেক দেশকে সহায়তা করতে পারে৷ আর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তথ্য এবং কৌশল জানা উচিত বলে মনে করেন ব্রিগেডিয়ার রশীদ৷