বর্জ্যকে সম্পদে পরিনত করেছে কুনুর
২৯ নভেম্বর ২০২৪তারা আবর্জনা সংগ্রহ, বাছাই এবং কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এই উদ্যোগ এক সাথে যেমন সম্ভাবনাময় এক ব্যবসার পথ তৈরি করেছে, একইভাবে শহরকে করেছে আগের চেয়ে পরিচ্ছন্ন৷
নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে কাছের দূরের অনেক পর্যটকের কাছে এক বিশেষ আকর্ষণ৷ তামিল নাড়ুতে ভারতের সবচেয়ে পুরনো রেলপথগুলোর একটি এটি৷
কুনুর শহর এই পথের এক গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন৷ শহরের বাসিন্দারা পর্যটকদের ভালোবাসেন৷
চা বাগানের পাশাপাশি পর্যটন তাদের আয়ের অন্যতম উৎস৷ তবে এর নেতিবাচক দিকও আছে: শহরের ৪৫ হাজার বাসিন্দা প্রতিদিন ১৬ টন বর্জ্য তৈরি করেন৷ সঙ্গে যোগ হয় পর্যটকদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা৷
ক্লিন কুনুর অর্গানাইজেশনের সামান্থা ইয়ানা বলেন, ‘‘দশ বছরেরও বেশি সময় আগে ২০১৩ সালে দিওয়ালি উৎসবের পর ফেসবুকে আমার এক বন্ধুর এক পোস্ট দেখি যেখানে সে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া আবর্জনা পরিস্কার করতে যাওয়ার কথা বলেছিল৷ আমি তাতে যোগ দেই৷ ধীরে ধীরে আরো অনেক স্বেচ্ছাসেবী অংশ নেন৷ এরপর আমরা কুনুর ধরে বয়ে যাওয়া নদী পরিষ্কারে আগ্রহী হয়ে উঠি৷ এবং নদীটি পরিষ্কার করার সময় আমরা বর্জ্য ফেলার একটি স্থান খুঁজতে শুরু করি৷''
কুনুরে তখন ময়লা পুঁতে ফেলার জন্য আধুনিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না৷ ফলে ময়লা ব্যবস্থাপনার ধারনা তৈরি হয়৷ স্বেচ্ছাসেবী ময়লা সংগ্রহকারকরা ক্লিন কুনুর অর্গানাইজেশন প্রতিষ্ঠা করেন৷ তাদের লক্ষ্য ছিল নিজেদের এবং পর্যটকদের জন্য পর্বতমালা পরিচ্ছন্ন রাখা৷ প্রথম ধাপ ছিল শুষ্ক এবং ভেজা আবর্জনা আলাদা করে ফেলা৷ ভেজা আবর্জনা ছিল মূলত প্রাণী এবং উদ্ভিজ্জ আবর্জনা৷ সামান্থা ইয়ানা বলেন, ‘‘আমরা সব মাংস বর্জ্য ভেজা আবর্জনা ইউনিটের এক জায়গায় সংগ্রহ করি৷ এরপর সেগুলোকে একটি কনভেয়ার প্যালেটে সরিয়ে সেগুলো থেকে অজৈব্য উপাদান আলাদা করা হয়৷ তারপর সেগুলোকে সবজি এবং খাদ্য আবর্জনার সঙ্গে মেশানো হয়৷''
সেই মিশ্রণকে পরবর্তীতে শুকানো হয়৷ এই প্রক্রিয়ার সময় সেগুলোকে নিয়মিত উল্টেপাল্টে দেয়া হয়৷ চল্লিশ দিন পর সেগুলো শুকিয়ে উচ্চমানের সারে পরিনত হয় যা স্থানীয় কৃষকরা কিনে নেন৷ উটি ফ্লাওয়ার ফার্ম তাদের নিয়মিত ক্রেতা৷ ফুল চাষী ডানিয়েল বলেন, ‘‘এই সব ফুলের জন্য আমাদের সারে পিএইচ ভ্যালু ছয় থেকে সাতের মধ্যে থাকতে হয়৷ এই সারে সেটা থাকায় ফুলগুলোর বৃদ্ধি সত্যিই দ্রুত হয়৷ এগুলো নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ৷ এসবই উদ্ভিদের উৎপাদন ভালো করে ও সংখ্যা এবং মান উভয় দিকেই সেরা ফলাফল নিশ্চিত করে৷ উদ্ভিদগুলো ফুলদানিতেও বেশি সময় টেকে৷''
কুনুর বর্তমানে এটির দুই তৃতীয়াংশ আবর্জনা কাজে লাগাচ্ছে৷ এগুলোকে সারে পরিণত করা হচ্ছে৷ ভাসান্থন পি জে, ক্লিন কুনুর অর্গানাইজেশন
‘‘সীমিত মানুষ, সম্পদ এবং বাজার নিয়ে আমরা ছোট্ট শহরটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সাফল্যের সঙ্গে করতে পারছি৷ আমরা এখানে যদি এটা করতে পারি তাহলে বড় শহরে যেখানে আমাদের চেয়ে সুযোগ সুবিধা বেশি আছে সেখানেও এটা সম্ভব৷ এখানে আমাদের সবকিছু হাত দিয়ে করতে হয়৷ বড় শহরগুলোতেও যদি এভাবে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা করতে হয় তাহলে তাতেও বড় সাফল্য আসবে৷''
বিখ্যাত রেলপথে ভ্রমণ আর মনোরোম শহর কুনুর দেখতে এবছরও পর্যটকদের ঢল নেমেছে৷ তবে আবর্জনা নিয়ে আর ভাবিত নয় শহরটির বাসিন্দারা৷
প্রতিবেদন: অ্যাশলি পি জয়/এআই