1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বড়লোকদের কর বাড়াবার কথা বলায় শাস্তি

গৌতম হোড়
১ মে ২০২০

দোষের মধ্যে তাঁরা অতি-বড়লোকদের ওপর করের পরিমাণ বাড়াতে বলেছিলেন। সেস বসাতে বলেছিলেন তাঁদের ওপর, যাঁরা প্রতি বছর ১০ লাখ টাকার বেশি বেতন পান। তার জন্য শাস্তির মুখে সরকারি অফিসাররা।

https://p.dw.com/p/3beeK
ছবি: picture-alliance/Xinhua(J. Dar

করোনার বাজারে সরকার কী ভাবে অর্থনৈতিক সংকটকাটাতে পারে এবং গরিব মানুষের উপকার করতে পারে, তার উপায় বার করার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় রাজস্ব বিভাগের ৫০ জন তরুণ আইআরএস অফিসার মিলে একটি রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেছিলেন। এই উদ্যোগের ফল হলো, তিনজন সিনিয়ার অফিরসারকে চার্জশিট করা হয়েছে। বাকিদের মাথায় শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে। মোদী সরকার যাবতীয় সুপারিশ খারিজ করে বলেছে, ওই অফিসারদের রিপোর্ট বানাতে বলা হয়নি। তাই রিপোর্টের সুপারিশ রূপায়ণের প্রশ্নই ওঠে না। আর পুরো ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক।

রিপোর্টটি  তৈরি করে আইআরএসের তরুণ অফিসাররা তা তুলে দিয়েছিলেন সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস বা সিবিডিটির চেয়ারম্যানের হাতে। সরকারি সূত্রা জানাচ্ছে, তাঁরা যে নিয়মবিরুদ্ধ কাজটা করেছেন, সেটা হলো, রিপোর্টটি সংবাদমাধ্যমের কাছে ফাঁস করে দেওয়া। সার্ভিস রুল অনুসারে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকটের বাজারে এই অপরাধটুকু উপেক্ষা করে তারা যে সুপারিশ করেছে, তা রূপায়ণের কথা কি সরকার ভাবতে পারতো না? তা হলে গরিবদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাঁদের অর্থাভাব অনেকটাই কমতো। কেন তা করলো না সরকার? সরকার কি অতি বড়লোকদের ওপর এই সংকট সময়েও কর বসানোর ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে বিরোধী?

রিপোর্টে কী বলেছিলেন ওই অফিসাররা­? তাঁদের প্রস্তাব ছিলো, যে সব বড়লোকের বার্ষিক আয় বছরে এক কোটি টাকার বেশি, তাঁদের আয়করের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হোক। আর যাঁদের বছরে আয় পাঁচ কোটির বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে সম্পদ কর আবার চালু করা হোক। তবে বরাবরের জন্য নয়। তিন থেকে ছয় মাসের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ঘটনা হলো, দেশের এক শতাংশ অতি-বড়লোকরা ভারতের ৫২ শতাংশ সম্পদের মালিক। আর ৬০ ভাগ সাধারণ মানুষের কাছে আছে মাত্র ৫ শতাংশ সম্পদ। তাই সম্ভবত ৬০ শতাংশ লোককে সাহায্য করার জন্য এক শতাংশ লোকের ওপর কিছুটা বোঝা চাপাবার কথা ভেবেছিলেন ওই তরুণ অফিসাররা। তাঁদের আরও সুপারিশ ছিলো, যাঁদের বছরে আয় ১০ লাখ টাকার ওপরে, তাঁদের করোনা সেস দিতে হবে। এই দুইটি ব্যবস্থা নিলে সরকার ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলতে পারত। তাছাড়া যে সব বহুজাতিক কোম্পানির লাভ এক থেকে ১০ কোটি, তাদের দুই শতাংশ হারে এবং তার বেশি লাভের কোম্পানিগুলির ওপরে ৫ শতাংশ হারে সারচার্জ বসানোর কথাও তাঁরা বলেছিলেন। 

সরকার যে ভাবে এই রিপোর্ট খারিজ করে ইতিমধ্যেই তিনজন সিনিয়র অফিসারকে চার্জশিট করেছে, তাতে জোরদার বিতর্ক শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সহকারী নেতা সুখেন্দু শেখর রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এ কথা ঠিক, সার্ভিস রুল অনুযায়ী এই রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা যায় না। কিন্তু সরকার বিষয়টি উপেক্ষা করতে পারতো। কারণ, আইআরএস অফিসাররা সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এই রিপোর্ট বানিয়েছিলেন। তাঁরা দেশকে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা রিপোর্টে যা বলেছেন, আমি তা সমর্থন করি। এই অত্যন্ত মেধাবী অফিসাররা নিয়ম জানেন না, তা তো হতে পারে না। হয় তাঁরা নিজেদের মতামত জানাবার তাগিদে নিয়ম উপেক্ষা করেছেন। অথবা, তাঁরা ভেবেছেন যেহেতু তাঁরা একটা ভালো কাজ করছেন, তাই সার্ভিস রুল ভঙ্গ করলেও কিছু হবে না।''

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী একসময় মোদী সরকারকে স্যুট-বুটের সরকার বলে অভিহিত করতেন। লোকে অবশ্য তাঁর সেই অভিযোগকে ভোটের সময় আমল দেয়নি। কিন্তু কংগ্রেস এই ক্ষেত্রে আইআরএস অফিসারদের পাশে থেকে প্রশ্ন করেছে, সরকারকি শুধু কর্পোরেটের স্বার্থই দেখবে? আর সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমার মনে আছে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদীজি বলেছিলেন, সকলের পরামর্শ শুনব। সরকারি কর্মীরাও পরামর্শ দিতে পারবেন। বণিকসভাগুলি সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে, ট্রেড ইউনিয়ন দিতে পারে, রাজনৈতিক দল দিতে পারে, আইআরএস অ্যাসোসিয়েশন দিতে পারে না? আর রিপোর্টে তো সরকার-বিরোধী কোনও কথা বলা হয়নি। বড়লোকদের ওপর কর বসানো, গরিবদের সাহায্য করা কি দেশবিরোধী কথা না কি? আসলে সরকারে যাঁরা আছেন, মনে হচ্ছে তাঁরা তাঁদের ওপরওয়ালাদের সেবা করতে দায়বদ্ধ।''

আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা মনে করেন, আইআরএস অফিসাররা অনুচিত কাজ করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''তাঁরা সার্ভিস রুল ভেঙেছেন। তাঁরা রিপোর্ট কোনওভাবেই প্রকাশ করতে পারেন না। সেস বসাবার কথা বলে মধ্যবিত্তদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। দেশ যখন করোনার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন তাঁরা এই ধরনের কাজ করতে পারেন না।''

বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সরকার তাদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছে। তারা অতি-বড়লোকদের ওপর বাড়তি কর চাপিয়ে তাঁদের রুষ্ট করতে চায় না।