গেল ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেপোলিস শহরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিলেন জর্জ ফ্লয়েড নামের কালো বর্ণের এক ব্যক্তিকে৷ এ সময় ফ্লয়েডের মৃত্যু হয় এবং এ নিয়ে অ্যামেরিকাসহ পুরো বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়, যা এখনো চলছে৷ এই প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন মার্কিন ধর্মীয় নেতারাও৷
‘‘একেবারে তৃণমূলে এই প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে৷ আমরা দেখছি ইহুদি রাব্বিরা মুসলিম নেতাদের পাশে আছেন, তাদের সঙ্গে রয়েছেন ক্যাথলিক যাজক ও সিস্টাররা৷'' প্যাক্স ক্রিস্টি ইউএসএ নামের একটি ক্যাথলিক সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জনি জকোভিচ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন এ কথা৷ ‘‘আমরা সব ধর্ম ও বিশ্বাসের সব বর্ণের মানুষকে একসঙ্গে দেখতে পাচ্ছি৷''
গেল সপ্তাহে আফ্রিকান অ্যামেরিকানদের ওপর বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে একটি অনলাইন কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়৷ সেখানে এক হাজারেরও বেশি রাব্বি, যাজক, ইমাম ও অন্য ধর্মীয় নেতারা যোগ দেন৷
ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর নতুন করে প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন রাব্বি জোনাহ ডোভ পেসনার৷ তিনি ঐ কনফারেন্সে যোগ দিয়েছলেন৷
‘‘সবাই অনেক ক্ষুব্ধ৷ তারা বর্ণবৈষম্য দেখতে দেখতে ক্ষুব্ধ, কোভিড নির্মূলে অদক্ষতা দেখে ক্ষুব্ধ, তারা ধর্মীয় গোঁড়ামি দেখে যেমন ক্ষুব্ধ, তেমনি ইহুদি ও মুসলিম বিদ্বেষ দেখতে দেখতে বিরক্ত, শ্বেতাঙ্গদের প্রভুত্ব দেখে ক্ষুব্ধ,'' বলেন পেসনার৷
পেসনার মনে করেন, প্রগতিশীল ধ্যানধারণার ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এই আন্দোলনকে কাঠামোগত রূপ দিতে পারে, যেমনটি তারা ষাটের দশকে নাগরিক অধিকার বিপ্লবের সময় দিয়েছিল৷
সে সময়ের সঙ্গে এবারের পার্থক্য হলো, শুধু সংস্কারপন্থি ও প্রগতিশীল ধর্মীয় নেতারাই নন, অনেক ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গ নেতাও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন৷ নিরপেক্ষ সংগঠন বলে পরিচিত পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট দেখিয়েছে, ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর শ্বেতাঙ্গ ক্যাথলিকদের মাঝে ডনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৩৭% এ নেমে এসেছে, ২০১৯ সালেও যা ছিল ৪৯% এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনের সময় ছিল ৬০%৷
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
২৫ মে, ২০২০, মিনেপোলিস
জাল টাকা ব্যবহারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা ৪৬ বছর বয়সি জর্জ ফ্লয়েডকে রাস্তায় ফেলে তাঁর গলায হাঁটু দিয়ে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন মিনেপোলিসের পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিন৷ এতে ফ্লয়েডের মৃত্যু হলে শভিনসহ চার পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়৷ এছাড়া শভেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, আর্লিংটন
গাড়িতে নিবন্ধনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া ট্যাগ থাকার কারণে ও’শে টেরিকে আটক করেছিলেন টেক্সাসের পুলিশ কর্মকর্তারা৷ এরপর একজন অফিসার গাড়িতে মারিজুয়ানার গন্ধ পেয়ে তদন্ত করতে চাইলে গাড়ি চালিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন টেরি৷ এই সময় পুলিশ কর্মকর্তা বাও ট্রান গাড়িতে গুলি করলে টেরি গুলিবিদ্ধ হন৷ পরে হাসপাতালে মারা যান৷ এই ঘটনায় বাও ট্রানকে বরখাস্ত করা হয়৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
১৯ জুন, ২০১৮, পিটসবার্গ
১৭ বছর বয়সি অ্যান্টোন রোজসহ তিনজন একটি গাড়িতে ছিলেন৷ গাড়িটি একটি গোলাগুলির ঘটনা সঙ্গে জড়িত ছিল বলে সন্দেহ করেছিল পুলিশ৷ এই অবস্থায় গাড়ির চালককে হাতকড়া পরানো হয়৷ আর গ্রেপ্তার আটকাতে অ্যান্টোন রোজ পালিয়ে যেতে চাইলে গুলি চালান পুলিশ কর্মকর্তা মাইকেল রসফেল্ড৷ এই ঘটনায় মামলা হলেও রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হন রসফেল্ড৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ওকলাহোমা
রাস্তার মাঝখানে পড়ে থাকা গাড়ির চালক টেরেন্স ক্রুচারকে গুলি করেছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বেটি শেলবি৷ মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে শেলবি দাবি করেন, ক্রুচার তার গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলে ভয় পান তিনি৷ কারণ তার মনে হয়েছিল, বন্দুক নিতে ক্রুচার গাড়ির দিকে এগোচ্ছেন৷ তাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে গুলি চালান বলে দাবি করেন শেলবি৷ আদালত তাকে হত্যা মামলা থেকে রেহাই দিয়েছিল৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
৬ জুলাই, ২০১৬ মিনেসোটা
লাইসেন্স ও নিবন্ধন পরীক্ষা করে দেখতে ফিল্যান্ডো ক্যাস্টিলের গাড়ি থামিয়েছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা জেরনিমো ইয়ানেস৷ এই সময় ইয়ানেস তার কাছে অস্ত্র থাকার কথা জানিয়ে হাত বাড়ালে গুলি চালান ইয়ানেস৷ এতে ক্যাস্টিল মারা যান৷ তবে তার সঙ্গে থাকা পার্টনার ডায়মন্ড রেনল্ডসের দাবি, ক্যাস্টিল নথি বের করার জন্য হাত বাড়িয়েছিলেন৷ মামলাটি তিন মিলিয়ন ডলারে মীমাংসা হয়েছিল৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
২০ অক্টোবর, ২০১৫, শিকাগো
পুলিশ কর্মকর্তা জেসন ফান ডাইকের গুলিতে প্রাণ হারান লেকান ম্যাকডোনাল্ড৷ তার কাছে একটি তিন ইঞ্চি ছুরি ছিল৷ পুলিশের এক মুখপাত্র জানান, ডাইক ম্যাকডোনাল্ডকে ছুরি ফেলে দিতে বললে তিনি তা করেননি৷ পরে জানা যায়, ম্যাকডোনাল্ডকে ১৬ বার গুলি করা হয়৷ এই ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তা ডাইককে ছয় বছর নয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ এছাড়া ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার সঙ্গে পুলিশ সদস্য়সহ ১৬ জন জড়িত ছিল বলে জানান প্রধান পুলিশ পরিদর্শক৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
১২ এপ্রিল, ২০১৫, বাল্টিমোর
পকেটে ছুরি থাকায় ২৫ বছরের ফ্রেডি গ্রেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ এইসময় পুলিশ ভ্যানে কোমায় চলে গেলে তাকে একটি ট্রমা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়৷ সেখানেই তার মৃত্যু হয়৷ মেরুদণ্ডে আঘাতজনিত কারণে তিনি মারা যান৷ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হলেও কারও শাস্তি হয়নি৷
-
কৃষ্ণাঙ্গদের উপর পুলিশি নির্যাতনের ৮ ঘটনা
৯ আগস্ট, ২০১৪, মিসৌরি
নিজেদের মধ্যে সংঘাতের এক পর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারেন উইলসনের গুলিতে প্রাণ হারান ১৮ বছরের মাইকেল ব্রাউন৷ এই ঘটনায় গ্র্যান্ড জুরি উইলসনকে অভিযুক্ত না করলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ পরে উইলসন পদত্যাগ করেন৷ এছাড়া ব্রাউনের পরিবারও মীমাংসায় বসেছিল৷