1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফেসবুক, ইনস্টা ব্যবহার করতে পারবে না ভারতীয় সেনা

৯ জুলাই ২০২০

ভারতীয় সেনা জওয়ান ও অফিসাররা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম সহ মোট ৮৯টি অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন না। তথ্য ফাঁস আটকাতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

https://p.dw.com/p/3f0r9
ছবি: Reuters

তালিকাটা লম্বা। মোট ৮৯টি অ্যাপ ঠাঁই পেয়েছে সেই তালিকায়। তাতে ইতিমধ্যেই নিষিদ্ধ ৫৯টি চীনা অ্যাপআছে। সেই সঙ্গে আছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, জুম, স্ন্যাপ চ্যাট থেকে শুরু করে অ্যান্টিভাইরাস ৩৬০ সিকিউরিটি পর্যন্ত বিভিন্ন অ্যাপ। এই অ্যাপগুলো ভারতীয় সেনা জওয়ান থেকে শুরু করে অফিসার পর্যন্ত কেউ ব্যবহার করতে পারবেন না। ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে এই সব অ্যাপ তাঁদের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলতে হবে। এই নির্দেশ পালন না করলে কড়া শাস্তির মুখে পড়তে হবে।

নৌবাহিনীর তরফ থেকে আগেই সব কর্মীকে বলা হয়েছে, তাঁরা নৌঘাঁটি, ডকইয়ার্ড এবং রণতরীতে মোবাইল নিয়েই যেতে পারবেন না। কেউ ফেসবুক ব্যবহার করতে পারবেন না। বিশাখাপত্তনম ও মুম্বই থেকে দুই জন পাকিস্তানের কাছে গোপন তথ্য পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ার পর নৌবাহিনী এই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়।  

প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এবং সেনা সূত্র জানাচ্ছে, তথ্য পাচার রুখতে এই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি ছিল। পাকিস্তান ও চীন থেকে ভারতের সেনা জওয়ান ও কর্মীদের ওপর ডিজিটাল আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তারা এই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানার চেষ্টা করছে। এই সব অ্যাপথেকে তারা অনেক গোপন খবর পাচ্ছে বা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। 

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। আমরা যখন সার্ভিসে ছিলাম, তখন এই সব অ্যাপের রমরমা ছিল না। অফিসে ডেস্কটপ ব্যবহার করতাম। সেখানে গোপনীয়তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এখন তরুণ অফিসাররা অনেক সময় অতি উৎসাহে কিছু কথা বলে ফেলেন। তাতে মেসেজ বাইরে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। প্রতিটি পেশারই গোপনীয়তা রক্ষার একটা দিক থাকে। সেনার ক্ষেত্রে কাজের চরিত্রের জন্য গোপনীয়তা রক্ষার গুরুত্ব খুব বেশি। তাই এই সিদ্ধান্তকে আমি সমর্থন করি।''

চীন নিয়ে সমস্যা যখন প্রথম শুরু হয়েছে, তখন জুম অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তিন সেনা প্রধানের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছিলেন। তারপর সোরগোল হওয়ায় সরকারি স্তরে জুম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। তখন এমনিতেই জুম নিয়ে প্রচুর অভিযোগ ছিল যে, তথ্য গোপন থাকছে না। পরে অবশ্য ওই অ্যাপের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা অ্যাপটিকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করেছে।

অ্যাপ কি চিকিৎসকের চাহিদা মেটাতে পারে?

ভারত-চীন সাম্প্রতিক সংঘাতের পর অ্যাপ ব্যবহারের বিপদের দিকটা মোদী সরকারের নজরে আসে। তখন থেকে খতিয়ে দেখা শুরু হয়, কোন কোন অ্যাপ ব্যবহার করলে তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও কীভাবে। তবে ১৩ লাখ সেনা কর্মীর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির কারণটা আলাদা। ফেসবুক ও ইনস্টাতে যে পোস্ট করা হয়, তা দেখা যায়। সেখানে মুশকিল হলো, অনেক সময় অতি উৎসাহে সেনা জওয়ান বা অফিসাররা এমন কিছু কথা লিখে দিতে পারেন, যা তাঁদের বলার কথা নয়। যার উল্লেখ উৎপলবাবু করেছেন। এই তালিকায় আরও বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে।

সূত্র জানাচ্ছে, সেনা বাহিনীর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তান সুন্দরী মহিলাদের দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ফাঁদ পাতে। সেই ফাঁদে সেনা অফিসাররা ধরা দিলেই বিপদ। তাই সামাজিক মাধ্যম নিয়ে সতর্ক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কাজের সঙ্গে যুক্ত এক সাইবার বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, ''অ্যাপগুলি ডাউনলোড করার পর বিভিন্ন জিনিসের অ্যাকসেস চায়। সেই অ্যাকসেস ছাড়া অ্যাপ  ব্যবহার করা যায় না। এই অ্যাকসেস পেয়ে যাওয়া মানে মোবাইলের তথ্য ওই অ্যাপের হাতে চলে আসা। এখন সাইবার দুনিয়ায় একটা কথা চালু আছে। ব্ল্যাক নেট। এখানে সব তথ্য বেচা হয়। চীনা অ্যাপের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিপুল অর্থের বিনিময়ে তথ্য বিক্রি করে। বিপদটা সেখানেই।''

এর আগে নভেম্বরে অফিসের কাজে হোয়াটস অ্যাপ ব্যবহার করতে মানা করে দেওয়া হয়েছে সেনা জওয়ান ও অফিসারদের। যাঁরা খুব গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, তাঁদেরও ফেসবুক ব্যবহার করতে মানা করে দেওয়া হয়েছিল। এ বার সকলের জন্য তা কার্যকর হলো।

জিএইচ/এসজি(এএনআই, টিওআই)