চাপের মুখে প্রসিকিউটররা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী বা প্রসিকিউটর ১৭ জন৷ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির দাবি করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হবার যোগ্য নন৷ তিনি ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘প্রসিকিউটরদের অধিকাংশই খণ্ডকালীন হিসেবে কাজ করছেন৷ ‘ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর' – এই সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তাঁরা অন্য আদালতে বিভিন্ন ধরণের মামলা পরিচালনা করছেন৷ এমনকি কোনো কোনো প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের বাইরে জামায়াত নেতাদের মামলা পরিচালনার মতো অনৈতিক কাজের অভিযোগও আছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার প্রসিকিউটরদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দেয়ায় এখানে ভালো আইনজীবী পাওয়া যায় না৷ ফলে শুরু থেকেই ট্রাইব্যুনালে একটি অদক্ষ প্রসিকিউটর এবং তদন্ত দল গঠিত হয়েছে৷'
শাহরিয়ার কবির দাবি করেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলা পরিচালনায় অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে৷ অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনায় ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীদের সহায়তা নেননি – যা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত৷ তিনি সাধারণ আইনজীবী দিয়ে মামলা পরিচালনা করেছেন৷ ফলে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকেনি, হ্রাস পেয়েছে৷''
তাঁর মতে, ‘‘ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন এবং তদন্ত সংস্থাকে এখন ঢেলে সাজান উচিত৷ এছাড়া আপিল বিভাগের মামলা পরিচালনায় দ৭ আইনজীবীদের কাজে লাগান প্রয়োজন৷''
তিনি বলেন, ‘‘প্রসিকিউিটরদের হতে হবে দক্ষ, সত্ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দায়বদ্ধ৷ তা না হলে ভবিষ্যতে আরো বিপর্যয় দেখা দিতে পারে৷''
ওদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাঈদীর রায় দিতে প্রসিকিউটররা অদক্ষ তা বলা যাবে না৷ কারণ ট্রাইব্যুনালে সাঈদীর ফাঁসি হয়েছে৷ বরং আপিল বিভাগ তাঁকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে৷ কিন্তু তারা রায়ে কোথাও বলেননি যে তদন্তে বা সাক্ষ্য প্রমাণে ত্রুটি আছে৷ ট্রাইব্যুনালে যে অপরাধ প্রমাণ হয়েছে, আপিল বিভাগেও সেই অপরাধই প্রমাণ হয়েছে৷ এখন আপিল বিভাগ কী দণ্ড দেবে – তা তাদের এখতিয়ার৷''
রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘মৃত্যুদণ্ড এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডের মধ্যে কতটুকু দূরত্ব তা বুঝতে হবে৷ এই দু'টি দণ্ডের মধ্যে চুল পরিমাণ ব্যবধান থাকতে পারে৷''
রানা দাসগুপ্তের কথায়, ‘‘কাদের মোল্লাকে তো ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল৷ আর আপিল বিভাগ দিয়েছে মৃত্যদণ্ড৷ এর কী ব্যখ্যা থাকতে পারে?''
সরকার ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে পরিবর্তন আনবে – আইনমন্ত্রীর এই কথার জবাবে রানা দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘সরকার চাইলে পরিবর্তন আনতে পারে৷ কারণ ট্রাইব্যুনাল সরকারের আদেশে গঠিত হয়েছে৷ এটা সরকারে এখতিয়ার৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি পরিবর্তন আসবে, তবে কবে তা জানি না৷''