১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কাজ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন৷ পরিসংখ্যানটি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের৷ এটি মূলত বৈধভাবে পাড়ি জমানোদের হিসাব৷ এর বাইরেও একটি বড় অংশ বিপদ জেনেও জীবন বাজি রেখে নানা উপায়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন আর পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায়৷ কখনো কখনো তার সলিল সমাধি হয় স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই৷
ফেব্রুয়ারিতে ভূমধ্যসাগর থেকে শরণার্থীদের বহনকারী জাহাজ ওশান ভাইকিংস নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে৷ সেই জাহাজে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক মিওদ্রাক জরিচ৷ সেখানে তিনি অন্যান্য দেশের শরণার্থীদের সঙ্গে বাংলাদেশিদেরও দেখেছেন৷ তারা হয়ত ভাগ্যবান বেঁচে গেছেন বলে৷ কিন্তু মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে, কিংবা ইউরোপ পৌঁছাতে গিয়ে অনেকেরই স্বপ্ন ডুবে যায় ভূমধ্যসাগরের নোনা জলে৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
ওশান ভাইকিংয়ে চড়ে সমুদ্রে
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির দিকে ওশান ভাইকিংসের ক্রুদের দুই সপ্তাহের সঙ্গী হই আমি৷ জাহাজটিতে থাকা একমাত্র সাংবাদিক হিসেবে আমি লিবীয় উপকূলে ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স এবং এসওএস মেডিট্রেনির কার্যক্রম একেবারে কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি৷ দেখেছি, সাগর থেকে উদ্ধার করা বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশের শরণার্থীদের অবস্থাও৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
সবসময় সাগরে চোখ
লিবিয়া উপকূলে থাকাকালে আমি দেখেছি, ওশান ভাইকিংসে অবস্থানরত ক্রু এবং মানবাধিকার কর্মীরা সবসময় সমুদ্রের দিকে চোখ রাখতেন৷ ভূমধ্যসাগরে এই জাহাজের ভেসে বেড়ানোর উদ্দেশ্য একটাই আর তা হচ্ছে, ইউরোপে আসার পথে সাগরে দুর্ঘটনায় পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
উদ্ধার তৎপরতা
আমাদের মিশনের প্রথম দিনেই লিবিয়া উপকূল থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে সাগরে ভাসতে থাকা দু’টি নৌকা থেকে জরুরি সাহায্যের আকুতি শুনতে পাই৷ মানবাধীকার কর্মীরা অশান্ত সাগরের মাঝেই উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত সব মানুষকে জাহাজে তুলে আনতে সক্ষম হন৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
ইউরোপে আসতে মরিয়া তারা
সমুদ্র থেকে ওশান ভাইকিংসে তুলে আনা অধিকাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশীই পুরুষ৷ দুই সপ্তাহের মিশনে আমরা অনেক বাংলাদেশি এবং মরোক্কানকে দেখেছি৷ এছাড়া সাব-সাহারান দেশগুলো থেকে আসা মানুষও ছিল৷ তারা ইউরোপে পৌঁছাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন৷ তবে, উদ্ধারের পর তাদেরকে বেশ ভারমুক্ত মনে হয়,কেননা, তারা তখন নিশ্চিত হন যে আর লিবিয়ায়ফিরে যেতে হবে না৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
ইউরোপে নতুন জীবন
ওশান ভাইকিংসে ওঠার পর শরণার্থীরা তাদের মানসিক অস্থিরতা থেকে কিছুটা মুক্তি পান এবং ভবিষ্যৎনিয়ে ইতিবাচক ভাবনার সুযোগ পান৷ যে মহাদেশে পৌঁছাতে ঘরবাড়ি, পরিবার ছেড়ে এসেছেন তারা,শীঘ্রই সেখানে প্রবেশের সুযোগ হবে তাদের৷ আমি মাঝে মাঝে তাদের ভাবনা বোঝার চেষ্টা করি৷ তারা কি অতীত নিয়ে ভাবেন, নাকি ভবিষ্যৎ নিয়ে?
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জীবন বাঁচাতে বদ্ধপরিকর এরিক কনিন্সবের্গার
আমি এখানে ক্রুদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি৷ ১৪টির বেশি দেশের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এবং ধর্ম থেকে আসা মানুষদের নিয়ে গড়া এই দলের একটাই উদ্দেশ্য – অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবন বাঁচানো৷ অতীতে তারা যা- করুক না কেন এই জাহাজের ডেক কিংবা বাথরুম পরিষ্কার করাতেও তাদের কোনো আপত্তি নেই, কথাগুলো বলেন এরিক কনিন্সবের্গার৷ দু’বছর আগেও তিনি ছিলেন একজন অভিনেতা৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
উদ্ধারকর্মী ইলিনা এন্গেলোভা
‘‘আমি অন্য কোথাও কাজ করার কথা কল্পনাও করতে পারি ,’’ বলেন ইলিনা এন্গেলোভা৷ ওশান ভাইকিংস জাহাজের মানবিক সহায়তা বিষয়ক কর্মকর্তা তিনি৷ তরুণ এই বেলজিয়ান সেই দলের সদস্য,যারা একসময় প্রায় নিশ্চিত ডুবতে বসা ২৭৪ শরণার্থীকে উদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন৷ বর্তমানে শরণার্থীদের উদ্ধারের পর জাহাজে তাদের দেখভালের দায়িত্ব তাঁর৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
এক নিরাপদ স্বর্গ
অভিবাসীদের জাহাজে তোলার পর খাদ্য, পানীয় জল, এক ব্যাগ কাপড় এবং একটি কম্বল দেয়া হয়৷ আমি যখন জাহাজে ছিলাম,তখন অভিবাসীদের এই কন্টেইনারগুলোতে থাকতে দেখেছি৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জাহাজে সাময়িক আবাস
অভিবাসীদের ইটালিতে নিয়ে আসার পর জাহাজে থাকা তাদের সাময়িক আবাসন দেখার সুযোগ দেয়া হয় আমাকে৷ অভিবাসীদের স্ট্রেস দূর করতে সহায়তার উদ্দেশ্যে সেখানে একটি বক্সিং রিং তৈরি করে দিয়েছেন ক্রুরা৷ আর সেখানকার দেয়ালে অভিবাসীরা ছবি এঁকেছেন, ক্রুদের ধন্যবাদ দিয়ে নানা বার্তা লিখেছেন৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে
ওশান ভাইকিং ত্যাগ করার আগে উদ্ধারকৃত অভিবাসীরা সেটির দেয়ালে স্বাক্ষর দিয়ে গেছেন৷ এখানে বাংলাদেশ থেকে আসা একজন তারিখ লিখেছেন ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০৷ কেউ কেউ আবার ধন্যবাদসূচক নানা বার্তা এবং প্রাথনাও লিখেছেন৷ তাদেরকে সিসিলি বন্দর থেকে কোথায় নেয়া হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জাহাজে চিকিৎসক
ইতালি কর্তৃপক্ষ সিসিলিতে ওশান ভাইকিং জাহাজটিকে কোয়ারেন্টাইন করেছে৷ তারা আশঙ্কা করছে যে, শরণার্থীরা করোনা ভাইরাস নিয়ে আসতে পারে৷ জাহাজে অবস্থানরত চিকিৎসক ড. স্টেফান কে. হল আমাদের তাপমাত্রা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন৷ ২০১৩ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে আসা এই মার্কিন নাগরিক এর আগে দক্ষিণ সুদান, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং সিরিয়ায় ছিলেন৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
আশা এবং হতাশা
এই শরণার্থী শিশুরা আইভরি কোস্ট থেকে এসেছেন৷ তাদের অভিভাবকরা কোথায় তা জানা যায়নি৷ ওশান ভাইকিংয়ের উদ্ধারকারীরা উদ্ধারের পর তাদের খেলনা দিয়েছেন৷ তবে, এই শিশুরা খুব দ্রুতই হতাশ হয়ে পড়েছিল৷ কারণ, তারা জাহাজত্যাগের সময় ইতালীয় কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাসের ভয়ে তাদের কাছ থেকে খেলনাগুলো নিয়ে গেছে৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জাহাজে সুস্থ থাকা
ইতালীয় উপকূলে বেশ কয়েকদিন ঝড়ের সঙ্গে লড়ার পর দেশটির কর্তৃপক্ষ আমাদের সিসিলিতে নোঙ্গরের অনুমতি দেয়৷ কিন্তু করোনভাইরাস আতঙ্কের কারণে আমি এবং ক্রুরা জাহাজ থেকে নামার অনুমতি পাইনি৷বলা হয়েছে, আমাদের এভাবেই দু’সপ্তাহ কাটাতে হবে৷ এই সময়টায় সুস্থ থাকার জন্য ক্রুদের কেউ কেউ এরকম জিম তৈরি করেছে৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জাহাজের নায়ক
কোয়েরেন্টাইনে থাকাকালে আমি বেশ কয়েকজন ক্রুর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি৷ তাদের মধ্যে নায়ক হচ্ছেন টঙ্গুই৷ ৩৮ বছর বয়সি এই ফরাসি যত মানুষকে উদ্ধার করেছেন তা অন্য কোনো ক্রু করতে পারেননি৷ কারো কারো হিসেবে এই মানুষটা দশ হাজারের বেশি শরণার্থীকে ডুবে মরা থেকে বাঁচিয়েছেন৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
একটি বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি
এই চমৎকার হাসিটা দিয়ে মিরিয়াম উইলিস জাহাজের সবার মন জয় করে নেন৷ যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজের এই বাসিন্দা শরণার্থীদের খাদ্য, পানীয়, পোশাক, ঘুমানোর স্থান থেকে গোসল অবধি সবকিছুর দেখভাল করেন৷
-
সাগর পথে এখনো ইউরোপে ঢুকছেন বাংলাদেশিরা
জীবন বাঁচাতেও খরচ আছে
তবে, মানুষ জীবন বাঁচানোর এই অভিযান অর্থের বিবেচনায় মোটেই সস্তা নয়৷ জাহাজটিতে প্রতিদিন চৌদ্দ হাজার ইউরো খরচ হয়৷ এই খরচের মধ্যে জাহাজের ভাড়াও অন্তর্ভূক্ত আছে৷ উদ্ধারকারীদের জন্য নতুন লাইফবোট এবং অন্যান্য সামগ্রী প্রয়োজন৷ কিন্তু অর্থের অভাবে সেগুলো কেনা যাচ্ছে না৷
লেখক: মিওদ্রাক জরিচ
তাদেরকে ভুলিয়ে ভালিয়ে এমন বিপদসঙ্কুল পথে ঠেলে দেয়ার পেছনে আছে দেশি-বিদেশি পাচার চক্র৷ দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটে চললেও তাদেরকে বাগে আনতে পারছে না বা আনার চেষ্টা করছে না সরকারগুলো৷ মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে তাদের সঙ্গে প্রশাসন কিংবা নীতিনির্ধারকদের জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে৷
বেশ কয়েক বছর আগে দেশটির জঙ্গলে গণকবরের সন্ধান মিলে৷ পাচারকারীদের আস্তানা থেকে বহু মৃত্যুপথযাত্রী বাংলাদেশিদের সেই সময় উদ্ধারও করা হয়৷ সেই খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ আলোড়ন তুলেছিল৷ কিন্তু এরপরও একই পথে মানব পাচার ঠিকই চলছে৷ পাচারকারীদের থামাতে পারেনি মালয়েশিয়া, যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও৷
সবশেষ লিবিয়ায় ২৬ জন বাংলাদেশির নিহত হওয়ার একটি খবর এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে৷ তার পেছনেও রয়েছে পাচারের ঘটনা৷ এক মানবপাচারকারী এর আগে সেখানকার অভিবাসীদের হাতে খুন হয়েছিলেন৷ তার বদলায় পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স৷ বিষয়টি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও৷
ফয়সাল শোভন, ডয়চে ভেলে
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর ঘটনা এখন অনেকটাই যেন মামুলি হয়ে গেছে৷ যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯ সালে এক বছরে শুধু মালয়েশিয়াতে ৭৮৪ জন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন৷ গত দশ বছরে বিদেশ থেকে মোট ২৬ হাজার ২৫৮ জনের লাশ ফিরেছে৷ ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ১০০৮, কুয়েত থেকে ২০১, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ২২৮, বাহরাইন থেকে ৮৭, ওমান থেকে ২৭৬, জর্ডান থেকে ২৬, কাতার থেকে ১১০, লেবানন থেকে ৪০ সহ মোট তিন হাজার ৫৭ জনের লাশ দেশে ফিরেছে৷
অন্য একটি দেশে নাগরিকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে স্বভাবতই ভুক্তভোগীর দেশের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা হওয়ার কথা৷ তার নাগরিকের মৃত্যুর জন্য ঐ দেশের সরকার বা কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়াই স্বাভাবিক৷ কিন্তু বাংলাদেশের সরকার এক্ষেত্রে বরাবরই যেন উদাসীন৷ সেটি আমরা গত বছর সৌদি আরবে একের পর এক নারী শ্রমিকের মরদেহ ফেরত আসার পরও উপলব্ধি করেছি৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাদের উপর চালানো নির্যাতনের ঘটনাকে সেসময় অতিরঞ্জিত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত৷ আর ‘সৌদি আরব থেকে ৫৩ নারীর মরদেহ ফিরেছে, যা খুবই কম' নভেম্বরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এমন মন্তব্য করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
প্রবাসে মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের এমন বক্তব্য এবারই প্রথম নয়৷ ২০১৪ সালে গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ১৪ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের লাশ ফিরেছিল দেশে৷ এই তথ্য নিয়ে সেসময় আলোচনা হয় জাতীয় সংসদেও৷ সেই সময়কার প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদে তখন বলেছিলেন, মৃত্যুর হার জাতীয় গড়ের চেয়েও কম (সূত্র: ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রথম আলো)৷ সে কারণেই বিভিন্ন দেশের পাচারকারীরা কিংবা কর্মদাতারাও হয়তো জেনে গেছেন, বাংলাদেশের নাগরিকদের মেরে ফেললে সরকারের কিছু যায় আসে না৷
গত বছরের নভেম্বরের ছবিঘরটি দেখুন...
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
-
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷